দুই মাস ধরে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে তীব্র সংঘাত চলছে। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্তে ঢুকে আকস্মিক হামলা চালায় হামাস। এরপরেই গাজায় পাল্টা আক্রমণ চালায় ইসরায়েল। সে সময় থেকে এখন পর্যন্ত সংঘাত চলছেই। দুপক্ষের লড়াই থামার কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না।
Advertisement
ইসরায়েলে হামাসের হামলায় প্রায় ১২০০ জন নিহত হয় যাদের মধ্যে ৩২০ জন ইসরায়েলি সেনা সদস্য এবং ৫৯ জন ইসরায়েলি পুলিশ সদস্য ছিল। এছাড়া আরও প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি হিসেবে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। এদের মধ্যে বেশিরভাগকেই ইতোমধ্যেই মুক্তি দিয়েছে হামাস।
আরও পড়ুন: গাজায় আল-জাজিরার সাংবাদিকের পরিবারের ২২ সদস্য নিহত
তবে গত কয়েক দশকের মধ্যে বর্বরতার সব স্তর পার করে ফেলেছে ইসরায়েলি বাহিনী। হামাসের হামলার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে গাজাকে প্রায় পুরোপুরি ধ্বংস করার মিশনে নেমেছে দখলদাররা। প্রায় প্রতিদিনই গাজার বিভিন্ন স্থানে হামলা চালানো হচ্ছে। হামাসকে নির্মূলের অজুহাতে নিরীহ ফিলিস্তিনি নারী, শিশু এবং পুরুষদের নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে।
Advertisement
৭ অক্টোবরের হামলার পর হামাসের সামরিক ও সরকারি সক্ষমতা ধ্বংস করা এবং হামাসের হাতে বন্দি সব জিম্মিকে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এর একদিন পরেই পুরো গাজা কার্যত অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়। সেখানে খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহ এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।
কয়েক সপ্তাহ ধরে নির্বিচারে বোমা হামলায় গাজার বেশিরভাগ এলাকাই পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। গাজার যে কোনো শহরে প্রবেশ করলে এখন আর ধ্বংসস্তূপ ছাড়া কোনো কিছুই চোখে পড়বে না। অক্টোবরের শেষের দিকে উত্তর গাজায় স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। এরই অংশ হিসেবে প্রথমে দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালানো হয়। সে সময় লোকজনকে উত্তরাঞ্চলে সরে যেতে বলা হয়। এরপরেই লোকজনকে সতর্ক করে আবার উত্তরাঞ্চলেও হামলা চালানো হয়।
কিন্তু নামমাত্র এই সতর্কতাও অল্প সময়ের মধ্যে লোকজনের জন্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরে যাওয়াটা মোটেও সহজ কোনো বিষয় নয়। বিশেষ করে এখন সর্বত্রই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে তারা কোথায় যাবে? কোথায় আশ্রয় নেবে? তাদের সব আশ্রয়ই তো কেড়ে নিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গাজার কোনো স্থানই এখন আর নিরাপদ নয়। প্রায় প্রতি ১০ মিনিট পর পরই সেখানে বোমা ফেলা হচ্ছে।
গত ২৪ নভেম্বর কাতারের মধ্যস্ততায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় হামাস এবং ইসরায়েলি বাহিনী। প্রথমে চারদিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও পরে তা আরও তিনদিন বাড়ানো হয়। সাত দিনের এই যুদ্ধবিরতিতে শতাধিক জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। অপরদিকে ইসরায়েলি কারাগার থেকে কমপক্ষে ২৪০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
Advertisement
আরও পড়ুন: ইসরায়েল নয়, জিম্মিদের মুক্ত করেছে হামাস: জিম্মির মা
এদিকে যুদ্ধবিরতি শেষ হতে না হতেই গত শুক্রবার থেকে ফের তীব্র আক্রমণ শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার দক্ষিণাঞ্চলে অভিযান আরও বাড়িয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। তারা এখন খান ইউনিসের আরও ভেতরে প্রবেশ করে হামলা চালাচ্ছে। গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় এখন পর্যন্ত ১৬ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এর মধ্যে কমপক্ষে ৭০০০ জনই শিশু। এছাড়া আরও ১৯ লাখের বেশি মানুষ পুরোপুরি বাস্তূহারা হয়ে পড়েছে।
টিটিএন