আসরের নামাজ শেষ করে দ্রুত বাড়ি ফেরে বায়েজিদ। সাবধানে ফুটবল হাতে বেরিয়ে পড়ে। মা টের পেলে ক্ষতি নেই। যত ভয় বাবাকে নিয়ে। এ যাত্রায় কোন বিপদ ছাড়াই বায়েজিদ পৌঁছায় খেলার মাঠে। খেলার মাঠ বলতে গ্রামের দাখিল মাদ্রাসার ছোট একখণ্ড জমি। বায়েজিদ মাঠে আসার আগেই খেলার সঙ্গীরা উপস্থিত। আব্দুল্লাহ, সানি, জাহিন, সাঈম, সালমানসহ কয়েকজন। কতদিন পরে সবাই আবার বল নিয়ে খেলার মাঠে! ব্যাপারটা ওদের সবার জন্য বড়ই আনন্দের। আনন্দের মাঝেও সবার মনে ভয় কাজ করে। সবার একটাই কামনা—যাতে বায়েজিদের বাবা না দেখেন। গ্রামের প্রায় সবাই তাকে ভয় পায়। এসব নিয়ে আর না ভেবে ওরা খেলতে আরম্ভ করে। খেলার এক ফাঁকে বায়েজিদ খেয়াল করল, কিছু লোক মাদ্রাসা খুলে ঝাড়ু দিচ্ছে, পরিষ্কার করছে। তবে কি আবার খুলবে মাদ্রাসা! আবার হবে পড়াশোনা! সুবর্ণচর দাখিল মাদ্রাসার সুপার বায়েজিদের বাবা। মূল ঘটনা বাড়িতে গেলেই জানতে পারবে। খেলা চলতে থাকে।
Advertisement
সিরাজুল ইসলামের একমাত্র ছেলে বায়েজিদ। কেবল অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। বড় এক বোন আছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে তার এবার মেট্রিক দেওয়ার কথা ছিল। মা-বাবাসহ মাত্র চারজনের পরিবার। সিরাজুল ইসলাম মাদ্রাসার সুপার। বড় কড়া লোক। গ্রামের লোকজন সিরাজ হুজুর বলেই ডাকে। আজকাল নতুন আরেকটা পরিচয় হয়েছে তার। চেয়ারম্যান সাহেব। শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান। এমনিতেই কড়া লোক, এখন আবার হয়েছে শান্তি কমিটি। অধিকাংশ লোক এখন তার নাম শুনলেই ভয় পায়। আবার অনেকে মুখ বন্ধ রেখে খিস্তি-খেউর করে। সামনে কিছু না বললেও অগোচরে খিস্তির কমতি নেই।
খেলা শেষে মাগরিবের আগেই বায়েজিদ চুপিচুপি বাড়িতে প্রবেশ করে। বাবা বাড়িতে নেই। তাই কোন জবাবদিহিতার মুখে পড়তে হয়নি। গোসল করে মাগরিবের নামাজ পড়তে চলে যায় মসজিদে। নামাজ শেষে বাবা-ছেলে একত্রে বাড়ি ফিরে। ঘরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে বায়েজিদ প্রশ্ন করে, ‘‘কিছু লোককে দেখলাম মাদ্রাসা পরিষ্কার করতে। ঘটনা কী বাবা?’’অস্ফুট হাসি আড়ালে রেখে সিরাজুল জবাব দেন, ‘‘দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পাকিস্তান থেকে লোক আসবে। তাদের থাকার জন্য ওখানে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’বায়েজিদ আর কিছু বলে না। ব্যাপারটা ওর কাছে এখন স্পষ্ট। বিরক্তি নিয়ে বায়েজিদ চলে যায় বড় বোন রোকেয়ার রুমে।
