জার্মানির সাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যের নাগরিকত্বের জন্য কেউ আবেদন করলে তাকে ইসরায়েলের অস্তিত্বের অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়ার বাধ্যবাধকতা চালু করা হয়েছে। এখন দেশটির অন্য রাজ্যগুলোতেও এই নিয়ম চালুর বিষয়ে আলোচনা চলছে।
Advertisement
নভেম্বরের শেষে আলেন্সবাখ নামে একটি গবেষণা সংস্থার জরিপে অংশ নেওয়াদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ ইসরায়েলের প্রতি জার্মানির ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতার পক্ষে মত দিয়েছে। তাছাড়া হামাসকে ধ্বংসে ইসরায়েলের বর্তমান অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে ৩৫ শতাংশ। অন্যদিকে, ইসরায়েলের সংযম দেখানোর পক্ষে মত দিয়েছে ৩৮ শতাংশ।
পূর্ব জার্মানির রাজ্য সাক্সনি-আনহাল্ট বিদেশিদের নাগরিকত্ব পেতে হলে আবেদনকারীকে লিখিতভাবে নিশ্চিত করতে হবে যে তিনি ইসরায়েলের অস্তিত্বের অধিকার স্বীকার করেন ও রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের অস্তিত্বের বিপক্ষে যে কোনো মতামতের নিন্দা জানান।
রাজ্যটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তামারা জিশাং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে এই নির্দেশনা কার্যকর করতে বলেছেন। এমনকি, তিনি বাকি ১৫টি রাজ্যেও এই নিয়ম চালুর আহ্বান জানিয়েছেন।
Advertisement
নাগরিকত্বের সিদ্ধান্ত রাজ্যের অধীনে
জার্মানির নাগরিকত্ব আইন কেন্দ্রীয়ভাবে নির্ধারিত হলেও, এর বাস্তবায়ন ১৬টি রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে। নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে ইসরায়েল সংক্রান্ত একই ধরনের শর্ত আরোপের প্রস্তাব রয়েছে জার্মান পার্লামেন্ট বুন্ডেসটাগেও। সেখানে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে সারা জার্মানিতেই নিয়মটি কার্যকর হবে।
জিশাং ডয়চে ভেলেকে জানান, ইসরায়েলের উপর গুরুত্বারোপ কোনো চাপ নয় বরং ইহুদিদের প্রতি ঘৃণা ও ইহুদিবিদ্বেষ বাদ দিয়ে মানুষের মর্যাদা ও স্বাধীনতার অধিকার তুলে ধরার প্রচেষ্টা।
সাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যের নতুন ডিক্রি ও ফেডারেল পর্যায়ে এ নিয়ে আলোচনা, দুই ক্ষেত্রেই বিষয়টিকে সামনে এনেছে মধ্য-ডানপন্থি খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দল সিডিইউ। ক্ষমতাসীনেরাসহ অন্য দলগুলোরও এতে সমর্থন রয়েছে।
Advertisement
তবে অ্যান্টি সেমিটিজম বা ইহুদি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই উদ্যোগ কতটা কাজে আসবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে তিন দলীয় জোট সরকার। বরং সাক্সনি-আনহাল্টের পদক্ষেপ বিদম্যান অস্থির পরিস্থিতিকে অপ্রয়োজনীয় মেরুকরণের দিকে ঠেলে দেবে বলে আশঙ্কা তাদের। কিন্তু জিশাং এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করে বলেছেন, এটি তার রাজ্যে ইহুদিদের জীবনের ধারণের সুযোগ করে দেওয়ার একটি উপায়।
বিদেশিদের লক্ষ্য করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও ইহুদিসহ জার্মানির অন্যান্য সংখ্যালঘুদের প্রতি বড় হুমকি মোকাবিলায় তা কাজে আসবে কি না এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কেননা, জার্মানিতে অপরাধের নিয়মিত পরিসংখ্যান বলছে, স্থানীয় শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের কারণে সৃষ্ট হুমকি বিদেশিদের চেয়ে অনেক বেশি।
সাক্সনি-আনহাল্টেই ২০১৯ সালে সিনাগগে হামলায় দুইজন নিহত হন। হামলাকারী ছিলেন একজন উগ্র ডানপন্থি জার্মান। ২০২০ সালে তার যাবজ্জীবন সাজা হয়।
প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ না করাসহ নানা কারণে জার্মানিতে বছরে দুই হাজারের বেশি নাগরিকত্বের আবেদন বাতিল হয়। সাক্সনি-আনহাল্টে এরই মধ্যে নাগরিকত্বের বিপুল আবেদন জমা রয়েছে। রাজ্যের কোনো কোনো জায়গায় আবেদন প্রক্রিয়া শেষ করতে দুই বছর বা তারও বেশি লাগে। অবশ্য এমন দেরির ঘটনা এখন পুরো জার্মানিতে।
জার্মানির জাতীয় স্বার্থ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হলোকাস্টে জার্মানির তৎকালীন নাৎসি সরকার ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করে। তার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে দেওয়া ভাষণে জার্মানির তৎকালীন চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ইসরায়েলের নিরাপত্তাকে জার্মানির জাতীয় স্বার্থ বলে ঘোষণা দেন। সাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জিশাং মনে করেন, নাগরিকত্বের শর্তের বিষয়ে তাদের নতুন সিদ্ধান্ত জার্মানির সেই অবস্থানেরই বহিঃপ্রকাশ।
জার্মান সরকারের নীতিনির্ধারকরা বরাবরই ইসরায়েলের প্রতি জার্মানির ঘোষিত দায়িত্বের সমর্থন করে। ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১২০০ জন নিহতের ঘটনার পর বর্তমান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস আরও জোরালোভাবে একাধিকবার এই প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। তবে এ বিষয়ে জার্মানির জনগণের মধ্যে এখনো বিভক্তি রয়েছে।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে
এসএএইচ