এ কে এম শামীম ওসমান। ব্যক্তিগত জীবনে খুবই স্পষ্টবাদী ও সাহসী এই ব্যক্তির যেমন সমালোচনা আছে, তেমন প্রশংসাও। বাবা এ কে এম শামসুজ্জোহা ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম সংসদ সদস্য। দাদা এম ওসমান আলী ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। পৈতৃক সূত্রে আওয়ামী রাজনীতিতে যুক্ত শামীম ওসমান। ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের তিনবারের এমপি তিনি।
Advertisement
প্রতীক বরাদ্দের পর জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় নিজের কর্মকাণ্ড ও আগামী দিনের স্বপ্নের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি মনে করেন, রাজনীতি অনেকটা রাজনীতিবিদদের হাতে নেই। সেটা উদ্ধার করবেন। দুবাই-সিঙ্গাপুরের মতো নিরাপদ নারায়ণগঞ্জ গড়ে তুলবেন। রাজনীতির বাইরেও সমাজের ভালো তরুণ-তরুণীদের নিয়ে সামাজিক আন্দোলনও গড়ে তুলতে চান। যাতে মাদক, সন্ত্রাস নির্মূল সহজ হয়।
দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে শেষটি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগোনিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সালাহ উদ্দিন জসিম।
জাগো নিউজ: আপনার নির্বাচনী হলফনামায় সম্পদ কমেছে, ঋণ বেড়েছে। বন্ধুর কাছে আপনি ঋণী দীর্ঘদিন। এটি কি ঠিক?
Advertisement
শামীম ওসমান: হ্যাঁ। এটি সত্য। শুধু তাই নয়, এবার নির্বাচন করতে গিয়ে আমি আমার বাড়িটিও বন্ধক রেখেছি। এটি আমার বাবার সঙ্গে মিলে যায়। তিনিও বাড়ি বন্ধক রেখে নির্বাচন করেছেন। আমার বাবা যখন এমপি ছিলেন, তখন রং-সূতার মার্কেট সবচেয়ে বেশি ছিল। তখন ইন্ডাস্ট্রিগুলো বাবার স্বাক্ষরে চলতো। তখন যারা আমার বাবার স্বাক্ষর পেয়েছে, তারা এখন হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। ’৭৪ সালের শেষ দিকে আমরা যে বাড়িতে থাকতাম, হীরা মহল বন্ধক রেখে মাত্র ৪০ হাজার টাকা নিয়েছেন। প্রথমে মোশতাক বললেন, তার মন্ত্রিসভায় যেতে, গেলেন না, জেলে গেলেন। পরে জিয়াউর রহমান সাহেব বললেন, হলেন না। তখনও আবার জেলে নিলো। আমাদের বাড়ি নিলামে উঠিয়ে নিলো। তখন অনেক ধনী আত্মীয় ছিল, দলের ভেতরে বাইরে অনেক ধনী মানুষ ছিল, কেউ এগিয়ে আসল না। আদমজিসহ নারায়ণগঞ্জের মিলশ্রমিকরা ১ টাকা করে চাঁদা দিয়ে নিলাম থেকে ছুটিয়ে দিয়ে ছিল। বাবা ’৭৪ সালে বাড়ি বন্ধক রেখেছিলেন, আমাদের জন্য এক টাকাও রেখে যাননি। আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের মানুষ করে গেছেন। আমাদের বাবা-মা’র মতো আমরা হতে পারিনি। কেউ হতে পারবোও না। কিন্তু চেষ্টা করেছি, রাজনীতিকে ইবাদত হিসেবে নিতে। ওইটা করিনি। চেষ্টা করেছি, ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করিয়েছি। আমার মেয়ে বিশ্বের চারটে বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা থেকে প্রথম শ্রেণি পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।
আরও পড়ুন>> মানুষ আমাকে ভয় পায় না, ভালোবাসে
জাগো নিউজ: আপনার আসনে ৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বড় রাজনৈতিক দল আসছে না, সেখানে নির্বাচনকে আপনি কতটা অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে মনে করছেন?
