জাতীয়

জৌলুস ফিরছে পর্যটনের স্বর্গ বান্দরবানে

দুর্গম পাহাড়ের পথে পথে নেই শক্তিশালী বোমা ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি)। নেই কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ও জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র কোনো কার্যক্রম। মাসের পর মাস কেএনএফ’র ভয়ে এলাকা ছাড়া বম পরিবারগুলো ফিরতে শুরু করেছে জন্মভিটায়। যদিও তাদের বাড়ি-ঘর নেই আগের মতো, সাজানো-গুছানো ঘরগুলো হয়ে আছে ময়লার স্তূপ। ঘরে থাকা ধান-চালসহ বিভিন্ন খাদ্যশস্যও নষ্ট হয়ে গেছে। জুমের জমি রয়ে গেছে অনাবাদি।

Advertisement

দুর্গম পাহাড়ে বম সম্প্রদায়ের পাড়াগুলো খুব সহজেই চেনা যায়। বমরা ঘর-বাড়ি বানায় পাহাড়ের কিছুটা উঁচু স্থানে। বন-জঙ্গলের মধ্যেও বমদের প্রতিটি বাড়ির পরিচ্ছন্ন উঠানজুড়ে থাকে সারি সারি ফুলের গাছ আর থোকা থোকা ফুল। বাস্তুচ্যুত সেই বমদের বাড়িঘর এখন ফুলের গাছের বদলে ভরে গেছে আগাছায়। যত্নের অভাবে ভেঙে পড়া বাঁশ-কাঠের ঘরে বসত গড়েছে সাপ-ব্যাঙ।

 

পাড়ার লোকজন ভয়ে বিভিন্ন জায়গায় নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। এতে পরিবারের সঙ্গে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও চলে যায়। ফলে বেশ কয়েক মাস স্কুল বন্ধ ছিল। সম্প্রতি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে নিয়মিত আসা শুরু করেছে। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হবে।—রোয়াতলিয়ান বম

 

তবে সব প্রতিকূলতা পেছনে ফেলে আবারও নতুন করে স্বপ্ন দেখছে বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বম পরিবারগুলো। এরই মধ্যে প্রায় ৭০টির বেশি বাড়িছাড়া বম পরিবার বাড়িতে ফিরেছে। আরও কিছু পরিবার ফিরবে শিগগির। মাসের পর মাস বন্ধ থাকা স্কুলগুলোও খুলতে শুরু করেছে। আবারও স্কুলে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরছে শিশুদের কোলাহলে।

Advertisement

বান্দরবান সদর, রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি- এ চার উপজেলায় রয়েছে বম জনগোষ্ঠী। সবচেয়ে বেশি বম রুমা উপজেলায়। ২০২২ সালের জনশুমারি ও গৃহগণনা পরিসংখ্যান বলছে, বমদের মোট জনসংখ্যা ১১ হাজার ৬৩৭ জন। তবে সামাজিক সংগঠন বম সোশ্যাল কাউন্সিলের হিসাবে বাংলাদেশে প্রায় ১৫ হাজার বম রয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার মধ্যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সবচেয়ে এগিয়ে বান্দরবান। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আড়ালে এ অঞ্চলে আনাগোনা বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর। এ কারণে পার্বত্য তিন জেলার মধ্যে অস্থিরতায়ও এগিয়ে এ জেলা।

সেনাবাহিনীর সহায়তায় ফিরছে বম পরিবারগুলো

কেএনএফের আতঙ্কে বাড়িছাড়া বমদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় সম্প্রতি। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর কেউ নিজের নাম ও পাড়ার নাম বলতে রাজি হননি। তবে যে দুর্দশার মধ্যে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন, সে পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন তারা।

Advertisement

পুনর্বাসিত পরিবারগুলো-ছবি জাগো নিউজ

রোয়াংছড়ি উপজেলা সদর ইউনিয়নে দুর্গম পাইক্ষ্যং পাড়ার গ্রামপ্রধান পিতর বম জানান, কেএনএফের দ্বন্দ্বের কারণে চলতি বছরের এপ্রিলে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায় বেশ কিছু পরিবার। প্রাণ বাঁচাতে তারা দীর্ঘ আটমাস আত্মীয়স্বজনের বাড়ি এবং বনে-জঙ্গলে বসবাস করছিল। ১৯ নভেম্বর সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ৫৭ পরিবারের প্রায় ২০০ সদস্য ফিরে এসেছে।

