দেশজুড়ে

৭ স্ত্রী নিয়ে সংসার রবিজুলের, বাকি তিনটি ‘অবৈধ’ বলছেন আলেমরা

একই ছাদের নিচে এক বা দুজন নয়; চার স্ত্রী নিয়ে দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করছেন রাজশাহীর পবা উপজেলার জুবায়ের হোসেন জুয়েল মণ্ডল (২৮) নামের এক যুবক। তবে জুয়েলকে হার মানিয়েছেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার রবিজুল ইসলাম (৩৯)। সাত স্ত্রীকে নিয়ে সংসার পেতেছেন তিনি। রবিজুলের দাবি, তারা সুখে আছেন। তবে তার বাকি তিন স্ত্রীকে শরিয়তের দৃষ্টিতে অবৈধ বলছেন আলেমরা।

Advertisement

রবিজুললের ভাষ্যমতে, মায়ের মানত পূরণ করতেই সাতটি বিয়ে করেছেন তিনি। তার এ সাত বিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

রবিজুল ইসলাম কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ি ইউনিয়নের পাটিকাবাড়ি গ্রামের মিয়াপাড়ার আয়নাল মণ্ডলের ছেলে। তিনি ১৫ বছর লিবিয়ায় ছিলেন। দুই বছর আগে আসেন দেশে। লিবিয়ায় থাকার সময়ই ১৯৯৯ সালে প্রথম বিবাহ করেন। এরপর একে একে বিয়ে করেন আরও ছয়জনকে।

তার স্ত্রীরা হলেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হালসা গ্রামের রুবিনা খাতুন (৩৫), একই উপজেলার গোস্বামী দুর্গাপুর এলাকার মিতা আক্তার (২৫), কিশোরগঞ্জের হেলেনা খাতুন (৩০), রাজশাহীর চাঁপাই এলাকার নুরুন নাহার (২৫), চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার শ্রীরামপুর এলাকার স্বপ্না (৩০), একই উপজেলার ডম্বলপুর এলাকার বানু আক্তার (৩৫) ও কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ এলাকার রিতা আক্তার (২০)।

Advertisement

রবিজুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি তার বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে। জন্মের পর তার একটা সমস্যা ছিল। সেজন্য তার মা মানত করেছিলেন, ছেলে বেঁচে থাকলে তাকে সাতটি বিয়ে দেবেন। তাই মায়ের সেই মানত পূরণ করতেই সাতটি বিয়ে করেছেন রবিজুল।

রবিজুল বলেন, ‘এতে আমি, আমার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও স্থানীয়রা সবাই খুশি। আমার সাত বউই খুব ভালো। তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ হয় না। সাত স্ত্রী ও পাঁচ সন্তান নিয়ে সুখে-শান্তিতে সংসার করছি। স্ত্রীরা আমাকে যথেষ্ট সেবাযত্ন করে ও ভালোবাসে। সারাদিন সবাই একসঙ্গে কাজ করে। প্রতিরাতে একজন স্ত্রীর কাছে পালা করে থাকি। এতে আমার বা স্ত্রীদের কোনো সমস্যা হয় না।’

বর্তমানে একটি ড্রাইভিং সেন্টার আছে রবিজুল ইসলামের। রয়েছে কয়েকটি মাইক্রোবাস। নিজে ড্রাইভিং শেখান রবিজুল ইসলাম।

কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে রুবিনাকে বিয়ে করেন রবিজুল ইসলাম। এ দম্পত্তির দুই ছেলে রয়েছে। এরপর লিবিয়ায় থাকা অবস্থায় ২০১৪ সালে হেলেনাকে বিয়ে করেন। এ স্ত্রীর ঘরে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। করোনার সময় ২০২০ সালে নুরুন নাহারকে বিয়ে করেন। তারও এক মেয়ে আছে। ২০২২ সালে বিয়ে করেন স্বপ্নাকে। পরে গত তিনমাসের মধ্যে বানু, রিতা এবং মিতাকে বিয়ে করেন রবিজুল। আর সবগুলো বিয়েই করেন পারিবারিকভাবে।

Advertisement

স্থানীয়রা জানান, রবিজুল ইসলাম সাতটি বিয়ে করেছেন। সাত স্ত্রীকে নিয়ে একই বাড়িতে বসবাস করেন। সাত স্ত্রী মিলেমিশে সংসার করেন। এলাকার মানুষ তাদের বাড়িতে বেড়াতে যান। তারা ভালোই আছেন।

রবিজুলের স্ত্রীরা বলেন, আমরা সাত বোনের মতো। আমরা সারাদিন মিলেমিশে সংসারের কাজ করি। পারস্পরিক বোঝাপাড়া ভালো। বোনের মতো এক বাড়িতে সবাই বসবাস করি। কেউ কাউকে হিংসা করি না। কে কম কাজ করলো বা বেশি করল, তা নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো সমস্যা নেই। আমরা জেনেশুনেই বিয়ে করেছি।

তারা আরও বলেন, আমাদের স্বামী এমন কিছু করেন না যাতে আমাদের মন খারাপ হয়। রবিজুল খুবই ভালো মানুষ।

রবিজুলের এ সাত বিয়ে প্রসঙ্গে কুষ্টিয়া আলিয়া মাদরাসার সাবেক উপাধ্যক্ষ প্রবীণ আলেম মাওলানা আব্দুল হালিম শরীফ বলেন, ‘ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী ভরণপোষণ দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে এমন ব্যক্তি সর্বোচ্চ চারজনকে বিয়ে করে সংসার করতে পারেন। এর বেশি বিয়ে করার বিধান কোনোভাবেই ইসলামসম্মত নয়।’

বৃহত্তর কুষ্টিয়া ওলামা পরিষদের সভাপতি মুফতি আব্দুল হামিদ বলেন, ‘ইসলামি বিধানমতে (শর্তসাপেক্ষে) ভরণপোষণ দিতে সক্ষম এবং শারীরিক সক্ষমতা রয়েছে এমন কোনো ব্যক্তি সর্বোচ্চ একসঙ্গে চারজন স্ত্রী রাখতে পারবেন বা তাদের সঙ্গে সংসার করার অনুমতি রয়েছে। এর বেশি বিয়ে করার অনুমতি ইসলামে নেই। চতুর্থ স্ত্রী থাকা অবস্থায় পরবর্তীতে যতগুলো বিয়ে করবেন সেগুলো কোনোভাবেই বৈধ হবে না।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, পৃথিবীর সব আলেমকে সামনে রেখে তাদের বিয়ে করলেও সেই বিয়ে কোনো অবস্থাতেই বৈধ হবে না। এটা রীতিমতো জেনা বা ভয়ানক পাপাচার বলেই গণ্য হবে।

আল-মামুন সাগর/এসআর/এএসএম