শামীম ওসমান: নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলো। ধরেন, এখানে বিএনপিও দাঁড়ালো। আরও অনেকে দাঁড়ালো। কিন্তু মানুষ ভোট দিতে এলো না। তাতে লাভ হলো না। আমাদের চ্যালেঞ্জ হলো- মানুষকে ভোটে নিয়ে আসা, উদ্বুদ্ধ করা। মানুষকে বলা যে, যদি আপনি ভোট দিতে না যান, তাহলে আপনার কোনো অধিকার নেই। চায়ের টেবিলে বসে গল্প করবেন- এদেশে আর থাকা যায় না, এদেশটা কী হয়ে যাচ্ছে? এভাবে আর চলে না। অতএব, আপনাকে ভোট দিতে আসতে হবে।
Advertisement
হ্যাঁ, বাঙালি খুব সহজ সরল, আবেগি জাতি। তবে আমাদের নিয়ে খেলা উচিত হবে না। আমাদের সঙ্গে খেলে কেউ থামিয়ে রাখতে পারবে না, সে যত বড় শক্তিধরই হোক।
জাগো নিউজ: আপনার আসনের ভোটাররা বলছেন, ভোট দিতে যাবেন। কিন্তু ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ থাকতে হবে। সে পরিবেশ কী থাকবে?
শামীম ওসমান: আমি তাদের সঙ্গে শতভাগ একমত। আমি নিজেও তাই মনে করি। নির্বাচনে শতভাগ সুষ্ঠু পরিবেশ থাকা উচিত। নির্বাচন কমিশন ও আপনাদের (মিডিয়া) কাছে আমার দাবি, যদি আমার এলাকায় বিন্দু পরিমাণ অসুষ্ঠু হয়, কোথাও যদি ভোট বাধাগ্রস্ত হয়, আপনারা আপনাদের মতো কাজ করবেন এবং নির্বাচন কমিশন যাতে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।
জাগো নিউজ: আপনার এলাকায় জলাবদ্ধতা, ট্রান্সপোর্ট, বিভিন্ন সেক্টরে চাঁদাবাজি, মাদকসহ নানা সমস্যা আছে। এগুলো সমাধানে আপনার উদ্যোগ কী?
শামীম ওসমান: আমার এলাকায় ৭ লাখ ভোটার। অথচ আমার এক ফতুল্লা এলাকায় থাকে ৩০ লাখ লোক। অধিকাংশই বাইরের। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিল্প এলাকা। এখানে নানা ধরনের লোক আসে। এমপি হিসেবে আমার পক্ষে তো সম্ভব না সবটা নিয়ন্ত্রণ করা। তবে, এবার আমি একটা কাজ করছি- নির্বাচনী কমিটিগুলোকে পঞ্চায়েত কমিটি হিসেবে রূপায়ণ করবো। আমার এলাকায় ৪৫ ওয়ার্ড, আশপাশে ৮০টি ওয়ার্ড আছে। সব তো আমারই দেখতে হয়। একেক ওয়ার্ডে আমি অন্তত এক হাজার করে লোক নেবো। সেখানে প্রত্যাশা নামে একটা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সংগঠন করবো। ভালো কিছু তরুণ-তরুণী নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলবো।
আমরা অনেক উন্নয়ন করছি, এটা ভোগ করবে কারা? যারা ভোগ করবে, তারা মাদকে বুঁদ হয়ে যাচ্ছে। আমরা এই মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলবো। মানুষকে সচেতন করে এদের (ড্রাগ ডিলার) আটকে দেবো। অনেকে বলে, ইবলিশ শয়তানকে দেখা যায় না। আমি বলি এরাই (ড্রাগ ডিলার) হচ্ছে ইবলিশ শয়তান। আরেকটা জিনিস, জলাবদ্ধতা কেটে যাচ্ছে। ১৩শ কোটি টাকা নিয়ে এসেছি। জুন মাসের মধ্যে এ সমস্যা থাকবে না।
জাগো নিউজ: পরিবেশ দেখে কী মনে হয়, নির্বাচন জমে উঠেছে?
শামীম ওসমান: নির্বাচন জমে উঠেছে। আরও জমবে। আমাদের এলাকা উৎসবের নগরীতে পরিণত হবে। ইনশাআল্লাহ।
জাগো নিউজ: এখন বড় চ্যালেঞ্জ ভোটার কেন্দ্রে নিয়ে আসা। এ নিয়ে আপনার টার্গেট কী?
শামীম ওসমান: আমি পরীক্ষামূলক একটা প্রোগ্রাম করেছি, যে কেমন সাড়া পাওয়া যায় দেখার জন্য। সেখানে আমি দেখেছি, কোথাও ৫/৭ হাজার এসেছে, কোথায় ২ হাজার বা ৫০০/২০০ লোকও এসেছে। আমি দেখলাম, অ্যাভারেজে কেন্দ্রপ্রতি আমার ৭/৮শর বেশি সাড়া আছে। তাতে মনে হয়েছে, আমার ভোটার আমি ৫০ শতাংশের ওপরে উপস্থিত করাতে পারবো। বাকি দলগুলো তো আছেই।
জাগো নিউজ: দেশের বিভিন্ন আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী আছে। এটি বুমেরাং বা আত্মঘাতী হবে কি?