আরও পড়ুন>> ৮ মাস পর বাড়ি ফিরেছে পাইক্ষ্যং পাড়ায় ৫৭ বম পরিবার 

অন্যদিকে, থানচি-রুমা সীমান্তের প্রাতা পাড়া এলাকা থেকে ২৮টি পরিবার বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে যায়। সেখানেও সেনা সহায়তায় সম্প্রতি নিজ বসতভিটায় ফিরেছেন ১১টি বম পরিবারের ৪৯ জন সদস্য। এছাড়া রোয়াংছড়ি উপজেলার ক্যপ্লাং পাড়ার ১৪, পাইক্ষ্যং পাড়ার ৮, দুর্নিবার পাড়ার ৭ ও খামতাম পাড়ার ৮ পরিবার এবং থানচি উপজেলার প্রাতা পাড়ার ১৪ পরিবার ও রুমা উপজেলার রাকলাই পাড়ার ১১ পরিবার ফিরে এসেছে।

বম সোশ্যাল কাউন্সিলের তথ্যানুযায়ী, এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক পরিবার নিজ গ্রামে ফিরে এসেছে। এসব পরিবারকে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তাসহ খাদ্য, বস্ত্র সহায়তা ও শিশুদের শিক্ষার সুযোগসহ সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

 

প্রায় ২০০ পরিবার নিজ গ্রামে ফিরে এসেছে। অনেক পরিবার রয়েছে যারা ফেরেনি। তবে তারাও তাদের নিজ বাড়িতে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ক্রিসমাস ডের আগেই অনেক পরিবার ফিরবে। এরই মধ্যে যারা ফিরেছে তাদের জেলা পরিষদ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সহায়তা করা হচ্ছে।—জারলমজার বম

 

এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে থাকা পাড়াবাসীকে ফিরিয়ে আনতে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বম সোশ্যাল কাউন্সিল।

রোয়াংছড়ি উপজেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে পাইক্ষ্যং পাড়ায় সেনাবাহিনীর বান্দরবান সদর জোনের উদ্যোগে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও শুষ্ক খাবার বিতরণের পাশাপাশি ফিরে আসা পরিবারের শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ দেওয়া হয়। ভয়ভীতি না পেয়ে আগের মতো বসবাস করার জন্য পাড়াবাসীকে আহ্বান জানানো হয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে।

আরও পড়ুন>> বান্দরবানে সংকটে থাকা ১০৮ পরিবার পেলো খাদ্য সহায়তা 

পাইক্ষ্যং পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, সাত মাস অন্যত্র পালিয়ে থাকার পর নিজ পাড়ায় ফিরতে পেরে সবার মুখে হাসি ফুটেছে। শিশুদের দুরন্তপনায় আবারও সরব হয়ে উঠেছে পাড়া, খুলেছে সরকারি স্কুল।

তবে যারা ফিরতে পারেননি, তাদের ঘর, উঠান ঘাস আর লতাগুল্মে ঢেকে গেছে। কোনো কোনো কাঠের ঘরের বারান্দায় এখনো এলোমেলো পড়ে আছে ঘরের জিনিসপত্র। পাড়ার প্রবেশমুখে চলাচলের রাস্তাও বুনো লতাপতায় ভরে গেছে।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও চলে যাওয়ায় সাত-আট মাস ধরে স্কুল বন্ধ ছিল। সম্প্রতি শিক্ষার্থীরা ক্লাসে নিয়মিত যাওয়া শুরু করেছে। কয়েকদিনের মধ্যে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হবে বলে আশা করছেন ক্যপ্লাং পাড়া মানিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যলয়ের শিক্ষকরা।

ক্যপ্লাং পাড়া মানিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রোয়াত লিয়ান বম জানান, কিছুদিন হলো শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে শুরু করেছে। ক্লাস নিয়মিত হচ্ছে। আশা করছি দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অন্য শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসতে শুরু করবে।

আরও পড়ুন>> বান্দরবান কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন নেপালি নাগরিক 

পাইক্ষ্যং পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রোয়াতলিয়ান বম বলেন, পাড়ার লোকজন ভয়ে সবাই বিভিন্ন জায়গায় নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। এতে পরিবারের সঙ্গে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও চলে যায়। ফলে বেশ কয়েক মাস স্কুল বন্ধ ছিল। সম্প্রতি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে নিয়মিত আসা শুরু করেছে। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হবে।

