>>২০১৪ সালের নির্বাচনে ৪৩ হাজার ৫৮৫ ভোট পেয়ে ঢাকা-১৭ আসনের এমপি>>২০১৮ সালে একই আসনে সর্বনিম্ন মাত্র ৫০ ভোট পেয়ে জামানত হারান >>২০২০ সালে নিজ এলাকা চট্টগ্রাম-৮ এর উপ-নির্বাচনেও জামানত হারান
Advertisement
রাজনীতি করে এতো সুফল বাংলাদেশে এ যাবৎকালের কোনো রাজনীতিবিদ পেয়েছেন কি-না জানা নেই! তবে একবোরে শূন্য থেকে মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে গাড়ি, প্লট, ব্যবসা এবং একটি রাজনৈতিক দলের মালিক হয়েছেন এস এম আবুল কালাম আজাদ। তিনি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ এর চেয়ারম্যান তিনি।
আবুল কালাম আজাদ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দলের প্রতীক টেলিভিশন নিয়ে জিতে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তখন ওই আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী ছিল না। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও পরে প্রত্যাহার করে নেন। নির্বাচনে ওই আসনে মোট ভোটার ছিল ২ লাখ ৯০ হাজার ২৭৮ জন। এরমধ্যে তিন প্রতিদ্বন্দ্বী মিলে পান ৫১ হাজার ৬৩১ ভোট। এস এম আবুল কালাম আজাদ ‘টেলিভিশন’ প্রতীকে পান ৪৩ হাজার ৫৮৫ ভোট। জাতীয় পার্টি (জেপি) প্রার্থী আবদুল লতিফ মল্লিক ‘বাইসাইকেল’ প্রতীকে পান ৪ হাজার ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ হান্নান মৃধা ‘ফুটবল’ প্রতীকে পান ৪ হাজার ৪৬ ভোট।
আরও পড়ুন: এমপি জিন্নাহর সম্পদের পাহাড়
Advertisement
ওই নির্বাচনে ইসিতে দেওয়া এস এম আবুল কালাম আজাদের ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর তারিখের হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ওই সময়ে তার কোনো আয় ছিল না, ছিল না কোনো স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ। স্ত্রী কিংবা নির্ভরশীলদের নামেও কোনো আয় বা স্থাবর অস্থাবর সম্পদ ছিল না। একেবারে খালি একটি হলফনামা জমা দেন তিনি। তবে ওই হলফনামায় তিনি পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন ‘সাংবাদিকতা’। ঢাকায় ঠিকানা দেখানো হলেও তার জন্মস্থান চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার পোপাদিয়া গ্রামে।
‘৫ জানুয়ারি’র ওই নির্বাচনে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি-জামায়াতসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল অংশ না নিলেও মাত্র ১৫ দিন আগে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনএফ।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ এর নিবন্ধন নম্বর ০৪২। ২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন থেকে নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পায় দলটি। দলটির প্রতীক ‘টেলিভিশন’।
এদিকে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ঢাকা-১৭ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিএনএফ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ। নির্বাচনে ওই আসনে তিনি বাদেও আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ আরও ১০ জন প্রার্থী অংশ নেন। নির্বাচনে ওই আসনে ভোটার ছিল ৩ লাখ ১৪ হাজার ৪৮৮ জন। এরমধ্যে ভোট পড়ে ২ লাখ ৮ হাজার ৬৮৭টি। এতে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৬১০ ভোট পেয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী প্রয়াত নায়ক ফারুক (আকবর হোসেন পাঠান) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা ব্যরিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ। তিনি পান ৩৮ হাজার ৬৩৯ ভোট। ওই আসনে সর্বনিম্ন মাত্র ৫০ ভোট পেয়ে জামানত হারান এস এম আবুল কালাম আজাদ। ওই আসনে ১২৫ কেন্দ্রের ৯২টিতে তিনি কোনো ভোটই পাননি।
Advertisement
আরও পড়ুন: ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর সোনার ভরি ৪৩৩৩ টাকা, স্ত্রীর ৫০০০!
এরপর অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে ২০২০ সালে চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও-পাঁচলাইশ) আসনের উপ-নির্বাচনে অংশ নিয়েও জামানত হারান তিনি। এই নির্বাচনে মাত্র ১ হাজার ১৮৫ ভোট পান। নিজ এলাকার নির্বাচনে অংশ নিয়ে এত কম ভোট পাওয়ায় বোয়ালখালীসহ চট্টগ্রামে সমালোচনার মুখেও পড়েন তিনি।
তার হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তখনও তার কোনো আয় ছিল না। ছিল না কোনো স্থাবর সম্পদও। তবে পেশা পাল্টিয়ে তিনি ‘রাজনীতি’কে পেশা হিসেবে উল্লেখ করেন। ওই সময়ে আয় না থাকলেও তার অস্থাবর-সম্পদ হিসেবে ৩০ লাখ টাকা ও একটি গাড়ি রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেন। তবে স্ত্রী কিংবা নির্ভরশীলদের কোনো আয়, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ছিল না।
চলমান দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এবার তিনি ঢাকা-১৭, ঢাকা-১৮ এবং চট্টগ্রাম-৮ এই তিন আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া তার চলতি বছরের ২৫ নভেম্বর তারিখের হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এবারও তিনি পেশা পাল্টিয়েছেন। এবার তিনি পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন ব্যবসা। সাকুল্যে তিনি বছরে আয় দেখিয়েছেন ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৫২৩ টাকা। এরমধ্যে ব্যবসা খাতে আয় ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৪০০ টাকা। অন্যান্য খাতে ব্যাংক সুদ থেকে আয় দেখিয়েছেন ১২৩ টাকা।
আরও পড়ুন: লাখপতি থেকে কোটিপতি হয়েছেন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন
ব্যাংক সুদ থেকে আয় দেখালেও তার অস্থাবর সম্পদের তালিকায় কোনো ব্যাংক জমা নেই। তবে স্থাবর-অস্থাবর মিলে তিনি বর্তমানে ৫১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৪৩ টাকার সম্পদ দেখিয়েছেন। এরমধ্যে নগদ টাকা রয়েছে ১৫ লাখ ৩৪ হাজার ৩৪৩ টাকা। আগের হলফনামার মতো ৩০ লাখ টাকার গাড়ি দেখিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি স্থাবর সম্পদের হিসেবে রাজধানী নতুন শহর প্রকল্পে ৩ কাঠার একটি প্লট রয়েছে তার। যার মূল্য দেখিয়েছেন ৬ লাখ ২১ হাজার ৬শ’ টাকা।
এসএইচএস/এএসএম