বায়েজিদ চলে যাওয়ার পরে সিরাজুল যায় স্ত্রী কুলসুমার কাছে। একটা চেয়ার টেনে বসে বলতে শুরু করে, ‘‘শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হয়ে আছি বড় অশান্তিতে, বুঝলা বেগম!’’কুলসুমা মিটমিট হেসে জবাব দেন, ‘‘কী হলো আবার!’’ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে সিরাজুল বলেন, ‘‘আজই খবর পেলাম, রাতে গ্রামে মিলিটারি আসবে, থাকার বন্দোবস্ত মাদ্রাসায় করার কথা কিন্তু সেখানে ব্যবস্থা করার কাজ এখনো সম্পূর্ণ হয়নি৷ যে হারে বৃষ্টি হচ্ছে, দু’একদিন লাগে কি না আরও!’’কিছুটা কৌতূহলী হয়ে কুলসুমা জানতে চান, ‘‘তাহলে এ ক’দিন ওরা কোথায় থাকবে?’’সিরাজুল নিশ্চিন্ত হয়ে জবাব দেন, ‘‘মাদ্রাসা প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের বাড়িতে থাকবে। কাচারি তো ফাঁকাই আছে। সাতজন দিব্যি থাকতে পারবে।’’কুলসুমা এবার রেগে যান, ‘‘এটা সম্ভব না, বাড়িতে সেয়ানা মেয়ে আছে। গ্রামসুদ্ধ লোকে আজেবাজে কথা বলবে। শান্তি কমিটি হয়েছেন তাতেই কত কটু কথা শুনতে হয়!’’সিরাজুল তিনের উপরে সাত। দ্বিগুণের চেয়েও এক বেশি। রাগের উপরে রাগ চলে, ‘‘তোমার কথামতো কি আমাকে চলতে হবে? বেশি বুঝবা না। যা বলি তা করবা। খাওয়ার ব্যবস্থা করো। আমি তাদের আনতে বের হলাম।’’কথাগুলো যথেষ্ট জোরে বলায় বায়েজিদ ও রোকেয়ার কানে পৌঁছায়। বিষয়টা ওরাও জানতে পারে।
Advertisement
সিরাজুল ইসলাম বেরিয়ে পড়েন। এদিকে কুলসুমা দু’চারটা কথা বলে ছেলে-মেয়ের সাথে। এরপর রান্নার জোগাড়যন্তের কাজ শুরু করেন। রোকেয়া ও বায়েজিদ চার হাতে কাচারি ঘরটা পরিষ্কার করে। কাজের ফাঁকে দুজন ফিসফিস করে কী সব যেন বলে আর মৃদু হাসে।
সিরাজুল ইসলামের পাকিস্তানি মেহমান আসতে বেজে গেলো রাত এগারোটা। অন্যান্য দিন এতক্ষণে বায়েজিদ ও রোকেয়া ঘুমিয়ে যেত। আজ এখনো ঘুমায়নি। পাকিস্তানি মিলিটারি দেখার তীব্র আগ্রহ ওদের সজাগ রেখেছে। রোকেয়া ও বায়েজিদ দুজনেই হাসিমুখে চলাফেরা করে। মিলিটারিদের সাথে কথা বলে, পরিচিত হয়। উর্দু ওরা মোটামুটি ভালোই জানে। কারো সাথে টুকটাক আলাপের জন্য যথেষ্ট।
আপাতত সাতজন এসেছে। একজন বাদে সবাই ত্রিশের নিচে। সবাই লম্বা। দু’একজন বাদে সবার গাল ক্লিন। যত্ন করে গোফও রেখেছে কয়েকজন। এদের লিডার হলো আলতাফ হোসেন খাঁন। বেশ জোয়ান। সিনা টানটান, জবরদস্ত দেহ। চেহারা-সুরাত নজরকাড়া। বয়স সাতাশ ছুঁয়েছে কেবল। বিয়ে করার আগেই দেশজুড়ে লেগে গেলো হাঙ্গামা। মিশনে বেরিয়ে পড়তে হলো। এখন এসে উঠেছে অখ্যাত এক গ্রামের সিরাজ হুজুরের বাড়ি। বিয়ের নেশায় আলতাফ সব সময় সুন্দরী মেয়ের সন্ধানে মগ্ন থাকে।