শামীম ওসমান: আমি ওভাবে বিশ্লেষণ করে দেখিনি। কারণ পুরো বাংলাদেশের তালিকাটা আমার কাছে নেই এখন। একটা বিষয়ে সচেতন থাকা উচিত। এ নিয়ে আমার যথেষ্ট শঙ্কা আছে। ধরেন, আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের পক্ষে একটা মিছিল বের হলো। একই সময়ে আবার আওয়ামী লীগ নেতা যিনি স্বতন্ত্র দাঁড়িয়েছেন, তিনিও মিছিল নিয়ে বের হলেন। দুজনের একজনও জানলেন না। এই মিছিল থেকে একটা ঢিল মারলো, ওই মিছিল থেকে আরেকটা ঢিল মারলো। এভাবে লাগলো মারামারি। থার্ড পার্টি সুযোগ নিলো- বিএনপি-জামায়াত-জঙ্গিবাদ, দুটো বোমা বিস্ফোরণ করে দিলো। ১০ জন মানুষ মারা গেলো। সেখানে বলার সুযোগ পাবে- নির্বাচনের পরিবেশ নেই। আমরা কাউকে দায়ী করতে পারবো না। পাশাপাশি আমাদের সংগঠন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি, গণতন্ত্রকে মুক্ত করেছি। পরের প্রজন্ম এসে তাদের কাজটা করবে। এজন্য আমি হয়তো আর নির্বাচন করবো না। নতুনদের গড়ে তুলতে হবে তো। এরপরে হবে অর্থনৈতিক লড়াই, আমি সেটার জন্য ফিট নই।
আরও পড়ুন>> সামনে সরকার কোনো বিপদ দেখছে না
আমার মনে হয়, দলের সিনিয়র যারা আছেন তারা যেন এ ব্যাপারে শক্ত থাকেন, প্রশাসনও যদি নির্দেশনা দেন- একই সময়ে এক জায়গায় কোনো প্রার্থী প্রোগ্রাম করতে পারবে না। আলাদা আলাদা সময়ে ও স্থানে করবে। কারণ, একটা জায়গায় আমার একটা খটকা লেগেছে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী একটা কথা বলেছেন, ‘সরকার জঙ্গি হামলার নাটক সাজাচ্ছে।’এ কথাটা আমার কাছে প্রশ্নবোধক লেগেছে। কারণ আমি ভিকটিম। পরের দিনই দেখলাম রেললাইন কেটেছে। আমার মাথায় রাখতে হবে- যারা দেশকে ধ্বংস করে দিতে চায়, যারা চায় দেশে স্যাংশন্স আসুক, গার্মেন্টস ধ্বংস হয়ে যাক, তারা কী চায় এটা দেখতে হবে!
জাগো নিউজ: তাহলে স্বতন্ত্র কী আওয়ামী লীগের জন্য হুমকিস্বরূপ?
শামীম ওসমান: আমার কাছে মনে হয়, ওইভাবে হুমকি হতে পারবে না নৌকার সামনে। কিন্তু আমি যেটা বলছিলাম, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে আন্তর্জাতিক চক্র বা এটা ওটা যাই বলি। কিন্তু দরজা কিন্তু খুলে দিয়েছে খন্দকার মোশতাক। আমাদের মধ্যে যেমন জাতির পিতার রক্ত আছে, আমাদের মধ্যে তেমন খন্দকার মোশতাকের প্রেতাত্মা থাকতেও পারে। থাকার শঙ্কা বেশি। তখন ছিল আদর্শভিত্তিক রাজনীতি। অথচ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তার লাশ পড়ে থাকা অবস্থায় গিয়ে মন্ত্রিসভার শপথ নিয়েছেন। সংসদেও গেছেন। এত আদর্শবাদী দল হওয়া সত্ত্বেও এখন কিন্তু তা না। এখন অনেকেই এটাকে (রাজনীতি) ব্যবসা হিসেবে নেয়।
জাগো নিউজ: রাজনীতিবিদদের হাতে এখনো রাজনীতি আছে আদৌ?
