সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করছে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে একই মঞ্চে নেই জামায়াত। যদিও একই দাবিতে নিজেদের মতো করেই রাজপথে সক্রিয় দলটি। তবে তফসিল ঘোষণার পর ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়টি ততই আলোচনায় আসছে। দল দুটির মধ্যে সম্পর্কের নতুন রসায়ন চলছে বলেও জানা গেছে।
Advertisement
এতদিন পৃথকভাবে আন্দোলন করলেও এখন মাঠে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে জামায়াতকে কাছে পেতে চাইছে বিএনপি। যদিও বিষয়টি নিয়ে দল দুটির নেতারা এখনো বেশ কৌশলী অবস্থানে।
আরও পড়ুন: দুঃসময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মিত্ররা, তবুও সতর্ক বিএনপি
পুলিশের অনুমতি নিয়ে এতদিন শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করে আসছিল বিএনপি। তবে ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর গত এক মাসের বেশি সময় ধরে দফায় দফায় হরতাল-অবরোধ পালন করছে দলটি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেফতার অভিযান এবং বিএনপি নেতাদের আত্মগোপন কৌশলের জন্য দলটির কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার ঝটিকা বিক্ষোভ মিছিলের ওপর ভর করে চলছে এই কর্মসূচি।
Advertisement
নির্বাচন ঠেকাতে মাঠের আন্দোলনের বিকল্প দেখছে না বিএনপি। আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচন টার্গেট করে দুই-তিন ধাপে মাঠে থাকার কৌশল নিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। মাঠের আন্দোলন এবং আন্তর্জাতিক চাপ দুই মিলিয়ে ইতিবাচক কিছু হবে বলেই বিশ্বাস তাদের।
তবে নির্বাচন ঠেকাতে মাঠের আন্দোলনের বিকল্প দেখছে না বিএনপি। আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচন টার্গেট করে দুই-তিন ধাপে মাঠে থাকার কৌশল নিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। মাঠের আন্দোলন এবং আন্তর্জাতিক চাপ দুই মিলিয়ে ইতিবাচক কিছু হবে বলেই বিশ্বাস তাদের। তাই মাঠের আন্দোলন জমাতে সব পর্যায়ের মতামত গ্রহণ করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। রাজপথে শক্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে জামায়াতকে আরও কাছে টানার তাগিদ রয়েছে বিএনপিতে।
আরও পড়ুন: কর্মসূচি নিয়ে ‘সাপলুডু’ খেলায় বিএনপি-জামায়াত
জামায়াত নেতারা মনে করছেন, মাঠের আন্দোলন জোরালো করতে হলে জামায়াতের বিকল্প নেই। চলমান আন্দোলনে বিএনপির পাশাপাশি থাকলেও সর্বশক্তি নিয়ে নামার আগে চূড়ান্ত কিছু হিসাব-নিকাশের ব্যাপার রয়েছে। বিশেষ করে ২০১৪-১৫ সালের আন্দোলনে বিএনপিকে নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন জায়ামাত নেতারা। তাদের দাবি, সে সময় জামায়াত নেতাকর্মীরা মাঠে থাকলেও বিএনপি নেতাকর্মীরা নামেননি। ফলে আন্দোলনে নেমে তাদের অনেক নেতাকর্মী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সে কারণে এইবার চূড়ান্ত আন্দোলনে নামার আগে কিছু বিষয় স্পষ্ট হতে চান তারা।
Advertisement
জামায়াত নেতারা চাইছেন, কয়েকটি বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা হওয়া দরকার। প্রথমত, আন্দোলনের মাঝপথ থেকে যেন তারা সরে না দাঁড়ায় এই প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে। পাশাপাশি আন্দোলনের সিদ্ধান্তে বাম দলগুলো বিএনপির কাছে যেন ততটা গুরুত্ব না পায় সেটাও নিশ্চিত হতে চায় জামায়াত। এছাড়া আন্দোলন সফল হলে আসন এবং মন্ত্রিসভা বণ্টন নিয়ে আগে থেকেই সবকিছু চূড়ান্ত করে রাখতে চায় দলটি।
আরও পড়ুন: বিএনপির ‘ভুল’ ভাঙার অপেক্ষায় জামায়াত
সূত্রমতে, সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে বৈঠক করেন জামায়াত নেতারা। ওই বৈঠকে জামায়াত নেতারা নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। বিএনপিও বিষয়টি বিবেচনায় রাখছে বলে জানা গেছে।
জামায়াত নেতারা চাইছেন, কয়েকটি বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা হওয়া দরকার। প্রথমত, আন্দোলনের মাঝপথ থেকে যেন তারা সরে না দাঁড়ায় এই প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে। পাশাপাশি আন্দোলনের সিদ্ধান্তে বাম দলগুলো বিএনপির কাছে যেন ততটা গুরুত্ব না পায় সেটাও নিশ্চিত হতে চায় জামায়াত।
এসব বিষয়ে কথা হয় রমনা থানা জামায়াতের সেক্রেটারি আতিকুর রহমানের সঙ্গে। জাগো নিউজকে আতিকুর বলেন, ‘অবশ্যই জামায়াতের সঙ্গে কয়েকটি বিষয়ে বিএনপির কমিটমেন্টে আসতে হবে। বিএনপি এগিয়ে আসলে জামায়াতের দিক দিয়ে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই।’
তিনি বলেন, ‘অতীতে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে রায় দেওয়াসহ একটা কঠিন সময়ে বিএনপিকে আমরা পাশে পায়নি। ন্যূনতম কোনো রাজনৈতিক সৌজন্যবোধ দেখাননি বিএনপি নেতারা।’
আরও পড়ুন: ‘আমরা একটি বিপজ্জনক ফাঁদের ভেতরে পড়ে যাচ্ছি’
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আজীজুর রহমান বলেন, ‘মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার প্রশ্নে জামায়াত সমসময় অগ্রসর ছিল। কারণ, সবকিছুর মূলে হচ্ছে গণতন্ত্র। ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ না থাকলে সেখানে গণতন্ত্র থাকে না। সেটি এখন বাংলাদেশে বিরাজমান।’
তিনি বলেন, ‘দলের সিনিয়র নেতারা বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করে থাকেন। তাই বিএনপিসহ যাদের সঙ্গে আমাদের নেতাদের বৈঠক হয় সেখানে অবশ্যই চাওয়া পাওয়া নিয়ে আলোচনা হতেই পারে।’
আরও পড়ুন: তারেকের সঙ্গে মতের ‘অমিল’, নতুন কর্মসূচি চান শীর্ষ নেতারা
কথা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমানের সঙ্গে। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘যারা মাঠে আন্দোলন করছে তারাই গণতান্ত্রিক শক্তি। আন্দোলন জোরালো করতে নানা কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন নেতারা।’ তবে কৌশলে জামায়াতের বিষয়টি এড়িয়ে যান সেলিমা রহমান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘জামায়াত তো বিএনপির মতোই আন্দোলন করছে। এর বাইরে আর কিছু হলে সেটা ভবিষ্যতে জানতে পারবেন।’
কেএইচ/কেএসআর/এএসএম