আইন-আদালত

মির্জা ফখরুলের জামিন শুনানি ৩ জানুয়ারি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন প্রশ্নে রুলের ওপর শুনানির জন্য আগামী ৩ জানুয়ারি দিন নির্ধারণ করেছেন হাইকোর্ট। ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ চলাকালে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার অভিযোগে করা মামলায় ফখরুলের জামিনের বিষয়ে ওই রুল শুনানি হবে।

Advertisement

রোববার (১৭ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুল শুনানির জন্য এ দিন ধার্য করেন।

আদালতে আজ শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট সগীর হোসেন লিয়ন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বি এম আবদুর রাফেল।

আইনজীবী সগীর হোসেন লিওন বলেন, ‘এ মামলায় বিএনপি মহাসচিবের জামিন প্রশ্নে রুল শুনানির জন্য আগামী ৩ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।’

Advertisement

এ সংক্রান্ত রুল শুনানির দিন ধার্য করার জন্য ফখরুলের আবেদন আজ কার্যতালিকায় আসে। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ গত বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) এ সিদ্ধান্ত দেন।

ফখরুলের জামিন প্রশ্নে গত ৭ ডিসেম্বর এক সপ্তাহের রুল দিয়েছিল একই বেঞ্চ। কিন্তু শুনানির জন্য ফাইল তৈরি না থাকায় এদিন মামলাটি কার্যতালিকায় আনা সম্ভব হয়নি বলে ফখরুলের আইনজীবী জয়নাল আবেদীন আদালতকে জানান। জ্যেষ্ঠ বিচারক রোববার বিষয়টি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় রাখতে বলেন।

ঢাকা মহানগর হাকিম ও মহানগর দায়রা আদালতে ফখরুলের জামিন আবেদন নাকচ হওয়ায় হাইকোর্টে এসেছিলেন তার আইনজীবীরা।

জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘সরকার পতনের’ এক দফা দাবিতে ২৮ অক্টোবর সমাবেশ ডেকেছিল বিএনপি। ২০ শর্তে তাদের সমাবেশের অনুমতি দেয় পুলিশ। সেদিন দুপুরের আগে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শুরুর পর কাছেই কাকরাইল মোড়ে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। শান্তিনগর, নয়াপল্টন, বিজয়নগর, ফকিরাপুল, আরামবাগ এবং দৈনিক বাংলা মোড় এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নেয়।

Advertisement

সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দেওয়া হয়, ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করা হয় আরও ডজনখানেক যানবাহন। হামলা করা হয় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে।

দৈনিক বাংলা মোড়ে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সংঘাতে প্রাণ যায় যুবদলের মুগদা থানার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা শামীম মোল্লার।

সংঘর্ষের মধ্যে পণ্ড হওয়া সমাবেশ থেকেই পরদিন সারাদেশে হরতালের ডাক দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২৯ অক্টোবর সেই হরতালের সকালে গুলশানের বাসা থেকে ফখরুলকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ।

২৯ অক্টোবর সেই হরতালের সকালে গুলশানের বাসা থেকে ফখরুলকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। সেদিন রাতে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাঙচুরের ঘটনায় রমনা থানার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ফখরুলকে আদালতে তোলা হয়।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, সেদিন মহাসমাবেশে আসা বিএনপি নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা, লোহার রড, ইট পাটকেল ও ককটেলসহ বিভিন্ন মারাত্মক অস্ত্রেসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে ‘বেআইনি সমাবেশ ঘটিয়ে রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান’ দেয় এবং মিছিল করতে থাকে। ওই সময় তারা বৈশাখী পরিবহনের বাসসহ একাধিক বাস, পিকআপ ভাঙচুর করে আনুমানিক ২০ লাখ টাকার ক্ষতি করে।

মিছিলকারীরা বিএনপির ‘শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নির্দেশে পরিকল্পিতভাবে’ রাস্তায় জনসাধারণ ও যানবাহনের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, যানবাহনের ক্ষতিসাধন, জনমনে আতঙ্ক, ত্রাস সৃষ্টি করে পুলিশের সরকারি কাজে বাধা দেয় এবং হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করে, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুলিশ সদস্যদের আহত করে।

তারা প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবনের পূর্ব পাশের গেট ভেঙে অনধিকার প্রবেশ করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। নামফলকসহ ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর করে ক্ষতিসাধন করে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।

২৯ অক্টোবর ঢাকার মহানগর হাকিম শফি উদ্দিন জামিন নাকচ করে ফখরুলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে জজ আদালতে যান ফখরুলের আইনজীবীরা। কিন্তু ২২ নভেম্বর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ফয়সল আতিক বিন কাদেরও জামিন নামঞ্জুর করে আদেশ দেন।

এরপর জামিন চেয়ে ৫ ডিসেম্বর হাইকোর্টে আবেদন করেন তিনি। আবেদনের শুনানি নিয়ে ৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। ওই মামলায় মির্জা ফখরুলকে কেন জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। রাষ্ট্রপক্ষকে এক সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

বিষয়টি গত ১৪ ডিসেম্বর আদালতে তুলে ধরেন মির্জা ফখরুলের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সগীর হোসেন। শুনানির দিন ধার্যের আরজি জানিয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, নোটিশ জারি হয়েছে। রুল প্রস্তুত হয়েছে।

এফএইচ/কেএসআর/এমএস