ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরে ‘উগ্র’ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতায় ইইউ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এমন পরিস্থিতিতে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার কথা ভাবছে ব্লকটি। গত সপ্তাহে সহিংস ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ইইউয়ের এমন ভাবনার বিষয় সামনে এলো।
Advertisement
মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংস ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব করবেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক জোসেপ বোরেল।
আরও পড়ুন: গাজার অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছে ইসরায়েল
সোমবার (১১ ডিসেম্বর) ইইউয়ের পররাষ্ট্র নীতির এই প্রধান কর্মকর্তা বলেন, পশ্চিম তীরে সহিংস বসতি স্থাপনকারীদের অত্যাচারে ইইউ উদ্বিগ্ন। পাশাপাশি জেরুজালেমে আরও ১৭০০টি আবাসন ইউনিট অনুমোদনের বিষয়ে ইসরায়েলি সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার নিন্দা জানিয়েছে ব্লকটি।
Advertisement
ব্রাসেলসে ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের পর গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে বোরেল সাংবাদিকদের বলেন, কথা থেকে কাজে যাওয়ার সময় এসেছে ও পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে সহিংসতার বিষয়ে আমরা যে ব্যবস্থা নিতে পারি তা কার্যকর করার সময় এসেছে।
জাতিসংঘের মতে, গত ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের আক্রমণ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। তাছাড়া গাজার সঙ্গে পশ্চিম তীরে চলা ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২৭৫ জন নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে কমপক্ষে ৬৩ জন শিশু রয়েছে। এছাড়া অভিযানে আহত হয়েছেন আরও ৩ হাজার ৩৬৫ জন।
আরও পড়ুন: হামাসকে নির্মূলে উঠে পড়ে লেগেছে ইসরায়েল
অবশ্য বোরেল জানান, তার এই প্রস্তাবিত ব্যবস্থা সম্পর্কে ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সবাই পুরোপুরি একমত নন। এরপরও তিনি ফিলিস্তিনিদের ওপর আক্রমণে জড়িত ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের একটি তালিকা তৈরি করতে ইইউ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করবেন।
Advertisement
বোরেল আরও জানান, তিনি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধেও পৃথকভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব করবেন। এ বিষয়ে কোনও ইইউ মন্ত্রী বিরোধিতা করেননি। কারণ ইইউ বরাবরই হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে দেখে।
আল জাজিরা প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, জোসেফ বোরেল এখনো এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রস্তাব জমা দেননি। তবে তিনি বলেছেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরামর্শ দেবেন তিনি।
আরও পড়ুন: বিজ্ঞাপনে গাজায় ইসরায়েলি ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিরূপ, বয়কটের মুখে ‘জারা’
এছাড়া বোরেল নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্যও জানাননি। তবে ইইউ কর্মকর্তারা বলেছেন, নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা ব্যক্তির বিরুদ্ধে ইইউতে ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হবে। তবে এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মন্তব্য করেছেন ইসরায়েলের কট্টর মিত্র দেশ অস্ট্রিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র ও হাঙ্গেরির কিছু কূটনীতিক।
গত সপ্তাহে অধিকৃত পশ্চিম তীরে সহিংস হামলায় জড়িত ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। গত মাসে ফ্রান্স বলেছিল, তারাও এই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বিবেচনা করছে। আর বেলজিয়াম বলেছে, তাদের দেশে উগ্রপন্থি ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের নিষিদ্ধ করা হবে।
আল জাজিরা বলছে, প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে অতি-ডানপন্থি সরকার বসতি স্থাপনকারীদের সমর্থনের ইঙ্গিত দেওয়ার পর গত বছর থেকে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা বেড়েছে।
আরও পড়ুন: রাশিয়ার প্রতি ইসরায়েলের অসন্তোষ প্রকাশ
এছাড়া অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতিগুলো ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েলের দখলে চলে যাওয়া ভূখণ্ডে নির্মাণ করা হয়েছে। এসব বসতি বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের কাছে অবৈধ বলে বিবেচিত।
সূত্র: আল জাজিরা
এসএএইচ