সিরাজুল ইসলামের বাড়িতে আলতাফ বাহিনী প্রবেশের পর থেকেই শুরু হয় খাতির-যত্ন। যেন জান্নাতি মেহমান৷ সবাই ভীষণ ব্যস্ত। কখন কি তলব আসে! সেই অপেক্ষায় থাকে। বায়েজিদ আলতাফদের সাথে ভালোই জমিয়ে তুলেছে। খোশগল্প, গালভরা হাসি। প্রবেশের আধঘণ্টার মধ্যেই বায়েজিদ তাদের বন্ধু হয়ে যায়। ততক্ষণে রোকেয়ার সাথেও তাদের পরিচয় হয়ে গেছে। সচরাচর অপরিচিত পুরুষের সামনে রোকেয়া আসে না। পরিবারের কড়া নিষেধ আছে। কিন্তু আজ সেরকম কোনো বালাই নেই। রোকেয়া তাদের সাথে হাসছে, উর্দুতে কথা বলছে কিন্তু তাতে সিরাজুল ইসলাম আজ কিছু বলছেন না। রোকেয়ার প্রথম বাক্য টিম লিডারের সাথে। একদম স্পষ্টভাবে জিজ্ঞেস করে, ‘‘আপকা নাম কেয়া হায়?’’রোকেয়ার মুখে উর্দু শুনে আলতাফ বেজায় খুশি। আহ্লাদের সাথে বলে, ‘‘ম্যায় হু আলতাফ হোসেন খাঁন।’’ আলাপ শুরু তখন থেকেই।
Advertisement
হাত-মুখ ধুয়ে মিলিটারিরা খেতে বসে। চেহারা দেখলেই বোঝা যায় ওরা কতটা ক্ষুধার্ত। খাবার পরিবেশনের দায়িত্ব বায়েজিদ আর রোকেয়ার কাঁধে। মিলিটারিদের খুশি রাখতে আপ্যায়নের দায়িত্ব মেয়ে-ছেলের হাতে তুলে দিয়েছেন সিরাজুল ইসলাম। দায়িত্ব পালনকালে আলতাফের নজর পড়ে রোকেয়ার ওপর। পরিচয়ের প্রথমে খেয়াল করেনি ভালোভাবে, এখন দেখে একটু আস্তে শুধু বললো, ‘‘মাশাআল্লাহ, কিতনা হাসিন হে!’’কোন এক দৈব বলে কথাটা রোকেয়ার কানে পৌঁছায়। রোকেয়া জিজ্ঞেস করে, ‘‘ইয়ে খাঁন সাহেব ফুসুর ফুসুর কিউ কার রাহি হে?’’ইতস্তত হয়ে আলতাফ উত্তর দেয়, ‘‘মেনে কাহাকি, সালিন বহুত মাজাদার হুয়ি থি।’’কথা শেষ হতে না হতেই রোকেয়া বলে, ‘‘আগার নেহি তো রাস্তা কেয়া হে? মেনে এছে পাকায়া!’’একথা শুনে বায়েজিদ একবার রোকেয়ার মুখের দিকে তাকাল কিন্তু কিছু বললো না। আলতাফ ছোট করে বলে, ‘‘বহুত মাজাদার, বহুত মাজাদার! কহি জবাব নেহি হে।’’রোকেয়া মুচকি হাসি দেয়। খাওয়া-দাওয়া শেষে বিছানায় মিলিটারির দল শরীর ঘঁষতে শুরু করে। সারাদিনের ক্লান্তি বিছানার সাথে হবে ভাগাভাগি। আলতাফের চৌকিটা আলাদা। লিডার বলে কথা। বাকি ছয়জনের জন্য মাটিতে বিছানা পাতা হয়েছে। কাচারিতে একাধিক চৌকি ছিল না। ভোরের দিকে এগিয়ে চলা রাতের কোলে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে।
সেই ভোররাত থেকে শুরু। বিকেলকে বরণ করার সময় ঘনিয়ে এলো তবুও বৃষ্টি কমছে না। বৃষ্টিমাখা দিনে খোশগল্পেই কেটে যাচ্ছে সময়। বাড়ি যেন আজ আড্ডাখানা। লিডার আছে রোকেয়ার মনের বোঝাপড়া নিয়ে। যুদ্ধ জয়ের আগে তার রোকেয়াকে জয় করা চাই। এদিকে বায়েজিদ সবার বন্ধু হয়ে গেছে। ছেঁড়া ছেঁড়া উর্দুতে ওদের কত্ত সব মজার গল্প শুনিয়ে ফেলল! সবাই দারুণ আনন্দ পায়। সিরাজুল ইসলাম সকালে ছাতা নিয়ে বেরিয়েছেন আর খবর নেই। কোথাও কোনো কাজে আঁটকে আছেন বোধহয়। আর কুলসুমা! ডজনখানেক লোকের পেটের শান্তির দায়ভার তার। দুহাতে সব করো। নারীদের দুইয়ের অধিক হাত থাকলে পুরুষের সেবা করতে সুবিধা হতো!
