পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় ২৯তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব চলছে। গত মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে এই চলচ্চিত্র উৎসব। চলবে আগামী ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। কলকাতা ২৯তম চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের এক মাত্র ছবি ‘নোনা পানি’।
Advertisement
পরিচালক সৈয়দা সৈয়দা নিগার বানু নির্মিত ‘নোনা পানি’ ছবিটি ‘এশিয়ান সিলেক্টে’ মনোনিত হয়েছে। বাংলাদেশের এই ছবি চার দিন দেখানো হবে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে।
আরও পড়ুন: কলকাতায় অনুষ্ঠিত হলো ইন্দো-বাংলা নোয়াখালী উৎসব
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) ছিল কলকাতার নন্দন চত্বরে রবীন্দ্র সদনে ‘নোনা পানি’ দেখানোর প্রথম দিন। এদিন দর্শকদের ভিড় ছিল দেখার মতো। নোনা পানি দেখার জন্য নন্দন চত্বরে রবীন্দ্র সদন প্রেক্ষাগৃহের সামনে সব বয়সের সিনেমাপ্রেমী লোকজনের লম্বা লাইন ছিল দেখার মতো। এমন দৃশ্য বহুকাল দেখেনি এই শহর। ‘নোন পানি’ ছবি দেখার জন্য প্রথম দিনে এত মাতামাতি দেখে অবাক কলকাতাবাসী।
Advertisement
কলকাতা ২৯ তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘নোনা পানি’র সাফল্য দেখে পরিচালক সৈয়দা নীগার বানু বলেন, একটা দেশে যখন বেশিরভাগ উন্নয়ন ঘটে সেটা হয় শহর কেন্দ্রিক। বিশেষ করে বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ মানুষ গ্ৰামে আছে। আমার সিনেমাটা তাদের নিয়ে যাদের গল্প মানুষের জীবনে এসে থেমে গেছে। কিন্তু তাদের জীবনতো চলমান। তাদের জীবন সংগ্ৰাম আছে, হাসি, কান্না, দুঃখ, সবকিছুই আছে। যা আমাদের দেশের সিনেমায় খুব কম দেখতে পাই।
তিনি আরও বলেন, সিনেমা শুধু বিনোদন নয় সিনেমা তার থেকেও বেশি কিছু। আমার মনে হয় এই জাতীয় প্রান্তীক মানুষের গল্প আমাদের জানা দরকার। এরা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে আছে। এরা শুধু বাংলাদেশে নয় এই ধরনের মানুষ ভারতেও আছে।
দর্শকদের উন্মাদনা দেখে সৈয়দা নীগার বানু বলেন, কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘নোনা পানি’র চারটি প্রদর্শন হচ্ছে। এটা আমার কাছে বড় পাওনা এবং গর্বের। ভালো ছবি দেখার দর্শক মানেই কলকাতার মানুষ। আমি বাইরে দাঁড়িয়ে যখন দেখলাম এত মানুষ সত্যি কথা আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে তারা ‘নোনা পানি’ দেখার জন্য এসেছে এবং দূর দুরান্ত থেকে লোক আসছে নোনা পানি দেখার জন্য। যাদেরকে আমি চিনিও না তারা বাংলাদেশের সিনেমা দেখতে এসছে।
সৈয়দা নীগার বানু আরও জানান, তিনি ২০০৫ সাল থেকে যুক্ত কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সঙ্গে। খুলনার প্রেক্ষাগৃহে নোনা পানির ছবির পাঁচশ আসনে দর্শক হয়েছিল ৮০০। তবে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে রবীন্দ্রসদন প্রেক্ষাগৃহে নোনা পানির দর্শক আসন হাউস ফুল বলে জানান পরিচালক সৈয়দা নীগার বানু।
Advertisement
নোনা পানি দেখতে আসা কলকাতার বেহালার বাসিন্দা সুনিল মুখার্জী বলেন, নোনা পানি ছবিটি ভালো হয়েছে। তবে পরিচালক ছবির শুরুতে যেটা বললেন, ছবিটা তৈরি করতে দশ বছর সময় লেগেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের খুলনা জেলা নিয়ে এই ছবি। এই ছবিটা করেছে প্রতিবাদ জানিয়ে তবে আমি ছবিটি দেখে মনে হলো সেই রকম কিছুই নেই।
তবে শুধু বাংলাদেশি সিনেমা নয় সব ধরনের সিনেমা দেখার জন্যই নন্দন চত্বরে গা ভাসিয়েছে শহরবাসী। ৮ দিনের এই উৎসবে ৩৯টি দেশের মোট ২১৯টি ছবি দেখানো হবে। এর মধ্যে রয়েছে ১৬৯টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি এবং ৫০টি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি ও তথ্যচিত্র। এর মধ্যে বিদেশি ছবির সংখ্যা ৬৩টি।
নন্দন-১, ২ এবং ৩, শিশির মঞ্চ, প্রিয়া, নজরুল তীর্থ-১, ২, রবীন্দ্রসদন, নবীনা, সাউথ সিটি, মিনার, বিজলী, মেনকা, অশোকা, স্টার, রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবন, কোয়েস্ট মলসহ কলকাতার ২৩টি পেক্ষাগৃহে এই ছবিগুলো প্রদর্শিত হবে।
উদ্বোধনী ছবি হিসেবে দেখানো হয়েছে উত্তম কুমার, তনুজা, তরুন কুমার, লিলি চক্রবর্তী অভিনীত বাংলা ছবি ‘দেয়া নেয়া’। এবারের উৎসবে ফোকাস কান্ট্রি স্পেন এবং স্পেশাল ফোকাস কান্ট্রির মর্যাদা দেওয়া হয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে।
আরও পড়ুন: কলকাতায় বাংলাদেশ বইমেলার তৃতীয় দিনে ‘মৈত্রী দিবস’ উদযাপিত
কলকাতা ২৯তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশ থেকে ঠাঁই পেয়েছে মাত্র একটি ছবি। পরিচালক সৈয়দা নীগার বানুর ‘নোনা পানি’ এশিয়ান সিলেক্টেড বিভাগে স্থান পেয়েছে। এ বছরের ক্যাচ লাইন বিশ্ব সিনেমার বঙ্গ ভ্রমণ।
ডিডি/টিটিএন