শিক্ষা

পরীক্ষায় অংশ নেননি দেড় লাখের বেশি প্রার্থী, বাতিল চেয়ে মানববন্ধন

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে প্রথম ধাপের পরীক্ষায় দেড় লাখেরও বেশি প্রার্থী অংশ নিতে পারেননি বলে দাবি করেছেন প্রার্থীদের একটি অংশ। একই সঙ্গে ব্যাপক অনিয়ম-জালিয়াতির অভিযোগ তুলে এ পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন তারা।

Advertisement

সোমবার (১১ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন তারা। এতে দেড় শতাধিক প্রার্থী অংশ নেন।

আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বরিশাল বিভাগের প্রার্থী ফাতেমা আক্তার সাথী মানববন্ধনে বলেন, কয়েক দফা পিছিয়ে হরতাল-অবরোধের মধ্যে প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। অথচ একই কারণে বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছানো হয়েছে। সমন্বিত ৭ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষাও পেছানো হয়।

আরও পড়ুন: প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, গ্রেফতার ১২৪

Advertisement

তিনি আরও বলেন, তড়িঘড়ি পরীক্ষা নেওয়ায় অনেক প্রার্থী প্রবেশপত্র ডাউনলোডের এসএমএসও পাননি। প্রবেশপত্র তুলতে না পেরে অনেকে পরীক্ষার হলে ঢুকতে পারেননি। আবার পরীক্ষায় প্রক্সিসহ ব্যাপক অনিয়ম-জালিয়াতি হয়েছে। পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই প্রশ্নপত্র বাইরে চলে গেছে। এটা গণমাধ্যমেই প্রকাশিত হয়েছে। এটা আমরা মেনে নিতে পারি না। আমরা আইনগতভাবে এ পরীক্ষা বাতিলের জন্য হাইকোর্টে রিটও করবো।

এর আগে সকাল ১০টার দিকে আন্দোলনকারীরা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) মহাপরিচালক (ডিজি) শাহ রেজওয়ান হায়াত বরাবর পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আবেদন করেন।

আবেদনপত্রে তারা উল্লেখ করেছেন, গত ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের পরীক্ষায় মোট প্রার্থী ছিল ৩ লাখ ৬০ হাজার ৬৯৭ জন। হরতাল, অবরোধ ও বৈরী আবহাওয়াজনিত সমস্যার কারণে দূরপাল্লার গাড়ি, বিভাগীয় গাড়ি, রেলের টিকিট না পাওয়ায় ১ লাখ ৫৮ হাজার পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। অনেক প্রার্থীর আবেদনের সঙ্গে ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে পরীক্ষা সংক্রান্ত এসএমএস না যাওয়ার কারণে পরীক্ষা সম্পর্কেও জানতে পারেননি। যার কারণে তারা পরীক্ষাকেন্দ্রে যথাসময়ে উপস্থিত হতে পারেননি।

এতে আরও বলা হয়, তাছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরের তথ্যানুযায়ী- পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রশ্নফাঁস, উত্তরপত্র জালিয়াতি ও বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহার করে জালিয়াতচক্র। এতে নিয়োগ পরীক্ষায় চরম অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। সার্বিক বিষয়গুলো বিবেচনা করে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের প্রথম ধাপের পরীক্ষা বাতিল করে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরীক্ষা নেওয়ার অনুরোধ জানান তারা।

Advertisement

আরও পড়ুন: লালমনিরহাটে ১৩ পরীক্ষার্থীকে পুলিশে সোপর্দ, বহিষ্কার ১৬

এদিকে, পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আইনি পথেও হাঁটছেন প্রার্থীদের একটি অংশ। রোববার (১০ ডিসেম্বর) তারা হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। তবে আদালত তাদের প্রয়োজনীয় নথিপত্রসহ পূর্ণাঙ্গ নিয়ম মেনে আবেদন করার নির্দেশনা দেন। সে অনুযায়ী সোমবার তাদের প্রতিনিধিদল ও আইনজীবী প্রস্তুতি নিয়ে রিট আবেদন করতে হাইকোর্টে অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

তবে ১ লাখ ৫৮ হাজার চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি, এ নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি। নিয়োগ পরীক্ষার সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পলিসি অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের পরিচালক মনীষ চাকমার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন উপ-পরিচালক জাগো নিউজকে বলেন, সংখ্যাটা ঠিক কত তা যারা তত্ত্বাবধানে ছিলেন তারা বলতে পারবেন। আমি শুনেছি, এক লাখের বেশি অনুপস্থিত ছিলেন। সেটাও নির্দিষ্ট করে বলার মতো তথ্য আমার কাছে নেই।

১ লাখ ৫৮ হাজার প্রার্থী পরীক্ষা অংশ নিতে পারেননি, এটা কীভাবে তারা নিশ্চিত হলেন। মানববন্ধন চলাকালে সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে জবাবে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ফাতেমা আক্তার সাথী বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছ থেকেই আমরা এ তথ্য জেনেছি। এটা সঠিক।

আরও পড়ুন: শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় দিনাজপুরে আটক ১৮, বহিষ্কার ১৮

গত ৮ ডিসম্বের সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের ১৮ জেলায় একযোগে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম ধাপের এ পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন করেছিলেন ৩ লাখ ৬০ হাজার ৬৯৭ জন চাকরিপ্রার্থী। তবে কতজন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন, তা এখনো জানায়নি অধিদপ্তর।

এ পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে ১২৪ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের মধ্যে রংপুর বিভাগের ৯৬ জন এবং বরিশাল বিভাগের ২৮ জন। ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে ডিজিটাল জালিয়াতির অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

আরও পড়ুন: কার্ডের মধ্যে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসসহ আটক ৩৫

এএএইচ/এমকেআর/জেআইএম