পরিচয়ের প্রথমদিনেই আলতাফ ও রোকেয়ার মাঝে ভালো বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায়। সুযোগ পেলেই দুজন টুকটাক কথা বলে। কুলসুমা এসব ভাব-ভঙ্গি সবই বোঝেন। তবুও চিরায়ত বাঙালি মায়ের মতো মেয়েকে কোন সাবধানতার বাণী শোনালেন না। তবে কি গণ্ডগোল মিটে গেলে রোকেয়ার দেশ আলতাফ অনায়াসে স্বাধীন করে ভোগের রাজত্ব বসাবে! কে জানে! উপযুক্ত সময়ই হলো সমস্ত প্রশ্নের নির্ভুল উত্তরদাতা।
বিকেলের আকাশে মেঘ নিরুদ্দেশ, বৃষ্টিও উধাও। সর্বত্র দখল করে বৃষ্টি পরবর্তী বিকেলের নরম রোদ। বৃষ্টি কমতেই বায়েজিদ বেরিয়ে পড়ে। নাহ, এবার সাথে ফুটবল নেই। বের হবার আগে বোনের সাথে চুপিচুপি কী সব বলাবলি করল। ভঙ্গিতে মনে হচ্ছে গোপন পরামর্শ।
বায়েজিদ বাহিরে, সিরাজুল বাড়ি নেই, কুলসুমা নিজ কাজে ব্যস্ত। এমন সময় আলতাফ চুপিসারে রোকেয়ার রুমে প্রবেশ করে। হাতে একটা ব্যাগ। আলতাফের প্রবেশে রোকেয়া কিঞ্চিৎ ভয় পেলেও মুহূর্তেই নিজেকে শামলে নেওয়ার ভান ধরে হাসিমুখে বলে, ‘‘ওয়াহ, মিস্টার খাঁন! ইয়াহা কেসে! কীয়া কিসমাত হে মেরা! আজ মেরা ঘরমে আপ আয়া।’’রোকেয়ার এরকম উদার অভ্যর্থনায় খুশি হয় আলতাফ। ধীর পায়ে গিয়ে বিছানায় বসে। আলতাফের উদ্দেশ্য বুঝতে না পেরে রোকেয়া কিছুটা শঙ্কিত। তাই দূরে দাঁড়িয়ে আছে। বিষয়টা আলতাফ আন্দাজ করতে পেরে নিচুস্বরে বলে, ‘‘ডারনেকি কোয়ি ওয়াজা নেহি হে। মে ইয়াহা আপকো সাথ দোস্তিকা রিশতা কায়েম করনেকে লিয়ে আয়া৷ আপকো মুঝে বহুত পাসান্দ হুয়া।’’এরকম কথা আলতাফের পক্ষ থেকে আসবে তা রোকেয়া আগেই অনুমান করেছিল। সেজন্য আলতাফের বন্ধু হবার অন্যায় প্রস্তাবে বিব্রত বোধ করেনি। প্রস্তাবের জবাবে রোকেয়া সরাসরি কিছু বলেনি। মৃদু হেসে মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে ছিল শুধু। যা মূলত সম্মতির নীরব প্রকাশ। আলতাফ খুশি হয়। ডানহাতে চেহারার ঘাম মুছে বলতে থাকে, ‘‘তুম কহি ডার নেহি হে। কারিব আয়ো। মে তুমহারা লিয়ে এক ছোটাছা তোহফা লেয়াহু।’’রোকেয়া কাছে আসতেই আলতাফ ব্যাগ থেকে একটা বন্দুক বের করে। বন্দুক দেখে রোকেয়া চমকে যায়। আলতাফ তার গোঁফে হাত বোলাতে বোলাতে বলে, ‘‘ইয়ে মেরি তরফ সে তুমহারে লিয়ে এক ছোটাছা তোহফা হ্যা।’’রোকেয়া রহস্যময়ীর মতো হেসে বলে, ‘‘মুঝে বন্দুক কো সাথ কিয়া রাবতা হে? মে তো কোয়ি জানগুজু নেহি হু।’’