শামীম ওসমান: রাজনীতিবিদদের হাতে সব রাজনীতি এখন আর নেই। তবে যতদিন জাতির পিতার কন্যা আছে, ততদিন থাকবে। এবার আমরা আনবো। আপনি নমিনেশনের সেটআপ দেখলেই বুঝতে পারবেন। জাতির পিতার কন্যা কিন্তু ওভাবেই নমিনেশনের সেটআপ দিয়েছেন, যাতে রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকে।
জাগো নিউজ: স্বাধীনতার ৫২ বছর হয়ে গেলো- কেন আমরা নির্বাচনী পদ্ধতিটা শক্তিশালী করতে পারলাম না? কেন এখনো বিদেশি শক্তি আমাদের নির্বাচন নিয়ে কথা বলে?
শামীম ওসমান: কারণ, আমরা ২০০ বছর গোলামি করেছি। গোলামি করার পরে এখানে যেমন স্বাধীনচেতা মানুষ তৈরি হয়েছে তেমন জাতির পিতা শেখ মুজিব তৈরি হয়েছে। তেমনি খন্দকার মোশতাকের মতো লোকও তৈরি হয়েছে। হ্যাঁ, সমস্যা হলো- জাতির পিতার মতো একজন নেতা হাজার বছরে একজন আসে, তাও ওই দেশ যদি সৌভাগ্যবান হয়। আর খন্দকার মোশতাকের মতো লোকও শত বছরে একজন আসতো, বা ২০০ বছরে আসতো, এখন তো বছরে বছরে আসছে। আগে ছিল কেন্দ্রে। এখন জেলায় জেলায় আছে। যার কারণেই এ ব্যবস্থা স্ট্যাবল করা যায়নি। এখন দিন দিন হবে। যত ডিজিটালাইজ হবে, একটা পর্যায়ে এসে হয়ে যাবে। সব তো একসঙ্গে পারবেন না।
আরও পড়ুন>> রাজনীতিতে হেভিওয়েটদের ডায়েটে যাওয়া উচিত
জাগো নিউজ: নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে বিদেশি শক্তি বারবার স্যাংশন্সের কথা বলছে। এটা নিয়ে আপনার বক্তব্য কী?
শামীম ওসমান: এটার জবাবের জন্য আমি সঠিক ব্যক্তি নই। বাংলাদেশের কূটনৈতিক বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে উত্তর দেবে। তবে, আমি একটা জিনিস বুঝি- আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। একজন মুক্তিযোদ্ধার ভাই। আমার মা-বাবা ভাষাসৈনিক, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত। সেই পরিবারের সন্তান হিসেবে একটা বিষয় বলি- বাংলাদেশকে কেউ এসে স্বাধীন করে দিয়ে যায়নি। হ্যাঁ, ভারত আমার বন্ধুপ্রতীম দেশ; পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যেটি প্রতিবেশী দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে। তাদের অনেক সৈন্য মারা গেছে। আমাদেরও কিন্তু ৩০ লাখ লোক মারা গেছে। তখনও বিদেশিরা আমাদের বিরুদ্ধে ছিল। কিন্তু আমরা লড়াই করেছি, জিতেছি। পাকিস্তানি বাহিনীকে নাকে খত দিয়েছি। হ্যাঁ, বাঙালি খুব সহজ সরল, আবেগি জাতি। তবে আমাদের নিয়ে খেলা উচিত হবে না। আমাদের সঙ্গে খেলে কেউ থামিয়ে রাখতে পারবে না, সে যত বড় শক্তিধরই হোক।
আর জাতির পিতার কন্যা ও জাতির পিতার মধ্যে একটা পার্থক্য আছে। বঙ্গবন্ধু সবাইকে বিশ্বাস করেছিলেন। যার খেসারত উনি নিজে এবং আমাদেরও দিতে হয়েছে। আমাদের শৈশব, কৈশোর নষ্ট হয়ে গেছে। আর জাতির পিতার কন্যা বিশ্বাসঘাতকদের ভালো করে চিনিয়েছেন। উনি হিমালয়ের পর্বতের চেয়েও শক্ত। ওদেরও বোঝা উচিত, যারা এ কাজটা করতে চায়। ২১ বার চেষ্টা করেও যাকে মারা যায় না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন দেশের জন্য কিছু করার প্রয়োজনে।
জাগো নিউজ: আপনি কি রাজনীতি থেকে অবসর নিচ্ছেন, বা এটি কি আপনার শেষ নির্বাচন?
