কক্সবাজারের ‘খুরুশকুল-চৌফলদণ্ডী-ঈদগাঁও’ আঞ্চলিক মহাসড়কের দূরত্ব ২১ কিলোমিটার। এ দূরত্বের সড়কটি অতিক্রম করে কক্সবাজার জেলা শহরে ঢুকতে বা জেলা শহর থেকে ঈদগাঁও পৌঁছাতে গেলে চালক-যাত্রীদের পার হতে হচ্ছে ৬৮টি ছোট-বড়-মাঝারি স্পিড ব্রেকার। অপরিকল্পিত এসব স্পিড ব্রেকারে গাড়ির ঝাঁকুনি বাড়লেও কমছে গতি। ফলে সঠিক সময়ে জরুরি কাজে পৌঁছানো হয়ে ওঠে না এ সড়কে যাতায়াতকারীদের। সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়ছেন রোগীরা।
Advertisement
সরকারের সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ নিয়ন্ত্রিত আঞ্চলিক ও মহাসড়কে যাচ্ছেতাই স্পিড ব্রেকার দেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রয়োজনে সওজ বিশেষ কায়দায় স্পিড ব্রেকার বসায়। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের তদারকির অভাবে নিজেদের বাড়ির সামনে ‘যার মন চেয়েছে’ বাঁধ আকারে স্পিড ব্রেকার বসিয়ে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী করে তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
সূত্রমতে, ঈদগাঁও থেকে জাতীয় মহাসড়ক দিয়ে কক্সবাজার শহরের দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। মহাসড়কে যান চলাচল ও দূরত্ব বেশি হওয়ায় প্রায় অর্ধেক দূরত্ব, সহজ ও নিরাপদ যাতায়াতে উপকূলের ১০-১২টি ইউনিয়নের লাখো চলাচলকারী কক্সবাজার যাতায়াতে ঈদগাঁও-চৌফলদণ্ডী-খুরুশকুল সড়কটি ব্যবহার করে আসছেন। দু’দশক আগে চৌফলদণ্ডী ও বাঁকখালীতে ব্রিজ বসানো ও সড়ক পাকা হওয়ার পর প্রয়োজনীয় যোগাযোগসহ সড়কটি বাণিজ্যিক ব্যবহারের মাত্রা বেড়েছে। এরপরই বেড়েছে সড়কে স্পিড ব্রেকার বসানোর প্রতিযোগিতা।
কক্সবাজার শহরে নিয়মিত যাতায়াতকারী ঈদগাঁওর ব্যবসায়ী নুরুল আলম বলেন, মহাসড়কের ঈদগাঁও বাস স্টেশন থেকে খুরুশকুল মাঝিরঘাট ব্রিজ পর্যন্ত আসতে যেতে প্রতিদিন ৬৮টি ছোট-বড়-মাঝারি স্পিড ব্রেকার পার হতে হয়। সড়কে সাধারণত ২৫-৩০ কিলোমিটার গতিতে চালিয়ে মোটরসাইকেলে ১৫-২০ মিনিটে কক্সবাজার-ঈদগাঁও পৌঁছে যাওয়ার কথা, সেখানে এই সড়কে এক ঘণ্টা সময় ব্যয় হয়। তার উপর আনাড়ি ইজিবাইক চালকদের কারণে কোথাও জ্যাম পড়লে দেড় বা দুই ঘণ্টায় গড়ায়।
Advertisement
নাছির নোমানী বলেন, দূরত্ব কম হওয়ায় শত শত মানুষ ঈদগাঁও, পোকখালী, ইসলামপুর, ইসলামাবাদ, জালালাবাদ, চৌফলদণ্ডী, খুরুশকুল, পিএমখালী, ভারুয়াখালী, খুটাখালী ইউনিয়ন থেকে চাকরিস্থল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। সবাই স্পিড ব্রেকার সমস্যায় অতিষ্ঠ।
যাতায়াতে সড়কটিকে ভরসা হিসেবে নেওয়া ঈদগাঁওয়ের প্রবাস ফেরত মোহাম্মদ ইউনূস খান বলেন, দুর্ঘটনা এড়াতে মহাসড়ক এড়িয়ে বৃদ্ধ মা ও পরিবারের সদস্যদের এ সড়কেই জেলা সদরের হাসপাতালে আনা-নেওয়া করা হয়। আলমাছিয়া মাদরাসা সড়কে দশ গজে দুটি, পালাকাটায় ৩০ গজে চারটি এভাবে ২১ কিলোমিটার দূরত্বে কিলোমিটারে গড়ে ৩টির চেয়ে বেশি স্পিড ব্রেকার বসানো। সড়কের রেলক্রসিং এলাকা, চারা বটতল, খামারপাড়া ও চৌফলদণ্ডী বাজার, খুরুশকুলের কয়েক এলাকার বেশ কয়েকটি স্পিড ব্রেকার বাঁধ বলে মনে হয়। সিএনজিপূর্ণ মানুষ থাকলে কিংবা বাইকে দুজন উঠলে নিচের অংশ স্পিড ব্রেকারে আটকে যায়। এভাবে ৬৮ বার দপাদপ গাড়ির ঝাঁকুনিতে রোগী আরও অসুস্থ এবং রোগীর সঙ্গীরা কোমর ব্যথায় নড়াচড়া করতে পারেন না।
