চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে চাষের অন্যতম অনুষঙ্গ পানির স্কিম। কয়েক বছরে ১৮টির মধ্যে ১৪টি স্কিম বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ধান ছাড়াও অন্য ফসল উৎপাদনে বেগ পেতে হচ্ছে কৃষকদের। এছাড়া বাজারমূল্যের চেয়ে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় কৃষিকাজে আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা।
Advertisement
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) সূত্রে জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে ফসল উৎপাদন বাড়াতে ২০১২-২০১৩ ও এর আগে মিরসরাইয়ের ১৬ ইউনিয়ন ও ২ পৌরসভায় মোট ১৯টি পানির স্কীম দেয় বিএডিসি। ১৯টির মধ্যে একটি স্কিম ফেরত আসে। বর্তমানে ১৮টি পানির স্কিমের মধ্যে বন্ধ আছে ১৪টি। চালু আছে মাত্র ৪টি। এগুলোর মধ্যে করেরহাট ইউনিয়নে ২টি, জোরারগঞ্জ ইউনিয়নে একটি ও ধুম ইউনিয়নে একটি পানির চালু আছে। অথচ হিঙ্গুলী ও করেরহাট ইউনিয়নে ১৩টি স্কিম দিয়েছিল বিএডিসি। বন্ধ থাকার কারণ জানতে চাইলে বিএডিসির মিরসরাইয়ের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহেদ হাসান বলেন, ‘কিছু পাম্প নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু পাম্প চালু করছে না স্কিম পরিচালকরা। উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজারমূল্য কম ও কৃষকেরা পেশা বদল করায় কৃষিকাজে আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা। এছাড়া সড়কের কাজ করতে গিয়ে পানি নিষ্কাশনের জন্য নির্মিত ড্রেন ভেঙে ফেলেছে এলজিইডি।’
আরও পড়ুন: সবজি চাষ ও ছাগল-ভেড়া পালনে ভাগ্য ফিরেছে তাদের
মিরসরাই উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যদিও এখনো আমন কাটা পুরোপুরি শেষ হয়নি। আমন কাটা শেষ হলেই বোরো আবাদ শুরু করবে কৃষক। বোরো আবাদা ছাড়াও কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন শীতকালীন সবজি চাষ হয়ে থাকে স্কিমে পানি দিয়ে।
Advertisement
উপজেলার একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বোরো চাষে সেচের প্রয়োজন হয়। তাই খরচ বেশি পড়ে। কিন্তু খরচের তুলনায় ধানের বাজারমূল্য কম হওয়ায় তারা বোরো চাষ করছেন না। কৃষকদের হিসাবমতে, এক শতক জমিতে বোরো চাষ করতে খরচ হয় ৩০০-৩৫০ টাকা। কিন্তু এক শতকের ধান চাষ হয় মাত্র ১২-১৫ কেজি। যার বাজারমূল্য মাত্র ১৮০-২০০ টাকা।
কৃষকেরা জানান, ১২০ শতক (১ কানি) জমি চাষ করতে খরচ হয় ৪০-৪২ হাজার টাকা। এগুলোর মধ্যে বীজে ৫ হাজার, জমি চাষে (৩ চাষ) ৭ হাজার, সেচে ৮ হাজার, রোপণে (১২ জন শ্রমিক) ৮৫০০ হাজার, ওষুধ ও নিরানিতে ৫ হাজার, ধান কাটা ও নিতে (১২ জন শ্রমিক) ৮৫০০ টাকা। মোট ১২০ শতক জমি চাষ করতে প্রায় ৪২ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু ১২০ শতক জমিতে ধান চাষ হয় ৪৫-৫০ মণ। যার বাজারমূল্য ২৫-৩০ হাজার টাকা। তাই কৃষকেরা বোরো আবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
আরও পড়ুন: আগাম শিম চাষে লাভবান শার্শার কৃষক আতাউর
হিঙ্গুলী ইউনিয়নের পূর্ব হিঙ্গুলী গ্রামের স্কিম পরিচালক মো. সুরুজ আলী জানান, ধানের বাজারমূল্য থেকে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় কৃষকেরা বোরো চাষ করছেন না। গত ৫ বছর ধরে তিনি স্কিম বন্ধ রেখেছেন। কৃষকেরা ধান চাষে আগ্রহী হলে আবার স্কিম চালু করবেন। চার বছর আগে তিনি ১ কানি (১২০ শতক) জমি চাষে পানি বাবদ ৩-৩৫০০ টাকা নিতেন।
Advertisement
কৃষক আহম্মেদুর রহমান বলেন, ‘স্কিম গত ৫ বছর ধরে বন্ধ। আমরা এখন পানির অভাবে শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদ করতে পারি না। বন্ধ থাকা স্কিম চালু হলে আমাদের অনেক উপকার হতো।’
হিঙ্গুলী ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কনিকা রাণী মজুমদার বলেন, ‘অনেক বছর ধরে স্কিমগুলো বন্ধ। অনেক চেষ্টা করেও সচল করা সম্ভব হয়নি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ‘বিএডিসির পানির স্কিম বন্ধ থাকলেও কৃষকেরা মুহুরি প্রকল্প ও মহামায়া সেচ প্রকল্প ব্যবহার করে বোরো ও শীতকালীন সবজি চাষ করতে পারবেন। কিছু জায়গায় মেশিন আছে, বিদ্যুৎ নেই। অনেক জায়গায় মেশিন-বিদ্যুৎ কিছু নেই। আসলে এটি বিএডিসির কাজ। কিন্তু কৃষকেরা আমাদের কাছে অভিযোগ জানান।’
(এমএমডি) এম মাঈন উদ্দিন/এসইউ/জিকেএস