জানা যায়, গত বছরের অক্টোবর থেকে কেএনএফ’র ভয়াল থাবায় অশান্ত হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশের পর্যটনের স্বর্গখ্যাত বান্দরবান। জৌলুস হারিয়েছিল বেশকিছু পাহাড়। এলাকাছাড়া হয়েছিল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বহু মানুষ। নিজেদের মুক্তিকামী দাবি করা এ সংগঠন শুধু নিজেদের আন্দোলন নিয়ে থেমে ছিল না। নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সদস্যদের অস্ত্র প্রশিক্ষণও দিয়ে আসছিল কেএনএফ।

 

যারা ফিরে আসছে তাদের প্রত্যেক পরিবারের জন্য চাল, ডাল, খাবারসহ তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় জিনিসের তালিকা করা হচ্ছে। নগদ অর্থও দেওয়া হবে। তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস তালিকা করার মাধ্যমে জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে দেওয়া হচ্ছে। আর নগদ অর্থ যেটা দেওয়া হবে সেখান থেকে তারা ঘর মেরামত করবে। এখন যেহেতু শীতকাল কম্বলও বিতরণ করা হয়েছে।—কাঞ্চন জয় তঞ্চঙ্গ্যাঁ

 

গোয়েন্দারা এ তথ্য প্রকাশ্যে আনলে শুরু হয় অভিযান। এসময় প্রাণ দিয়েছেন বেশ কয়েকজন সেনাসদস্য। টানা অভিযানে ধরা পড়েছে বেশ কয়েকজন জঙ্গি ও কেএনএফ সদস্য। উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমাণ গোলা-বারুদ। একের পর এক দুর্গম পাহাড় সন্ত্রাসমুক্ত করেছে নিরাপত্তা বাহিনী।

আরও পড়ুন>> ছুটিতে প্রাণ ফিরেছে বান্দরবানে 

স্থানীয় অধিবাসী ও পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে গত বছরের ১৭ অক্টোবর পর্যটকদের রুমা ও রোয়াংছড়ি ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এর ছয়দিনের মাথায় নিষিদ্ধ করা হয় থানচি ও আলীকদম ভ্রমণ। ৮ নভেম্বর আলীকদমের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও অন্য তিন উপজেলায় নিষেধাজ্ঞা উঠেছে চলতি বছর। কয়েক মাস পর্যটননির্ভর এসব অঞ্চলের মানুষ দিনাতিপাত করেছেন চরম কষ্টে।

স্থানীয়রা বলছেন, কেএনএফ শুধু জঙ্গি প্রশিক্ষণ, সাধারণ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের অত্যাচার করেনি, তারা সরকারের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম প্রতিহত করার জন্য সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের অপহরণের পর মুক্তিপণও দাবি করেছে। পাহাড়ি অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে নির্মাণাধীন বান্দরবানের থানচি সড়ক সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে।

সরকারের এ উন্নয়নমূলক কার্যক্রম প্রতিহত করতে সড়ক নির্মাণ কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত অসামরিক ঠিকাদার, মালামাল সরবরাহকারী এবং শ্রমিকদের কাছ থেকে প্রথমে চাঁদা দাবি ও পরে কাজ বন্ধ করার হুমকি দেয় কেএনএফ। এমনকি শ্রমিক অপহরণ করে মুক্তিপণও আদায় করে পাহাড়ি উগ্রবাদী এ গোষ্ঠী।

সেনাবাহিনীর মানবিক সহায়তা-ছবি জাগো নিউজ

কেএনএফের সৃষ্টি যেভাবে

পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূখণ্ড নিয়ে ‘কুকি-চিন রাজ্য’ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল কেএনএফ। এর সশস্ত্র শাখা কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) দাবি করছিল, পাহাড়ের নয়টি উপজেলা তাদের পূর্বপুরুষদের আদিম নিবাস। ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে দখলদাররা অনুপ্রবেশ করে এবং এই ভূমি দখল করে নেয়। জেএসএসসহ অন্য সংগঠনগুলো তাদের ভূমি ব্যবহার করে চাঁদাবাজি, অপহরণ, গুমসহ নিরীহ মানুষদের ভীতির মধ্যে রেখেছে। তাই তাদের হাত থেকে মুক্তি পেতে এ সংগঠনের সৃষ্টি।