সরেজমিন দেখা যায়, সবুজ-শ্যামল পরিবেশে এঁকেবেঁকে চলে যওয়া সড়কে কোনো রঙ বা সাংকেতিক চিহ্ন ছাড়াই বসানো হয়েছে অসংখ্য স্পিড ব্রেকার। স্পিড ব্রেকারগুলোর আগে-পরে নেই কোনো প্রতীকী চিহ্ন বা সতর্কবানী। সড়কের কিনারে কেউ নতুন বাড়ি করছে, সেখানে বসিয়ে দেওয়া হয় একটি স্পিড ব্রেকার। হাট-বাজার, দোকান এমনকি চা-দোকানের সামনেও বিনা বাঁধায় বসেছে গতিরোধক। যদিও স্পিড ব্রেকার স্থাপনকারীদের দাবি, অতি গতি নিয়ে চালানো গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করে দুর্ঘটনা রোধের জন্য এ পদ্ধতি। কিন্তু এসব অপরিকল্পিত স্পিড ব্রেকারে প্রায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
স্থানীয়রা জানান, অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত এ স্পিড ব্রেকারগুলোর কারণে সাইকেল, ভ্যান, মোটরসাইকেল চালকরাও সমস্যায় পড়েছেন। প্রতিদিন ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। সাধারণত দুর্ঘটনা কমাতে সড়কে স্পিড ব্রেকার (গতিরোধক) নির্দিষ্ট দূরত্বে ও দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় স্থাপন করা হয়। কিন্তু এ সড়কে বসানো স্পিড ব্রেকার এখন ক্ষতি ও বিরক্তির কারণ হয়ে উঠেছে। এসব গতিরোধকের সামনে পেছনে কোনো সতর্ক চিহ্ন নেই। ফলে নতুন কেউ এ সড়ক দিয়ে চলাচল করলে এসব স্পিড ব্রেকারে দুর্ঘটনায় পড়েন।
Advertisement
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি জসিম উদ্দিন কিশোর বলেন, সড়কে যত্রতত্র স্পিড ব্রেকার তৈরি বেআইনি। কিন্তু প্রয়োজনের নিরিখে দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকায় স্পিড ব্রেকার সওজের নিয়মে বসানো যায় এবং সেখানে অবশ্যই সতর্ক চিহ্নও দিতে হয়, যাতে দিনের বেলার পাশাপাশি রাতের আঁধারে দূর থেকে দেখে চালক গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এ সড়কে এ নিয়ম মানা হয়নি বলেই দুর্ঘটনা লেগে আছে।
কক্সবাজার সড়ক ও জনপথের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহে আরেফীন বলেন, ব্যক্তি বিশেষ চাইলেই সড়কে স্পিড ব্রেকার বসাতে পারেন না। এরইমধ্যে মহেশখালীর গোরকঘাটা সড়কে বসানো স্পিড ব্রেকার তুলে ফেলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঈদগাঁও-চৌফলদণ্ডী-খুরুশকুল সড়কে অসংখ্য স্পিড ব্রেকার বসানোর অভিযোগ পেলেও ফান্ড না থাকায় তা তোলার উদ্যোগ নিতে পারিনি। শিগগিরই এলাকা ভিত্তিক বসানো স্পিড ব্রেকার তুলে প্রয়োজনীয় জায়গায় সওজের নিয়মে আমরা বসাবো এবং সতর্ক চিহ্নও দেবো। এরপর কেউ ইচ্ছামতো স্পিড ব্রেকার বসালে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এফএ/এমএস