সক্রিয় রাজনীতিতে এসে অর্থ-সম্পদ বেড়েছে কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসনের সংসদ সদস্য আফজাল হোসেনের। বিগত ১৫ বছরে অর্থ ও সহায়-সম্পদের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। কিশোরগঞ্জ জেলার ছয়টি নির্বাচনী আসনের সংসদ সদস্যদের মধ্যে তিনিও আলোচিত-সমালোচিত।
Advertisement
বিশেষ করে এক সময়ের মুসলিম লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) দুর্ভেদ্য দুর্গ হিসাবে পরিচিত কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসন থেকে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় নৌকা প্রতীকের মনোনয়নে অনেকটা তাক লাগিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হন তিনি। এর আগে এ আসন থেকে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান নির্বাচন করেও পরাজিত হয়েছেন।
পরবর্তীতে ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে সমর্থ হন আফজাল হোসেন। এবারও আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ দলীয় নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন তিনি। সংসদ সদস্য আফজাল হোসেন বর্তমানে বাজিতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
বিগত ১৫ বছরে অর্থ-সম্পদে ফুলে ফেঁপে উঠেছেন সংসদ সদস্য মো. আফজাল হোসেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের হলফনামা ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
Advertisement
কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. আফজাল হোসেনের পেশা ব্যবসা। রাজধানীর ফুলবাড়ীয়া সিটি সুপার মার্কেটে আফজাল সুজ লিমিটেড নামে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। তার সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি। ২০০৮ সালের হলফনামায় মো. আফজাল হোসেনের একমাত্র আয়ের উৎস ছিল ব্যবসা। এ খাত থেকে তার বাৎসরিক আয় ছিল ১২ লাখ টাকা। এছাড়া তার ওপর নির্ভরশীলদের আয় ছিল আড়াই লাখ টাকা।
তবে ১৫ বছর পর তার আয়-ব্যয়ের হিসাবে ব্যবসা ছাড়াও যুক্ত হয়েছে বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট ও দোকান ভাড়া এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আফজাল সুজ লিমিটেড থেকে ও সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানী ভাতা। এসব খাত থেকে এখন তার আসে ৫১ লাখ ৮ হাজার ২৭৫ টাকা। এরমধ্যে তার বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান ভাড়া থেকেই এখন ২০ লাখ ১৯ হাজার টাকা আয় আসে। ব্যবসা থেকেই আয় হয় ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আফজাল সুজ লিমিটেড থেকে তিনি সম্মানীভাতা পান ১৮ লাখ টাকা। সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানী পান ২৩ লাখ ২১ হাজার ২৭৫ টাকা।
২০০৮ সালে মো. আফজাল হোসেনের নিজের নামে মাত্র নগদ ৯ লাখ ৯৬ হাজার ৮৬০ টাকা ছিল। এখন তার নগদ টাকার পরিমাণ চার কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার ৬১১ টাকা। ২০০৮ সালে মো. আফজাল হোসেনের স্ত্রীর নগদ টাকা ছিল ৯ লাখ ৩৪ হাজার ৪০০ টাকা। এখন নগদ টাকা আছে এক কোটি ৪০ লাখ ৮৭ হাজার ৭৭৬ টাকা।
২০০৮ সালে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মো. আফজাল হোসেনের জমাকৃত টাকার পরিমাণ ছিল ছয় লাখ ১০ হাজার টাকা। এখন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মো. আফজাল হোসেনের নিজের নামে ৬২ লাখ ২৭৩ টাকা জমা আছে। ২০০৮ সালে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মো. আফজাল হোসেনের স্ত্রীর নামে জমাকৃত টাকার পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
Advertisement
এখন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্ত্রীর নামে ২ লাখ ২ হাজার ৫৪৬ টাকা জমা রয়েছে। ২০০৮ সালে আফজাল হোসেনের নিজের নামে মোট এক লাখ টাকার বন্ড, ঋণপত্র ও শেয়ার থাকলেও এখন তার নিজের নামে আফজাল সুজ লিমিটেড, এনেঙো লিমিটেড, ফেমাস সুজ লিমিটেড, এসিএমই পেসটিসাইড লিমিটেড ও বিভিন্ন কোম্পানির মোট ৩ কোটি ২২ লাখ ৯৯ হাজার ৮৯৮ টাকার শেয়ার এবং স্ত্রীর নামে মোট ৩৬ লাখ ৭৭ হাজার ৬ টাকার শেয়ার আছে।
২০০৮ সালে পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ হিসেবে আফজাল হোসেনের নিজের নামে ৮ লাখ টাকা থাকলেও এখন নিজের নামে মোট ২ কোটি ৬৮ লাখ ৬৩ হাজার ৯২২ টাকা এবং স্ত্রীর নামে মোট ১ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা আছে। তবে মো. আফজাল হোসেনের নিজের নামে তিন লাখ টাকার এবং স্ত্রীর নামে ৩০ হাজার টাকার সোনা ও অন্য অলঙ্কারাদি ২০০৮ সালে যেমন ছিল এখনো তেমনই আছে।
বর্তমানে ব্যবসা মূলধন হিসেবে আফজাল হোসেনের নিজের নামে ৫৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা ও স্ত্রীর নামে এক কোটি ৭৭ লাখ ২ হাজার ২৫০ টাকা রয়েছে। ২০০৮ সালে কেবল আফজাল হোসেনের নিজের নামে ৭৩ লাখ ৪৯ হাজার ৭৩২ টাকা ব্যবসা পুঁজি ছিল। মো. আফজাল হোসেনের স্থাবর সম্পদের মধ্যে ২০০৮ সালে ৪ একর কৃষি জমি, যৌথ মালিকানায় ২ একর কৃষি জমি, ৫ কাঠা অকৃষি জমি, ১২টি দোকান ও ৫তলা একটি বাড়ি এবং স্ত্রীর নামে পাঁচটি দোকান ও দুটি অ্যাপার্টমেন্ট ছিল।
২০২৩ সালে এসে তার স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে ৬৯৯.৫ শতাংশ কৃষি জমি ও ৬৪.৯৫ শতাংশ অকৃষি জমি এবং স্ত্রীর নামে ৯৮ শতাংশ অকৃষি জমি রয়েছে। তার নিজের নামে ২৪টি দোকান ও একটি মার্কেট এবং স্ত্রীর নামে ১৭টি দোকান রয়েছে। বাজিতপুরে তার গ্রামে একটি বাড়ি, ২টি ফ্ল্যাট এবং রাজধানীর আগামসি লেনে পাঁচতলা একটি বাড়ি, বনশ্রীতে ছয়তলা একটি বাড়ি ও বংশালে একটি পুরাতন বাড়ি রয়েছে। তার স্ত্রীর নামেও ২টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ২০০৮ সালে মো. আফজাল হোসেনের ১০ লাখ ৯৪ হাজার ৪৪৫ টাকা ব্যাংক ঋণ থাকলেও এখন তার কোনো ব্যাংক ঋণ নেই। তবে মো. আফজাল হোসেন দোকানের অগ্রিম হিসেবে ৫৩ লাখ টাকা দায় হিসেবে দেখিয়েছেন হলফনামায়।
এসকে রাসেল/এসজে/এএসএম