রোকেয়ার প্রশ্নে যত্নশীল জবাব দেয় আলতাফ, ‘‘মেনে তুমকো ইয়ে ইসিলিয়ে দিয়া হে তাকে তুম খুদকু লিবারেশন আরমি (জানগিয়া ফৌজ) সে বাচা সাকতি হু!’’‘‘লেকিন মুজে বন্দুক চালানা নেহি আতা।’’ রোকেয়ার যৌক্তিক বক্তব্য শুনে আলতাফ শেখানো শুরু করে কীভাবে বন্দুক চালাতে হয়। আলতাফের আন্ডারে রোকেয়ার ট্রেনিং সন্ধ্যা অবধি বহাল রইল। কাজ কম কথা বেশি, প্রেয়সী সঙ্গে থাকলে যা হয় আর কি!
বাড়ি থেকে বেরিয়ে বায়েজিদ নদীর পাড়ে আসে। সেখানে অপেক্ষারত একদল কিশোর। বায়েজিদ কাছে আসতেই আব্দুল্লাহ লম্বা টানে বলে, ‘‘বাহাদু…র বায়েজি…দ হা…জি…র!’’ঘোষণা শুনে বায়েজিদসহ সকলে হেসে ওঠে। বায়েজিদের বন্ধুদলের সবাই মিলিটারি আগমনের খবরটা জানে। একদিনের মধ্যে খবরটা সারাগ্রাম ছাড়িয়ে গ্রামান্তর হতে শুরু করেছে। কিছু কিছু লোক এখনই গ্রাম ছাড়তে অস্থির হয়ে উঠেছে। বায়েজিদ সবাইকে বলল, ‘‘চল, ওই হিজল তলাটায় গিয়ে আলাপ করি।’’হিজলের দিকে ওরা অগ্রসর; দ্রুত পড়ছে পা, এক অদ্ভুত ছন্দ, অদ্ভুত সুর। চলার ভঙ্গিতে মনে হচ্ছে, একদল দেবতা নদীর পথ ধরে নতুন ভোরের আলোর মশাল হাতে অন্ধকারের পানে ছুটে যাচ্ছে।
হিজল তলায় এসে সবাই গোল হয়ে দাঁড়ায়। কানগুলো সব কাছাকাছি। রোকেয়ার নকশা মোতাবেক সব পরিকল্পনা খুলে বলে বায়েজিদ। গভীর মনোযোগে সবাই শুনছে গোপন পরিকল্পনা। বায়েজিদের বলা শেষ হলে সানি বলে, ‘‘চমৎকার পরিকল্পনা। তবে কিছু ঝুঁকি আছে।’’সানির দেখানো পথ ধরে সাঈম বলে, ‘‘আমাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ভাই একটু বড়। এটা বাস্তবায়নে আরও বড় কয়েকজন দরকার।’’সাঈমের বক্তব্যে সবাই গুরুত্ব দিলো। সবার ছোট জাহিন বলে, ‘‘ঠিকই বলছেন ভাই! এখন বিশ্বস্ত বড় কে আছে?’’সবার চিন্তা-ভাবনা শেষে দুটি নাম উঠে এলো; খালেক আর মফিজ। দুজনেই কলেজপড়ুয়া। নাম দুটির প্রতি সবার আস্থা পাওয়া গেল। আব্দুল্লাহ বলল, ‘‘সালমান দৌড়ে পটু, যা তাদের খুঁজে আন। আসার সময় তোদের দোকানে দেখেছি।’’ সালমান এক দৌড়ে দোকানে হাজির। খালেক আর মফিজ সেখানেই ছিল। সালমান দুজনকে ডেকে নিয়ে আসে। আসার পথে মূল ঘটনার সারসংক্ষেপ বলতে থাকে। সালমানের কথা শুনে, খালেক আর মফিজ দুজনের মুখের দিকে তাকায়। হিজল তলার সমাবেশে হাজির হয় তারা। তাদের পেয়ে আব্দুল্লাহ বলে, ‘‘সময় নষ্ট না করে আপনাদের খুলে বলি।’’বায়েজিদের কাঁধে হাত রেখে মফিজ বলে, ‘‘আসার পথে সালমান বলেছে। আমরা বিষয়টা বুঝতে পেরেছি।’’মফিজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে খালেক বলে, ‘‘এর জন্য আমাদের কিছু প্রস্তুতি দরকার আর সবচেয়ে বড় দরকার সাবধানতা। অপারেশনটা কবে নাগাদ করতে চাও?’’কাঁধে রাখা মফিজের হাত ধরে বায়েজিদ জবাব দেয়, ‘‘আসছে ভোররাতের আগেই, এই ধরুন সাড়ে তিনটা নাগাদ। বাবা তখন তাহাজ্জুদ পড়তে যাবেন মসজিদে। এটাই সুযোগ।’’খালেক সবাইকে কাছে ডেকে বলে, ‘‘তোমাদের পেয়ে আমাদের কাজ সহজ হলো। হাতে সময় অল্প, আমাদের দরকার কেরোসিন, গোটা কয়েক মশাল আর লাইটার।’’খালেক শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে সালমান বলে, ‘‘লাইটার আর কেরোসিনের দায়িত্ব আমি নিলাম। বড় ভাইকে বললে দোকান থেকে দিবে।’’মফিজ খুশিমনে বলল, ‘‘তবে মশাল তৈরির কাজ আমরা দুজন নিলাম।’’তখনই আব্দুল্লাহ বলে, ‘‘ভাই, একটা জিনিস খেয়াল করলাম, দরজা না হয় রোকেয়া বুবু বাহির থেকে লাগিয়ে দিবেন! কিন্তু শিয়াল যদি জানালা দিয়ে লাফ মারে? জানালায় তো গ্রিল নাই।’’যৌক্তিক প্রশ্ন। মফিজ প্রশ্ন করে বায়েজিদের কাছে, ‘‘তোদের কাচারির জানালা না দুইটা?’’বায়েজিদ উত্তর দেয়, ‘‘দুইটাই, আর নাই।’’উত্তর শুনে মফিজ হেসে হেসে বলে, ‘‘তাহলে তোমরা দুশ্চিন্তা করো না। আমাদের কাছে দুইটা স্টেনগান আছে, আশ্রাফ ভাই দিছিল। জানালা দিয়ে লাফ দিলে দেবো একদম উড়িয়ে।’’এরপর সবাই মিলে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সমস্ত দিক আলোচনা করে মাগরিব পর্যন্ত।
নামাজ শেষে সন্ধ্যায় বায়েজিদ বাড়ি ফেরে। আসন্ন আক্রমণের কথা ভেবে ভেবে বায়েজিদ খুবই উত্তেজিত। আগুনের সাগরে ডুবতে থাকা একদল ডাকাতের অসহায় দৃশ্য কল্পনা করে খুব আনন্দ পাচ্ছে। বাড়ি ফিরে রোকেয়াকে আলোচনার সারবস্তু খুলে বলে। সব শুনে বিপরীতে রোকেয়া বলে, ‘‘এখন শুধু নতুন ভোরের অপেক্ষা।’’এটুকু বলে স্বরটা একটু নিচু করে সর্তকতার ভঙ্গিতে বলে, ‘‘শোন, তুই যাওয়ার পরেই বাবা বাড়িতে এসেছেন। তোর কথা কয়েকবার জিজ্ঞেস করছেন। তাকে জবাব...’’ রোকেয়া শেষ করার আগেই কর্কশ গলায় লম্বা ডাক পরে পরপর দুবার, ‘‘বায়েজিদ... বায়েজিদ...!’’তলবের তিন কিস্তি শোনার আগেই বায়েজিদ তড়িঘড়ি করে হাজির হয়। গম্ভীর মুখ, চিন্তিত মন। কী জবাব দেবে তা নিয়ে বড় সংশয়। ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে ভারী গলায় সিরাজুল প্রশ্ন করেন, ‘‘সারাবিকাল কোথায় ছিলা?’’