বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা ফেনীর ছাগলনাইয়া ও ভারতের শ্রীনগর এলাকায় বন্ধ থাকার পর পুনরায় চালু হয়েছে সীমান্ত হাট। তবে দৃশ্যপট আগের মতো নেই। বেচাকেনা তেমন না হওয়ায় হতাশা বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা।
Advertisement
২০১৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয় ফেনী সীমান্ত হাট। বাজারটি চালু হওয়ার পর বাংলাদেশ অংশের ক্রেতারা বস্তা ভরে পণ্য নিয়ে আসার দৃশ্য লক্ষণীয় থাকলেও এখন আর সেই চিত্র চোখে পড়ে না। করোনাকালীন বাজারটি বন্ধ হওয়ার পর প্রায় তিন বছরের মাথায় চলতি বছরের ৯ মে কিছু নিয়ম পরিবর্তন করে বাজারটি চালুর ঘোষণা দেয় দুই দেশের প্রশাসন। তবে নীতিমালার বাস্তবায়ন, প্রবেশমূল্য বৃদ্ধি ও হাটের আগের দিন উপজেলা শহরে গিয়ে হাটে প্রবেশের ‘প্রবেশ কার্ড’ সংগ্রহে বিড়ম্বনা সৃষ্টি হওয়ায় বাজারে ক্রেতা ও বেচাকেনা কমে গেছে। তারপরও বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের তুলনায় ভারতীয় দোকানগুলোতে বেচাবিক্রি হচ্ছে ২-৩ গুণ।
জেলা প্রশাসনের হিসাবমতে, চলতি বছরের চার মাসে (জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর) বাংলাদেশি দোকানিরা এক কোটি ৫৭ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন। তার বিপরীতে ভারতের দোকানিরা বিক্রি করেছেন তিন কোটি ১৮ লাখ টাকার পণ্য।
২০২০ সালের ৩ মার্চ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে দুদেশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সীমান্ত হাট বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর ২০২৩ সালের ৯ মে ফের চালু করা হয় বাজারটি। নতুন নিয়মে প্রবেশমূল্য ২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা এবং প্রবেশ কার্ড বাজারের আগের দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করতে হচ্ছে। একজন ক্রেতা বাজার থেকে কী কী ভারতীয় পণ্য কিনতে পারবেন তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে এবং তা পালনে বাধ্য করা হচ্ছে।
Advertisement
বাংলাদেশি অংশে কঠোরতা আরোপ করায় ভারতীয় অংশেও জনসাধারণ প্রবেশে কঠোরতা শুরু করে বিএসএফসহ তাদের প্রশাসন। এ অবস্থায় উভয় দেশের স্টল মালিকদের ক্রেতা ও বেচাকেনা কমতে শুরু করেছে।
সরেজমিন সীমান্ত হাট পরিদর্শনে দেখা যায়, বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা পাতিল, মাছ, সবজি, শুঁটকি, মশার কয়েল, বীজ, চানাচুর, বিস্কুট, সবজি ও ফল বিক্রি করছেন। অন্যদিকে ভারতীয় স্টলগুলোতে চা-পাতা, কসমেটিকস, মনোহারি, শাড়ি-থ্রিপিস, তেল, মসলাসহ আশপাশে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করছেন। তবে প্রতি মঙ্গলবারের এ বাজারের বাংলাদেশি ক্রেতাদের কাছে ভারতীয় মসলা, কসমেটিকস, দুধ, হরলিক্সসহ বিভিন্ন পণ্যের কদর বেশি। অন্যদিকে ভারতীয় ক্রেতাদের বাংলাদেশি শুঁটকি, মুদিমাল, বেকারি, ফল ও প্লাস্টিকের পণ্যের প্রতি ঝোঁক বেশি।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৫ সালে সীমন্ত হাট চালুর সময় হাটের আশপাশের পাঁচ কিলোমিটার এলাকার বাসিন্দাদের এক হাজার ৩০০ প্রবেশ কার্ড দেওয়া হয়। তবে প্রবেশমূল্য বাড়ানো ও ভারতীয় পণ্য কেনার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করায় এখন প্রতি সপ্তাহে ৫০০-৬০০ ব্যক্তি নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রবেশ কার্ড সংগ্রহ করেন। তারমধ্যে বাজারে আসেন ৪০০-৫০০ ক্রেতা। যারা বাজারে আসেন তারাও আগের মতো বস্তা ভরে ইচ্ছামতো ভারতীয় পণ্য কিনতে পারছেন না।
শাহেদ হোসেন নামের একজন ক্রেতা বলেন, ‘আগে ২০ টাকা দিয়ে দেশের যেকোনো নাগরিক প্রবেশ কার্ড সংগ্রহ করে বাজারে আসতে পারতেন। তখন অনেকেই বস্তা ভরে বাজার নিয়ে যেতেন। এখন ৫০ টাকা দিয়ে প্রবেশ করে শুধু পরিবারের জন্য সামান্য বাজার করার সুযোগ রয়েছে। নির্ধারিত বাজারের অতিরিক্ত বাজার করলেই গেটে বিজিবি সদস্যদের কঠোরতার মধ্যে পড়তে হচ্ছে।’
Advertisement
বাংলাদেশি দোকানি বিধান চন্দ্র দাস বলেন, বাংলাদেশিরা এ বাজারে কেনার মানসিকতা নিয়ে এলেও ভারতীয়রা আসেন তাদের বাংলাদেশি স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে। দিনভর বাজারে ঘুরে ভারতীয়রা আধাকেজি মাছ অথবা ২০-৪০ টাকার সবজি নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এসব কারণে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা কোনোরকম স্টল চালিয়ে যেতে পারলেও বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা দিনভর স্টলে বসেও সংসার চালাতে পারছেন না।
এ বিষয়ে সীমান্ত হাট পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ফেনীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শফিকুর রিদোয়ান আরমান শাকিল বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া নীতিমালার আলোকে সীমান্ত হাট পরিচালনা করা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে দর্শনার্থী কার্ড সংগ্রহকারী ব্যক্তিরা প্রতি মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ বাজারে প্রবেশ করে সদাই কেনাবেচা করতে পারছেন।
তিনি আরও বলেন, সীমান্ত হাটে নিরাপত্তা নিশ্চিত, চোরাচালান প্রতিরোধ ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের হয়রানি বন্ধে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছে প্রশাসন।
২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি দেশের তৃতীয় সীমান্ত হাট হিসেবে চালু হয় ফেনীর বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত হাটটি। এখানে ২৬টি করে ৫২টি স্টল সমান ভাগে দুই দেশের আশপাশের বাসিন্দাদের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব স্টলে সীমান্ত এলাকার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে উৎপাদিত পণ্য বেচাকেনা করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়।
আবদুল্লাহ আল-মামুন/এসআর/জিকেএস