#স্ত্রীর নামে পাঁচতলা ভবন, ঢাকার কাফরুলে অভিজাত ফ্ল্যাট#এমপির আয় ১৫ হাজার থেকে বেড়ে ৩২ লাখ ৬৮ হাজার টাকা#রয়েছে টয়োটা প্রাডো ও টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি
Advertisement
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। তিনি আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার নৌকার মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হন। ওই সময় নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী, তার মোট বার্ষিক আয় ছিল মাত্র ১৫ হাজার টাকা। স্ত্রীর ৩৯ লাখ টাকার বেশি নগদ টাকা থাকলেও কোনো আয় ছিল না। ছিল না কোনো স্থাবর সম্পত্তিও।
কিন্তু ১০ বছরের ব্যবধানে স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই আয় ও সম্পদ বেড়েছে। স্ত্রীর নামে পাঁচতলা ভবনের পাশাপাশি ঢাকার অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাট রয়েছে। মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর সেই ১৫ হাজার টাকা বার্ষিক আয় ১০ বছরের ব্যবধানে বেড়ে হয়েছে ৩২ লাখ ৬৮ হাজার ৪৬৫ টাকা। নিজের কোনো ঋণ না থাকলেও স্ত্রীর নামে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসিতে ২০ লাখ ৬ হাজার ৪৪ টাকার ঋণস্থিতি রয়েছে।
২০১৪ সালের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় নির্বাচন কমিশনে দেওয়া ২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর তারিখে এবং দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য গত ২৯ নভেম্বর জমা দেওয়া হলফনামা পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
Advertisement
আরও পড়ুন: এমপি মোস্তাফিজের গৃহিণী স্ত্রী পাঁচ বছরেই কোটিপতি!
২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বরের হলফনামায় মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী উল্লেখ করেছিলেন, শুধু কৃষিখাতে তার বছরে ১৫ হাজার টাকা আয় হতো। তবে ওই সময়ে বেসরকারি চাকরির কথা হলফনামায় উল্লেখ করলেও কোনো আয় দেখাননি তিনি। তখন স্ত্রী কিংবা নির্ভরশীলদের নামেও কোনো আয় দেখানো হয়নি। ওই হলফনামা হিসেবে মোস্তাফিজুর রহমানের তখন হাতে নগদ টাকা ছিল ৪ লাখ ৭০ হাজার। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল ২ লাখ ৪০ হাজার ৬৫৭ টাকা। ৪০ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণ ও মূল্যবান ধাতু ছিল। একই পরিমাণ ইলেকট্রনিক সামগ্রীসহ ১০ হাজার টাকা মূল্যের আসবাবপত্র ছিল।
১০ বছর আগের সেই একই হলফনামায় দেখা যায়, মোস্তাফিজপত্নীর কোনো আয় না থাকলেও তার হাতে নগদ ৩৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা ছিল। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমার পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা। ২০ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণ ও মূল্যবান ধাতু ছিল। পাশাপাশি ৩০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী এবং ১০ হাজার টাকা মূল্যের আসবাবপত্রের মালিক ছিলেন তিনি।
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এমপি মোস্তাফিজুর রহমান
Advertisement
তখন মোস্তাফিজুর রহমানের ৪ একর কৃষিজমি ছিল। যা তিনি পৈত্রিকসূত্রে পেয়েছেন বলে হলফনামায় উল্লেখ করেন। পাশাপাশি ঢাকার রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) থেকে পাওয়া ৩ কাটার জমি ছিল। অর্জনকালীন এ জমির মূল্য ছিল ৬ লাখ ৬৬ হাজার ৪০০ টাকা। তখন স্বামী-স্ত্রীর আর কোনো স্থাবর সম্পত্তি ছিল না। ছিল না কোনো ঋণও।
২০২৩ সালের ২৯ নভেম্বরের হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিভিন্ন খাতে বর্তমানে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বার্ষিক আয় ৩২ লাখ ৬৮ হাজার ৪৬৫ টাকা। এরমধ্যে বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান ভাড়া থেকে বছরে ৬৪ হাজার টাকা, সংসদ সদস্য হিসেবে পারিতোষিক হিসেবে ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা, প্রভাতী ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের পরামর্শকের চাকরি থেকে ৩ লাখ ৮৫ হাজার ২৯৬ টাকা ৬৭ পয়সা আয় হয় এ সংসদ সদস্যের। পাশাপাশি অন্যান্য খাতের একটিতে ১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা এবং কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত আয় দেখানো হয় ১৯ লাখ ৭৩ হাজার ১৬৮ টাকা ৩৩ পয়সা। আগে কৃষিখাতে আয় থাকলেও এখন আর নেই বলে উল্লেখ করা হয়।
