অর্থনীতি

গুলিস্তানে কম দামে কোট-ব্লেজার

প্রকৃতিতে এখন শীত মৌসুম। গ্রামগঞ্জে শীত এসেছে অগ্রহায়ণ থেকেই। রাজধানীবাসীও এর ছোঁয়া অনুভব করছে। এতে বেড়েছে শীত পোশাকের কেনাকাটা। এরমধ্যে অনেকের একটা দুর্বলতা আছে ব্লেজার ও কোটে। বিশেষ করে তরুণরা বেশি পছন্দ করেন ব্লেজার। এক্ষেত্রে কিছুটা কম দামে ব্লেজার কিনতে গুলিস্তান ছোটেন তারা। এখানে বিভিন্ন মার্কেট এবং ফুটপাতে মেলে বিভিন্ন রং ও ডিজাইনের কোট-ব্লেজার। সর্বনিম্ন ৪০০ থেকে শুরু করে চার হাজার টাকা পর্যন্ত কোট-ব্লেজার রয়েছে।

Advertisement

সরেজমিনে দেখা যায়, গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টের পাশে ফুটপাতে বসেছে অস্থায়ী কোট-ব্লেজারের দোকান। সকাল থেকে শুরু হয় হাঁকডাক। বেলা গড়িয়ে বিকেল থেকে বাড়তে থাকে বেচাকেনা। সন্ধ্যায় ভিড় জমে বেশি। নিম্ন থেকে মধ্যবিত্তের পাশাপাশি উচ্চবিত্তরাও ভিড় জমান এখানে।

মানভেদে দেশি কাপড়ের সর্বনিম্ন ৮০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ চার হাজার টাকা পর্যন্ত ব্লেজার পাওয়া যায়। এছাড়া ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকার কটি রয়েছে।

পাশাপাশি বিদেশি কোট-ব্লেজারও রয়েছে। এসব কোট-ব্লেজার চীন, কোরিয়া ও তাইওয়ান থেকে আসে। সর্বনিম্ন ৪০০ থেকে শুরু করে ডিজাইন অনুযায়ী আড়াই হাজার টাকা দামের কোট রয়েছে। তবে গুলিস্তানের এসব দোকান থেকে একটু দামাদামি করে কেনাই ভালো।

Advertisement

দেশীয় কাপড়ের ব্লেজার ক্রেতাদের বেশি পছন্দ বলে জানান ব্যবসায়ীরা। শুধু ফরমাল নয়, ক্যাজুয়াল ধাঁচেরও ব্লেজার পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে ব্লেজারে এখন চলছে স্লিম ফিট ফ্যাশন। ফুটপাতেও এ ধাঁচের ব্লেজার সবচেয়ে বেশি। ক্রেতাদের দৈহিক গঠন অনুযায়ী মোটা হলে এক বোতাম, চিকন ও মাঝারি গড়ন হলে দুই-তিন বোতামের ব্লেজার রয়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, নভেম্বর থেকেই আমাদের দোকান শুরু হয়েছে। কিন্তু তখন শীতের প্রভাব না থাকায় তেমন বেচাকেনা হয়নি। ডিসেম্বরের শুরুতে শীত বাড়ায় ক্রেতাও বেড়েছে। তবে হরতাল-অবরোধে মানুষ আসছে কম।

ব্যবসায়ীরা আরও জানান, তাদের প্রধান ক্রেতা ঢাকার বাইরের মানুষ। হরতাল-অবরোধের কারণে তারা আসতে পারছেন না। এছাড়া অর্থনৈতিক সংকটে ক্রেতাদের কাছেও তেমন টাকা নেই। অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে পোশাকের দিকে মানুষের মনোযোগ কম। তাই প্রত্যাশা অনুযায়ী বেচাকেনা হচ্ছে না।

ব্লেজার ও কটি বিক্রেতা মো. রাজু জাগো নিউজকে বলেন, শুক্রবারের পর থেকে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। এখন কোনো কোনো দিন ২০ হাজার, কোনো দিন ৩০ হাজার টাকার পোশাক বিক্রি করি। আমাদের টার্গেট থাকে ৫০ হাজার টাকা। তবে শীত বাড়লে বেচাকেনা ভালো হবে আশা করছি।

Advertisement

আরেক বিক্রেতা শহিদুল হক বলেন, ব্লেজার-কটি মূলত স্টাইলিশ পোশাক। হালকা শীতেও এর চাহিদা থাকে। এখন সপ্তাহের চারদিনই অবরোধ। হরতাল-অবরোধের দিন বেচাকেনা কম হয়। অন্যান্য দিনে ভালোই বিক্রি করি। হরতাল-অবরোধ না থাকলে আর দ্রব্যমূল্য কম থাকলে বেচাকেনা আরও বাড়তো।

‘মারিয়া ফ্যাশন’ নামে একটি পোশাক কারখানার ব্লেজার বিক্রি করছেন জহিরুল ইসলাম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের সব ব্লেজার নিজস্ব গার্মেন্টসের। তরুণরা ব্লেজারের প্রতি আকৃষ্ট বেশি। বড় বড় দোকানের তুলনায় এখানে দম কিছুটা কম হওয়ায় মানুষ বেশি আসে। এরমধ্যে চাকরিজীবীদের আনাগোনা বেশি।

বিদেশি কোট বিক্রি করেন মিলন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, এই কোটগুলো বিদেশ থেকে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ আসে। সেখান থেকে নিয়ে আসি আমরা। অনেকে সদরঘাট থেকেও এসব বিদেশি পোশাক আনেন। বিদেশি কোটগুলো দেশির তুলনায় সবদিক দিয়ে ভালো। ডলার সংকটের কারণে এবার এসব পোশাকের দাম বেড়েছে।

বাড্ডা থেকে গুলিস্তানে ব্লেজার কিনতে এসেছেন সাইফ হোসেন। তিনি বলেন, অন্যান্য সময় সায়েন্সল্যাব থেকে ব্লেজার কিনি। তবে শীত এলে চলে আসি গুলিস্তান। শীতের সময় এখানে নতুন নতুন ডিজাইন আসে। সায়েন্সল্যাবের চেয়ে মোটামুটি কম দামে পাওয়া যায়। তবে আগে আরও কম দামে নিতে পারতাম। এ বছর দাম বেড়েছে। ১২শ টাকা দিয়ে একটা ব্লেজার কিনেছি।

শীতের জন্য কটি খুঁজছিলেন মহিবুল ইসলাম। দেশি কাপড়ে প্রিন্টের একটি কটি নিয়েছেন তিনি। জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের ফুটপাতের ওপর নির্ভর করে চলতে হয়। বেসরকারি চাকরি করি। গত বছর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট থেকে একটা ব্লেজার নিয়েছিলাম, এখনো আছে। এবার একটা কটি নিয়েছি ৭৫০ টাকা দিয়ে।

আরএএস/জেডএইচ/এমএস