প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো মোঘল আমলের এক গম্বুজ পীরগঞ্জ জামে মসজিদ। শাহ্ মোহাম্মদ আফতাফ উদ্দিন চিশতি ওরফে আফু শাহ পশ্চিমবঙ্গ থেকে নবগদা পেরিয়ে চুয়াডাঙ্গার ঠাকুরপুর গ্রামে আসেন ইসলাম ধর্ম প্রচার-প্রসারের উদ্দেশ্য। তারই নিদর্শন এই মসজিদ।
Advertisement
বর্তমানে মসজিদটিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। দূর-দূরান্ত থেকে সাধারণ মানুষ নামাজ পড়তে আসেন। মসজিদটি প্রাচীন ও ইসলামিক স্থাপত্য নিদর্শন সমৃদ্ধ। মসজিদটিতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ আছে।
আরও পড়ুন: যে দেশের নেই কোনো রাজধানী
১৬৯৮ সালের দিকে শাহ্ মোহাম্মদ আফতাফ উদ্দিন চিশতি ওরফে আফু শাহ নদীপথে পশ্চিমবঙ্গ থেকে মাথাভাঙ্গা ও নবগঙ্গা বেয়ে চুয়াডাঙ্গার ঠাকুরপুর গ্রামে এসে আস্তানা গাড়েন। তিনি সাধক ছিলেন।
Advertisement
জানা যায়, জ্বিনদের সাহায্য নিয়ে এক রাতেই মসজিদটি নির্মাণ করেন আফু শাহ। অনেকের ধারণা, আফু শাহ অলৌকিক শক্তি দিয়েই মসজিদটি নির্মাণ করেন।
এমনকি একবার খাজনা বাকি হলে তাকে জমিদার দরবারে ডেকে নিয়ে যায় প্রজারা। তিনি অলৌকিকভাবে তাদের আগে পৌঁছে যান জমিদার দরবারে। বিষয়টি রাজা জানার পর জমি দান করেন আফু শাহকে।
আরও পড়ুন: সুইজারল্যান্ডের মতো সৌন্দর্য দেখবেন ভারতে যে ৪ স্থানে
সেখানে এক গম্বুজ মসজিদ নির্মাণ করেন। হাতে তৈরি পাতলা ইট আর চুন-সুড়কির গাথুনিতে তৈরি হয় এক গম্বুজ মসজিদ। মসজিদের ভেতরে দুই কাতারে নামাজ আদায় করা যায়।
Advertisement
মূল কাঠামো অক্ষুন্ন রেখেই বর্তমানে মসজিদটি সংস্কার করে বড় পরিসরে তিন গম্বুজ করা হয়েছে। ১২ বিঘা জমির উপর গড়ে উঠেছে পীরগঞ্জ মসজিদটি। নারীদের নামাজ পড়ারও ব্যবস্থা আছে। সব সুযোগ-সুবিধা আছে। মানুষের দেওয়া অর্থেই পরিচালিত হয়।
প্রতি বৃহস্পতিবার নারী-পুরুষ, শিশুসহ সব বয়সের মানুষরা মসজিদে ছুটে আসেন রোগ-বালাই, বিপদসহ অন্য সমস্য থেকে মুক্তি লাভের আশায়।
আরও পড়ুন: বাই রোডে ভারতের লামাহাট্টা ভ্রমণে কীভাবে যাবেন, খরচ কত?
এই মসজিদে নামাজ আদায়, দোয়া-দরুদ পড়ে প্রার্থনা করলে নাকি মনের বাসনা পূরণ হয় বলে অনেকে পানি ও তেলের বোতল রেখে যান। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষ ছুটে আসেন।
প্রতি বছর ১২ ফাল্গুন মসজিদে বার্ষিক ইছালে সওয়াব অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয়দের ধারণা মসজিদটি রাতে অলৌকিকভাবে নির্মাণ হয়েছে।
কারণ সকালে উঠে মসজিদটি দেখা যায়। আফু শাহ প্রায় ৫০০ বছর আগে ইসলাম ধর্ম প্রচার-প্রসারের উদ্দেশ্য আসেন চুয়াডাঙ্গার ঠাকুরপুর গ্রামে।
আরও পড়ুন: একদিনের জন্য বিয়ে হয় যেখানে
চুয়াডাঙ্গা কুলচারা গ্রামের খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘মরুব্বিদের মুখে শুনেছি এক গম্বুজ পীরগঞ্জ জামে মসজিদটি এক রাতে নির্মাণ হয়েছে। মসজিদটি অনেক সুন্দর। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সব বয়সী মানুষ মসজিদটি দেখতে ছুটে আসেন। মসজিদে আসলে মন জুড়িয়ে যায়।’
মসজিদের পার্শ্ববর্তী বসবাসকারী আনিস বিশ্বাস বলেন, ‘রাতে অলৌকিকভাবে নির্মাণ হয় মসজিদটির এমসটিই শুনেছি। আমাদের পুর্বপুরুষরা মসজিদ দেখভাল করতেন। এখন আমরা করছি।’
খাইরুজ্জামান সেতু বলেন, ‘বহুদূর থেকে মানুষ এই মসজিদে নামাজ পড়তে আসেন। এছাড়া দূর-দূরান্তের মানুষ এখানে এসে বিভিন্ন নিয়ত করেন ও পানি পড়া নিয়ে যান।’
আরও পড়ুন: ভিসার ঝামেলা এড়াতে সঙ্গীকে নিয়ে ঘুরে আসুন এই ৪ দেশে
পীরগঞ্জ জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক তাইজেল মল্লিক বলেন, ‘মসজিদটি স্থানীয়দের দানে চলে। আল্লাহর রহমত আছে এখানে। মানুষ নামাজ পড়তে আসেন।’
পীরগঞ্জ মসজিদটি জেলার ইতিহাসের সাক্ষী। প্রথমে মসজিদটি এক গুম্বুজবিশিষ্ট ছিল। পরে মূল মসজিদের অবকাঠামো ঠিক রেখে বড় করা হয়েছে।
যাতে অনেক মানুষ জামাতে নামাজ পড়ার সুবিধার্তে। নারীদের নামাজ পড়ার পৃথক ব্যবস্থা আছে। দেশ- বিদেশ থেকে অনেক মানুষ আসেন মসজিদ দেখতে ও নামাজ পড়তে।
জেএমএস/জিকেএস