একই সময়ে মোস্তাফিজুর রহমানের স্ত্রীর আয় দেখানো হয় ৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। এরমধ্যে বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান ভাড়া হিসেবে বছরে পান ৬ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং অন্যান্য খাতে আয় ২ লাখ ২০ হাজার টাকা।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বর্তমানে ৩৭ লাখ ১৫ হাজার ৭৭৪ টাকা রয়েছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ২০ লাখ টাকা। পোস্টাল, সেভিংস, সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানত হিসেবে রয়েছে ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৮৭৫ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে বর্তমানে তার দুটো গাড়ি রয়েছে। এরমধ্যে একটি ৩৭ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের টয়োটা প্রাডো জিপ গাড়ি, অন্যটি ৮৪ লাখ ৭৫ হাজার ৬৫৪ টাকা মূল্যের টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার স্টেশন ওয়াগন রয়েছে।
এবার এই প্রার্থী যে হলফনামা দাখিল করেছেন সেখানে দেখা যায়, ১০ বছর আগের মতোই বর্তমানে ৪০ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণ ও মূল্যবান ধাতু রয়েছে তার। বর্তমানে নিজের নামে কোনো ইলেকট্রনিক সামগ্রী না থাকলেও ২০ হাজার টাকা মূল্যের আসবাবপত্র রয়েছে। তবে স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ কমেছে আগের চেয়ে। বর্তমানে স্ত্রীর হাতে নগদ ৩০ হাজার টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ২০ হাজার ৫৪৮ টাকা, ১০ বছর আগের মতোই মাত্র ২০ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণ ও মূল্যবান ধাতু রয়েছে। স্বামীর মতো স্ত্রীর নিজের নামে কোনো ইলেকট্রনিক সামগ্রী নেই। তবে ১০ হাজার টাকার সেই পুরোনো আসবাবপত্র রয়েছে তারও।
অন্যদিকে আগের মতো পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ৪ একর কৃষি জমি রয়েছে মোস্তাফিজুর রহমানের। আগে রাজউকের ৩ কাটার প্লটের পাশাপাশি নতুন করে আরও ১৪ গন্ডা অকৃষি জমি এবং ৪ কাঠার প্লটের মালিক হয়েছেন তিনি। এই জমিগুলোর সাকুল্যে মূল্য দেখানো হয়েছে ৪৮ হাজার ৩৩৩ টাকা। তবে রাজউকের প্লটটি আগে ৬ লাখ ৬৬ হাজার ৪০০ টাকা উল্লেখ করলেও বর্তমান হলফনামায় তিনি এ প্লটের অর্জনকালীন মূল্য দেখিয়েছেন ১৬ লাখ ৬৬ হাজার ৪০০ টাকা।
একই সঙ্গে হলফনামায় চট্টগ্রামের চকবাজারের চক সুপার মার্কেটের ১৫৫ দশমিক ১৪ বর্গফুটের একটি দোকানের মূল্য দেখিয়েছেন ৫ লাখ টাকা। বাঁশখালীতে পৈত্রিক জমিকে দোতলা বাড়ি করেছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। তবে ওই বাড়ির মূল্য উল্লেখ করা হয়নি হলফনামায়।
১০ বছর আগে এই এমপিপত্নীর কোনো স্থাবর সম্পদ না থাকলেও বর্তমান হলফনামায় পাঁচতলা বিশিষ্ট একটি ভবন দেখানো হয়েছে। যার মূল্য দেখানো হয়েছে ৪২ লাখ ১০ হাজার টাকা। পাশাপাশি ঢাকার কাফরুলে ১৮৭২ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটের মূল্য দেখানো হয়েছে ৬৪ লাখ টাকা। ঋণ নিয়ে এই ফ্ল্যাট কেনার কথা বলা হলেও এরই মধ্যে তিনি ৪৪ লাখ টাকার আসল ঋণ পরিশোধ করেছেন। বর্তমানে তার ঋণস্থিতি রয়েছে ২০ লাখ ৬ হাজার ৪৪ টাকা।
হলফনামায় দেখা যায়, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে আগে কোনো দেওয়ানি কিংবা ফৌজদারি মামলা থাকলেও এবার একটি জিআর মামলার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি সংসদ সদস্য থাকাকালীন নিজের থানায় মামলাটি দায়ের হয়েছিল।
জানা যায়, ২০১৬ সালে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে মারধর করার অভিযোগে বাঁশখালী থানায় মামলাটি দায়ের করেছিলেন ভুক্তভোগী কর্মকর্তা। পরে এ মামলায় পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলে আদালত থেকে তিনি দায়মুক্তি পান বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।
ইকবাল হোসেন/এমকেআর/এএসএম