একুশে বইমেলা

সুলতানা কামাল খুকীকে নিয়ে স্কুলছাত্রী শিফার বই

তখন ষাটের দশক। সামাজিক বিধি-নিষেধ এবং হাজারো বাধা উপেক্ষা করে আমাদের ক্রীড়াঙ্গনকে আলোকিত করেছিলেন এক অদম্য নারী। এই অদম্য নারীর অবদান আমাদের ক্রীড়াঙ্গনে সীমাহীন। তিনি আমাদের ক্রীড়াঙ্গনকে পৌঁছে দিয়েছিলেন অসামান্য উচ্চতায়। বিশেষ করে নারী ক্রীড়াবিদদের কাছে তিনি ছিলেন অনুপ্রেরণা। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম পদক জয় করেছিলেন। ক্রীড়াজীবনের পাশাপাশি শিক্ষাজীবনেও সফল ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। সেই অদম্য নারীর নাম ‘সুলতানা আহমেদ খুকী’।

Advertisement

অবশ্য পরে তিনি ‘সুলতানা কামাল খুকী’ নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। কারণ তাঁর ছিল আরও একটি পরিচয়। বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামালের স্ত্রী ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুলাই সুলতানা কামাল খুকী ও শেখ কামাল বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হোন। কিন্তু নির্মম সত্য হচ্ছে তাঁদের বিবাহজীবন ছিল মাত্র এক মাসের। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেটে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শহীদ হয়েছিলেন শেখ কামাল এবং সুলতানা কামাল খুকী। আজ সুলতানা কামাল খুকীর ৭১তম জন্মদিন। ১৯৫২ সালের ১০ ডিসেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

আমাদের দুর্ভাগ্য সুলতানা কামাল খুকী নামটি এই প্রজন্মের কাছে অপরিচিত। তাঁর মৃত্যুর ৪৮ বছর পরও আমরা তাঁর আদর্শ জীবন তুলে ধরতে পারিনি। কিন্তু তাই বলে সুলতানা কামাল খুকীর আদর্শ জীবন একেবারেই হারিয়ে যায়নি। সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা এই নারীর আদর্শ জীবন নিয়ে ‘দুর্দম্য সুলতানা কামাল খুকী’ নামে গুরুত্বপূর্ণ একটি বই লিখেছেন আরাবী বিনতে শফিক (শিফা)। বইটি তিনি বেশ সুনিপুণভাবেই লিখেছেন। মেধাবী এই লেখক সুলতানা কামাল খুকীর জীবন বিশ্লেষণ করে তাঁর পূর্ণাঙ্গ জীবনগল্প তুলে ধরেছেন।

উন্নতমানের কাগজে বাংলা ও ইংরেজিসহ বইটি ব্যতিক্রমী ও চমৎকার। বইটি পড়লে শুধু যে অদম্য সুলতানা কামালের জীবনগল্প জানা যাবে, এমন নয়। বইয়ে উঠে এসেছে স্বাধীনতার আগে এবং পরের ক্রীড়াঙ্গন থেকে শুরু করে অনেক বিষয়, নিজেকে প্রগতিশীল ও আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে বইটি সবার পড়া উচিত। আশ্চর্যের কথা হচ্ছে বইটির লেখক ক্লাস সেভেনের ছাত্রী। তার লেখা বই পড়ে বোঝার উপায় নেই যে, বইটি কোনো খুদে লেখকের লেখা, এমনই পরিণত তাঁর লেখা। শিফা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময়ই ‘দুর্দম্য সুলতানা কামাল খুকী’ বইটি লেখার কাজ শুরু করে। প্রায় একবছর ধরে গবেষণা, সুলতানা কামাল খুকীর পরিবার ও পরিচিতদের কাছ থেকে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করার পর বইটি প্রকাশিত হয়।

Advertisement

বইটি প্রকাশিত হয়েছে জ্ঞানকোষ প্রকাশনী থেকে। ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট বাংলা একাডেমিতে ‘দুর্দম্য সুলতানা কামাল খুকী’ বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি, বাংলা একাডেমির সভাপতি ও কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আরমা দত্ত এমপি এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।

লেখক আরাবী বিনতে শফিকের (শিফা) বইয়ের সংখ্যা তিনটি। লেখালেখির পাশাপাশি শিফা একজন প্রোগ্রামারও। ক্লাস থ্রিতে পড়ার সময়ই অ্যাপ নির্মাণ করে। বর্তমানে তার নির্মাণ করা অ্যাপের সংখ্যা দুটি—‘এক পলকে শেখ হাসিনা’ ও ‘অদম্য শেখ রাসেল’। অদম্য শেখ রাসেল অ্যাপটি শেখ রাসেলকে নিয়ে নির্মিত প্রথম অ্যাপ। অ্যাপটি আইসিটি ডিভিশনের অ্যাকাউন্টে গুগল প্লে স্টোরে আছে। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রকাশিত হয় শিফার প্রথম বই ‘এক পলকে শেখ হাসিনা’। শিফার লেখা প্রথম বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বইটি হাওর অঞ্চল এবং পথশিশুসহ প্রায় সারাদেশে পৌঁছে দিয়েছে নিজ অর্থে।

শেখ রাসেল দিবস ২০২২ উপলক্ষে ‘অদম্য শেখ রাসেল’ অ্যাপের আলোকে প্রকাশিত হয়েছে ‘অদম্য শেখ রাসেল’ বই । অদম্য শেখ রাসেল বইটি যৌথভাবে মোড়ক উন্মোচন করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। এছাড়া আইসিটি খাতে অবদান রাখায় শিফা অর্জন করেছে বিভিন্ন পুরস্কার। প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের পক্ষ থেকে পুরস্কার, আইসিটি ডিভিশন পুরস্কারসহ আরও পুরস্কার লাভ করেছে। করোনার সময় যে শিশুরা ডিভাইসের অভাবে অনলাইন ক্লাস করতে পারেনি, শিফা তার পুরস্কারের অর্থ দিয়ে তাদের মাঝে ডিভাইস বিতরণ করেছে।

‘দুর্দম্য সুলতানা কামাল খুকী’ বইটি লেখার মাধ্যমে আরাবী বিনতে শফিক (শিফা) এক সাহসী অদম্য নারীকে এই প্রজন্মের কাছে তুলে ধরেছে। অবশ্যই শিফার এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তাছাড়া বইটি সুলতানা কামাল খুকীকে নিয়ে লেখা প্রথম বই। বিশিষ্টজনদের মতে, বইটি সুলতানা কামাল খুকী সম্পর্কে জানতে অবশ্যই সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

Advertisement

এসইউ/জেআইএম