রাজনীতি

সামনে কী ঘটবে তা বলা মুশকিল

ড. বদিউল আলম মজুমদার। অর্থনীতিবিদ, উন্নয়নকর্মী, গবেষক, রাজনীতি বিশ্লেষক, স্থানীয় সরকার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ। কাজ করছেন দাতব্য সংস্থা ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট’র বাংলাদেশ শাখার পরিচালক ও বৈশ্বিক সহ-সভাপতি হিসেবে। দায়িত্ব পালন করছেন নাগরিক সংগঠন ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক’র (সুজন) প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবেও।

Advertisement

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজের। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে প্রথমটি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।

জাগো নিউজ: সরকার দ্বাদশ নির্বাচনের আয়োজন সম্পন্নের পথে। নির্বাচন নিয়ে সরকার জোটে আনন্দধারা বইছে। অপরদিকে বিরোধী শিবিরে আঁধার। কী দেখতে পাচ্ছেন এবারের নির্বাচন ঘিরে?

ড. বদিউল আলম মজুমদার: কী ঘটতে যাচ্ছে সবারই জানা। এটি তো নির্বাচন নয়। নির্বাচন নির্বাচন খেলা মাত্র। নির্বাচন মানে হচ্ছে বিকল্প থেকে বেছে নেওয়া। যথার্থ বিকল্প থেকে বেছে নেওয়া এবং এই বেছে নেওয়া যেন প্রভাবমুক্ত হয়। প্রভাবমুক্ত যথার্থ বিকল্প থেকে বেছে নেওয়ার সুযোগ না থাকলে সেটাকে নির্বাচন বলা যায় না।

Advertisement

আরও পড়ুন>> জেলখানায় বসেও সংলাপ হতে পারে

যেমন, একজন তৃষ্ণার্ত ব্যক্তিকে যদি আপনি মিনারেল ওয়াটার ও এক গ্লাস ট্যাপের পানি দেন, তাহলে সে কিন্তু মিনারেল ওয়াটার পান করবে। কিন্তু আপনি যদি তাকে মিনারেল ওয়াটার ও ফুটানো পানি দেন তাহলে সে বিকল্প থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ পাবে। কারণ উভয়ই নিরাপদ। এখন তো কোনো বিকল্প দেখতে পাচ্ছে না মানুষ। সুতরাং, সামনে কী ঘটবে তা বলা মুশকিল।

২০১৮ সালে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রেখে সরকার গঠন করতে হলো। এটি তাদের দুর্বলতা। আওয়ামী লীগ দিন দিন দুর্বল হচ্ছে। কারণ এখনকার ইস্যু কিন্তু শেখ হাসিনা বনাম তারেক রহমান নয়। এখনকার ইস্যু হচ্ছে ভোটাধিকার। সরকার এই অধিকারের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে।

নির্বাচনের জন্য চারটি জিনিস দরকার। ভোটার, বেছে নেওয়ার সুযোগ, যথার্থ বিকল্প ও প্রভাবমুক্ত থেকে বেছে নেওয়ার সুযোগ। এই নির্বাচনে বিএনপি নেই। আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে এখন কিংস পার্টি। তাহলে তো সহজেই বুঝতে পারা যায় কে জিতবে? ফলাফল শুধু ঘোষণা বাকি থাকে। আওয়ামী লীগ চাইলে বাংলাদেশের সবগুলো আসনে জিততে পারে। এটিকে তো আপনি নির্বাচন বলতে পারেন না।

Advertisement

জাগো নিউজ: এর আগেও দুটি নির্বাচন নিয়ে আপনারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। এবার আপনি সেই উদ্বেগ নিয়ে কী বলবেন?

ড. বদিউল আলম মজুমদার: ২০১৮ সালের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ছিল। কিন্তু সেবার নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ছিল না। ২০১৮ সালের নির্বাচন ছিল নিয়ন্ত্রিত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আমলা, নির্বাচন কমিশন সরকার দলের পক্ষে কাজ করেছে। মূলত সেই নির্বাচনটি হয়েছে বিশেষ যোগসাজশে। নির্বাচন কমিশনের ছত্রছায়ায় সরকার দলের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়ে এসেছে। মামলা, হামলা দিয়ে এমন নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনে গণমানুষের অংশগ্রহণ থাকে না। নির্বাচনের আগে বিরোধী দলকে মাঠ ছাড়া করতে যা করার প্রশাসন তাই করেছিল।

আরও পড়ুন>> ‘আমরা একটি বিপজ্জনক ফাঁদের ভেতরে পড়ে যাচ্ছি’

ওই নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী সংলাপের আয়োজন করেছিলেন। তিনি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তার কথার ওপর মানুষ নির্ভর করতে পারেনি। সরকার দল, পুলিশ মিলে বিরোধীদের ওপর আক্রমণ শুরু করলো। এমনকি বিরোধী জোট নেতা ড. কামাল হোসেনের ওপরেও হামলা হলো। এমন সহিংসতার কারণে বিরোধী দলের প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারেননি।

এমনকি অনেকে নির্বাচনী এলাকায়ই যেতে পারেননি। নির্বাচন কমিশন বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের অযোগ্য ঘোষণা করেছে। আদালতও তাই করেছেন। খালেদা জিয়াসহ অনেকের প্রার্থিতা বাতিল করে দিয়েছে। গায়েবি মামলা নিয়ে অনেকে আত্মগোপনে থেকেছে। বিষয়টি এমন ছিল যে বিরোধী দলের নেতারা হয় জেলে থাকবে, না হয় এলকার বাইরে থাকবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করেছে যে, তারা সরকার দলের অনুগত।

ওই নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়েই বিরোধী জোট নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকছে। আর এবার একতরফা নির্বাচনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। উদ্বেগ এবার আরও বেশি বলে মনে করি।

আরও পড়ুন>> সামনে সরকার কোনো বিপদ দেখছে না জাগো নিউজ: নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন টিকে থাকা যায়? শেখ হাসিনার সরকার কিন্তু টিকে গেলো? নিশ্চয় তার একটি ভরশক্তি আছে।

ড. বদিউল আলম মজুমদার: ক্ষমতাসীন দলের ভরশক্তি হচ্ছে প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলো। রাষ্ট্রযন্ত্র পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে।

জাগো নিউজ: এমন নিয়ন্ত্রণে রাখাও তো এক ধরনের সফলতা। ড. বদিউল আলম মজুমদার: এই অর্জন কি কারও জন্য সুখকর? ২০১৮ সালে তারা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করেছিল। কিন্তু সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রেখে সরকার গঠন করতে হলো। এটি তাদের দুর্বলতা। আওয়ামী লীগ দিন দিন দুর্বল হচ্ছে। কারণ এখনকার ইস্যু কিন্তু শেখ হাসিনা বনাম তারেক রহমান নয়। এখনকার ইস্যু হচ্ছে ভোটাধিকার। সরকার এই অধিকারের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে।

জাগো নিউজ: আপনি বলছেন সরকার ভোটাধিকারের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ তো সরকারের বিপক্ষে দাঁড়ায়নি। মানুষ তো মেনে নিচ্ছে।

ড. বদিউল আলম মজুমদার: মানুষের মাঠে প্রতিবাদী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মাঠে নামলেই তো মামলা, হামলার শিকার হচ্ছে। যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তা কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক নয়।

এসএস/এএসএ/এএসএম