জাতীয়

শহরজুড়ে নৌকার পোস্টার, মাঝে মধ্যে দেখা যায় অন্য প্রতীক

ঘনিয়ে আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে দিনক্ষণ গণনা। তফসিল অনুযায়ী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এর আগে প্রচার-প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন প্রতীক পাওয়া প্রার্থীরা। নিজের অবস্থান জানান দিতে রাজধানীজুড়ে ব্যানার-পোস্টার লাগিয়েছেন। তবে এবারের নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল না থাকায়, প্রচারণার মাঠে নৌকা ছাড়া অন্য কোনো দলের কার্যক্রম তেমন দেখা যায়নি।

Advertisement

এবারের নির্বাচনে সব মিলিয়ে ৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৭টি দল অংশ নিয়েছে। ৩০০ আসনে শেষপর্যন্ত প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮৯৬ জন। রাজধানী ঢাকার-৪ থেকে ১৮ পর্যন্ত মোট ১৫টি আসনে রাজনৈতিক দলের জন্য ৪৪টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য ২৫টি প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

মহানগরের এই ১৫ আসনের প্রার্থীরা আগে থেকে প্রচার-প্রচারণা শুরু করলেও, ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু করেন। ফলে এখন রাস্তাঘাট, অলিগলিতে ছেয়ে গেছে তাদের পোস্টার। এরমধ্যে মঙ্গলবার ঢাকা-৬ আসনের প্রার্থী সাঈদ খোকন বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে পুরান ঢাকাসহ তার নির্বাচনী এলাকায় লিফলেট বিতরণ ও শোভাযাত্রা করেন। ঢাকা মহানগরের এ আসনগুলোতে নৌকার সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার মতো বিরোধীদল না থাকলেও, নির্বাচনী আমেজে জোরেশোরে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীরা।

আরও পড়ুন: ভালো ভোট না হলে দেশের ভবিষ্যৎ ভালো হবে না: ইসি আনিছুর

Advertisement

বুধবার রাজধানীর ৬, ৭, ১১ ও ১২ সংসদীয় আসন ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার অলিগলিতে নৌকা প্রার্থীদের পোস্টার ও ব্যানার ঝুলছে। সড়কের বিশেষ পয়েন্টে দেখা যাচ্ছে বড় বড় ব্যানার। থানা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, ওয়ার্ড কাউন্সিলদের পক্ষ থেকে এসব পোস্টার লাগিয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

ঢাকা-৬ ও ৭ আসনে নৌকার প্রার্থী ইরফান সেলিম ও সাঈদ খোকনের পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরান ঢাকার অলিগলি এবং সড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট। এছাড়া নৌকা বানিয়ে গাড়িতে করে বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করতে গেছে সাঈদ খোকনের সমর্থকদের। অপরদিকে এ এলাকায় তৃণমূল প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম ও গণফ্রন্টের আমিনুল ইসলামের কিছু পোস্টার দেখা গেছে। দেখলে মনে হবে, নৌকার পোস্টারের ভিড়ে এগুলো যেন উঁকি মেরে আছে।

ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী আশিকুর রহমান লাভলু জাগো নিউজকে বলেন, এখনো যোগ্য প্রার্থী সাঈদ খোকন। তিনি ২০০১ সালে নির্বাচন করে সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে অল্প ব্যবধানে হেরেছেন। বিএনপি থাকলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতো। তবুও নির্বাচন জমজমাট হবে। কারণ এখানে কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন।

আরও পড়ুন: নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে প্রার্থীদের বার্তা দেওয়া হচ্ছে: সিইসি

Advertisement

একই চিত্র দেখা দেখে ঢাকা-১২ আসনে। এরমধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে মগবাজার। এই এলাকায় ছোটদলগুলোর পোস্টার খুব একটা চোখে পড়েনি। এ আসনে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী খোরশেদ আলম খুশু (লাঙ্গল), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী মো. আবদুল হাকিম (মোমবাতি) থাকলেও তাদের প্রচারণা এখনো দেখা যায়নি।

ঢাকা-১১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ওয়াকিল উদ্দীন। তার সংসদীয় আসন বাড্ডা, রামপুরা, হাজীপাড়া এলাকা নির্বাচনী পোস্টারে ছেয়ে গেছে। এ এলাকায় জাতীয় পার্টি মনোনীত শামিম আহমেদের কিছু পোস্টার দেখা গেছে।

ঢাকা-৩ আসনে নজরুল হামিদের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ইলেকশন কমিশনের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের প্রচারণা কার্যক্রম চলছে। আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের জনগণ নৌকার পক্ষে কাজ করছে। এ আসনে জাতীয় পার্টির মনির সরকারও নির্বাচন করছেন, তিনিও চালাচ্ছেন প্রচারণা। আশা করছি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।

তবে নির্বাচনে বিএনপি না থাকায় উত্তেজনা ও আমেজ কিছুটা কম রয়েছে। কারণ ছোট রাজনৈতিক দলগুলো থেকে যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের অনেককেই চিনেন না বলে জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা।

আরও পড়ুন: ‘সরকার ৭ জানুয়ারি নির্বাচন করতে পারবে বলে মনে করি না’

ঢাকা- ৬ ও ১১ সংসদীয় আসনের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, এবারও আওয়ামী লীগের সঙ্গে বড় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। স্বতন্ত্র দল, তৃণমূল ও জাকের পার্টির কয়েকজনের পোস্টার রয়েছে। কখনো তাদের নামও শুনেননি। এখান যেখানেই তাকাচ্ছি নৌকার পোস্টার। আগে নির্বাচনের সময় মাথা উঠালেই সব দলের পোস্টার দেখা যেত।

নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা প্রসঙ্গে কথা হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মেজবাহ-উল-আজম সওদাগরের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এবারের নির্বাচনে যারা প্রতিদ্বন্দ্বী বা ছোট রাজনৈতিক দল থেকে প্রার্থী হয়েছেন এটি মূলত সাজানো। ক্ষমতাসীনরা নিজেরাই ঠিক করে দিয়েছে- তুমি আমার প্রতিদ্বন্দ্বী, আসো নির্বাচন করি। এভাবেই এবার নির্বাচন হচ্ছে। এটাকে আমি আসলে নির্বাচন বলবো না। এটি ডিস্ট্রিবিউশন অব সিট।

তিনি বলেন, ছোট ছোট দল থেকে বিরোধী হিসেবে যারা নির্বাচনে দাঁড়িয়েছে। তারা আসলে দেশের লোকদের রিপ্রেজেন্ট করে কি না সেটা দেখার বিষয়। দেখা যাবে, এরা নির্বাচনে দাঁড়ালে একটি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান যে ভোট পান, সংসদীয় আসন থেকে সে ভোট পাবেন না।

আরএএস/জেডএইচ/জিকেএস