এবছর এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েও অর্থাভাবে উচ্চশিক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এজাজুল করিমের। সে এ বছর ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার খরসূতী বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এজাজুল উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের চন্দনী গ্রামের রিহাদ মোল্যার ছেলে।
Advertisement
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ছোটবেলা থেকে এজাজুল নিদারুণ অর্থকষ্টের মধ্যে শুরু করে পড়াশোনা। তার বাবা রিহাদ মোল্যা (৫০) পেশায় কৃষক। নিজের জমি-জমা তেমন না থাকায় অন্যের জমিতে কাজ করেই সংসার চালান। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে এজাজুল তৃতীয়। বড়ভাই বিয়ের পর আলাদা সংসার গড়েছেন। মেজভাই মানসিক প্রতিবন্ধী। চতুর্থ ভাই (১৬) রাজমিস্ত্রির সহকারী ও ছোটভাই (১০) চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র।
বর্তমানে এজাজুলের বাবা অধিকাংশ সময়ই অসুস্থ থাকেন। ফলে এজাজুলও বিভিন্ন সময় রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। করোনাকালীন সময়ে দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় নিয়মিতভাবে রাজমিস্ত্রির কাজ করেছে সে।
শিক্ষাজীবনে বারবার অভাবের কাছে হার মেনে থমকে যেতে চাইলেও অদম্য ইচ্ছা এবং শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় ধারাবাহিকভাবে সাফল্য অর্জন করতে থাকে এজাজুল। সে উমরনগর চন্দনী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০২১ সালে এসএসসি পাস করে। ভবিষ্যতে প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেই স্বপ্ন ফিকে হতে চলেছে তার।
Advertisement
এজাজুল করিম জানায়, বুয়েট, মেডিকেল বা ভার্সিটিতে পড়তে না পারলেও যেনো মানুষের মতো মানুষ হতে পারি সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে যেন অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর সামর্থ্য আল্লাহ আমাকে দেন। আমার ইচ্ছা প্রকৌশলী হওয়া। কিন্তু সংসারের যে অবস্থা তাতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এজাজুল করিমের মা ডলি বেগম বলেন, অন্য মায়েদের মতো আমিও স্বপ্ন দেখি আমার এজাজুলকে নিয়ে। কিন্তু আমাদের সামর্থ্য নেই। যতটুকু সাধ্য ছিল তা করেছি। ছেলেটার মুখের দিকে তাকালে ভাষা খুঁজে পাই না। সরকারি-বেসরকারি কোনো সহযোগিতা পেলে আমার এজাজুল এলাকার মুখ উজ্জ্বল করবে।
এ ব্যাপারে খরসূতী চন্দ্রকিশোর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আল মামুন রনী বলেন, অদম্য এজাজুলের প্রবল ইচ্ছাশক্তি, মানষিক দৃঢ়তা আর সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা তাকে লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে।
বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোশারেফ হোসাইন বলেন, সাধ্যমতো তার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা হবে।
Advertisement
এন কে বি নয়ন/এফএ/জিকেএস