কেএনএফ এরই মধ্যে নিজস্ব পতাকাও বানায়। তৈরি করে মনগড়া মানচিত্র। আলাদা রাজ্য বা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী-পুরুষের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে প্রশিক্ষিত নিজস্ব বাহিনী, যাদের দেওয়া হয় সশস্ত্র প্রশিক্ষণ। তাদের ছিল আলাদা ইউনিফর্ম, র‌্যাংকভিত্তিক আলাদা আলাদা ব্যাজ। ইউনিফর্মধারীদের হাতে ছিল তাদের নিজস্ব পতাকা।

তারা তাদের ‘সামর্থ্য’ দেখিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) ওপর হামলা চালিয়েছিল। বলা হচ্ছে, জেএসএসের প্রতিপক্ষ একটি দল কেএনএফ। হামলা চালিয়ে এক জেএসএসের নেতাকেও হত্যা করে কেএনএফ।

 

যারা ফিরে আসছে তাদের প্রাথমিকভাবে আমাদের সেনাবাহিনীর রেশন দেওয়া হচ্ছে। যাতে প্রথমে এসেই তারা খেতে পারেন। কারণ বাড়ি-ঘর নষ্ট হয়ে গেছে, দীর্ঘদিন না থাকায় জুম চাষও করতে পারেননি।—ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম মহিউদ্দিন

 

সংগঠনটির প্রধান হিসেবে নাথান বমের নাম আসে। পুরো নাম নাথান লনচেও বম। বান্দরবানের রুমা উপজেলার এডেন পাড়ায় তার বাড়ি। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগে। ছাত্রজীবনে জনসংহতি সমিতি সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদে যুক্ত ছিলেন তিনি।

যারা ফিরেছেন তাদের বিষয়ে যা জানা গেলো

সামাজিক সংগঠন বম সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি জারলমজার বম জাগো নিউজকে বলেন, প্রায় ২০০ পরিবার নিজ গ্রামে ফিরে এসেছে। অনেক পরিবার রয়েছে যারা ফেরেনি। তবে তারাও তাদের নিজ বাড়িতে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ক্রিসমাস ডের আগেই অনেক পরিবার ফিরবে। এরই মধ্যে যারা ফিরেছে তাদের জেলা পরিষদ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সহায়তা করা হচ্ছে।

যারা বাড়িঘরে ফিরে এসেছে তাদের ব্যাপারে জানতে চাইলে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি’র মুখপাত্র ও বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য কাঞ্চন জয় তঞ্চঙ্গ্যাঁ জাগো নিউজকে বলেন, যারা ফিরে আসছে তাদের প্রত্যেক পরিবারের জন্য চাল, ডাল, খাবারসহ তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় জিনিসের তালিকা করা হচ্ছে। নগদ অর্থও দেওয়া হবে। তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস তালিকা করার মাধ্যমে জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে দেওয়া হচ্ছে। আর নগদ অর্থ যেটা দেওয়া হবে সেখান থেকে তারা ঘর মেরামত করবে। এখন যেহেতু শীতকাল কম্বলও বিতরণ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে সেনাবাহিনীর বান্দরবান রিজিয়ন ও ৬৯ পদাতিক ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম মহিউদ্দিন আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, যারা ফিরে আসছে তাদের প্রাথমিকভাবে আমাদের সেনাবাহিনীর রেশন দেওয়া হচ্ছে। যাতে প্রথমে এসেই তারা খেতে পারেন। কারণ বাড়ি-ঘর নষ্ট হয়ে গেছে, দীর্ঘদিন না থাকায় জুম চাষও করতে পারেননি।

তিনি বলেন, একটি পাড়ায় পানির সংকট ছিল। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি পানির ট্যাংকি দেওয়া হয়েছে। অনেকের ঘর-বাড়ি নষ্ট হয়েছে। তাদের নির্মাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া মেডিকেল ক্যাম্প করা হয়েছে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম মহিউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, আমরা সবসময় সৌহার্দ্যপূর্ণ পার্বত্য চট্টগ্রাম চাই। যেখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মান নিয়ে সবাই বসবাস করবে।

টিটি/এমএইচআর/এসএইচএস/জিকেএস