শামীম ওসমান: নির্বাচন করতে হলে রাজনীতি করতে হবে, সেটি আমি মনে করি না। আমি মনে করি, সামনের দিনগুলোতে আমার চেয়ে বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন লোক আসা উচিত। যে অর্থনীতি বোঝে, কূটনীতি বোঝে, কথা বলতে পারবে, বিশ্বকে যে মোকাবিলা করতে পারবে। আমাদের বাবা ও ভাই দেশটাকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি, গণতন্ত্রকে মুক্ত করেছি। পরের প্রজন্ম এসে তাদের কাজটা করবে। এজন্য আমি হয়তো আর নির্বাচন করবো না। নতুনদের গড়ে তুলতে হবে তো। এরপরে হবে অর্থনৈতিক লড়াই, আমি সেটার জন্য ফিট নই।
জাগো নিউজ: ছেলেকে রাজনীতিতে আনতে চান?
শামীম ওসমান: এখন চাই না। আমি চাই, সে অর্থনৈতিকভাবে পরিপূর্ণ গড়ে উঠুক। যাতে তাকে রাজনীতি করে পয়সা কামাতে না হয়। কোনো প্রত্যাশা ছাড়াই মানুষকে সাহায্য করতে পারে। শুধু আল্লাহকে খুশি করতে সাহায্য করবে। আমি একটা জিনিস বিশ্বাস করি, আজকের দিনটিই সম্ভবত আমার শেষ দিন। আমি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে মরতে চাই। এটাই আমার রাজনীতি। এটিই বাবা-মা-বড় ভাই ও মাতৃতুল্য শেখ হাসিনা আমাকে শিখিয়েছেন।
জাগো নিউজ: আপনার আসনে কী কী কাজ করেছেন, সামনের নির্বাচনে ভোটারদের কাছে আপনার প্রতিশ্রুতি কী?
শামীম ওসমান: বড় কাজ সব করে ফেলেছি। বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে, মেডিকেল কলেজ হচ্ছে, শেখ কামাল আইটি ইনস্টিটিউট হচ্ছে, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট হচ্ছে, ২৬শ কোটি টাকা ব্যয়ে নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ ফ্লাইওভার হচ্ছে, নারায়ণগঞ্জ সাইনবোর্ড রাস্তা প্রশস্ত হচ্ছে, আরেকটা রাস্তা হচ্ছে আদমজী পর্যন্ত। এরকম বড় কাজগুলো ৯০ শতাংশ শেষ। আমার প্রতিশ্রুতি হচ্ছে- এমন একটা পরিবেশ তৈরি করা মানুষ যাতে রাতে দরজা খুলে ঘুমাতে পারে। একটা নারী যাতে নির্বিঘ্নে রাতে ঘুরে বেড়াতে পারে। যেটা দুবাই সিঙ্গাপুরে পারে, আমেরিকা-লন্ডনেও পারে না। এমন একটা নারায়ণগঞ্জ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখি। মানুষ যদি সহযোগিতা করে আমি এটা করে দেখাবো ইনশাআল্লাহ।
জাগো নিউজ: জয়ের ব্যাপারে কতখানি আশাবাদী?
শামীম ওসমান: যা কিছু ঘটবে আল্লাহর হুকুমে ঘটবে। যদি আল্লাহর হুকুম থাকে আমার ওপর, তাহলে আমি নির্বাচন পর্যন্ত বাঁচবো এবং জয়ী হবো, আমার দলও জয়ী হবে। একটি জিনিস আমি বলতে চাই- ভোটারদের অনেকে পছন্দ করে এমপি সাহেব যাবে, ভোট চাইবে। বলবে, মা-খালা আমাকে আল্লাহর ওয়াস্তে একটা ভোট দিয়েন। রাস্তার ওপর নাটক করে, হকারদের জড়িয়ে ধরে ছবি তুলে, গরিবদের সঙ্গে ছবি তুলে। ভোটের পর কাউকে চেনে না। এটা আমি পছন্দ করি না।
আমি মনে করি, আপনার বাসার সামনে খালি জায়গা থাকলে সেটিতে আগাছা জন্মাবে। জঙ্গল হলে সাপ-বিচ্ছুর সৃষ্টি হবে। আপনার বাচ্চা গেলে দংশন করবে। আর যদি সেটাকে নার্সিং করেন তাহলে সেখানে বাগান হবে। আপনার ও সন্তানের বসার জায়গা হবে। ঠিক সেভাবে- রাজনীতিতে আমি যদি জঙ্গল হই কেটে ফেলা উচিত। আপনি ভোটের মাধ্যমে কেটে দিন। আর যদি মনে করেন, আমি আপনার বাগান বা ফল গাছ। তাহলে আমাকে নার্সিং করবেন। ভোটের মাধ্যমে পানি ঢালবেন এবং সেটার ফল ভোগ করবেন।
এসইউজে/এএসএ/এমএস