বায়েজিদ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছু বলার চেষ্টা করে না। বায়েজিদের জবাবের অপেক্ষায় না থেকে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘দেশের ভাও ভালো না, বাইরে ঘুরঘুর করবা না। শুনলাম, মফিইজ্জা আর খালেইক্কায় মুক্তিতে যোগ দিছে, ওদের ধারে-কাছেও ঘেঁষবা না। ওরা বিপজ্জনক, কোন মায়াদয়া নেই।’’বাবার কথার বিপরীতে শুধু ঘাড় কাত করে সম্মতি জানায়। এরপর সিরাজুল যাওয়ার অনুমতি দিলে বায়েজিদ এক দৌড়ে রোকেয়ার ঘরে চলে যায়। বিকেলের পরে আর বৃষ্টি হয়নি। সকাল পর্যন্ত যেন না হয় সেজন্য রোকেয়া ও বায়েজিদের মনস্কামনার ক্ষান্ত নেই। সন্ধ্যাকালীন আদর-আপ্যায়নের ঝামেলা চুকিয়ে ঘুমাতে চলে যায় ওরা। বাড়িতে মিলিটারি আশ্রয়ের পর থেকে রোকেয়া একা ঘুমায় না। সঙ্গে বায়েজিদ থাকে। দুজন একত্র হলে ঘুমের নামগন্ধ নেই। শুধু গল্প আর হাসি-ঠাট্টা। আজ রাতে ঘুম না আসার আরও শক্ত কারণ আছে। উত্তেজনা! ঠিকঠাক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করাটাই মূল লক্ষ্য। বায়েজিদ কল্পনা করে, সবগুলো সাদা আলুর মিলিটারি কেরোসিনের আগুনে উপযুক্ত সিদ্ধ হচ্ছে, সাদা সিদ্ধ আলু শূকরের পালকে খাওয়ানোর বড় বাসনা জাগে বায়েজিদের। রোকেয়া কানের খুব কাছে মুখ বাড়িয়ে বলে, ‘‘ওরা আসবে কখন?’’বায়েজিদ ফিসফিস করে জবাব দেয়, ‘‘আসলে বলছি একজনকে জানালার কাছে এসে ডাক দিতে।’’‘‘তুই কি জানোস? বাবার কাছে একটা বন্দুক আছে! ওরা দিছে। আমাকেও যেমন দিলো।’’‘‘শুধু গোঁফ রাখা লোকগুলো কি বেশি বোকা হয় আপু?’’এবার আর রোকেয়া স্বর চেপে রাখতে পারল না। হাসির শব্দ বাড়িময় ছড়িয়ে পড়ার আগেই বায়েজিদ রোকেয়ার মুখ চেপে ধরে। নিজেকে শামলে নেয় রোকেয়া। ভাইয়ের হাত মুখ থেকে সরিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘‘এখন ক’টা বাজে?’’টেবিলে রাখা হাতঘড়িতে চোখ বুলিয়ে নেয়। ‘‘মাত্র দশ'টা। আরও পাঁচ-ছয় ঘণ্টা!’’‘‘খুব গরম লাগতেছে। জানালাটা খুলে দে না, বাতাস খাই আর চাঁদ দেখি।’’জানালা খুলতেই বায়েজিদের চেহারা সংকুচিত, মন হলো ভার।‘‘আপু, আকাশে মেঘের আনাগোনা, বিজলিও চমকাচ্ছে, লক্ষণ তো ভালো না রে।’’কথাটা বলতে বলতে বায়েজিদ রোকেয়ার কাছে গিয়ে বসে। রোকেয়া বায়েজিদকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘‘বাংলার আবহাওয়া ওদের পক্ষ নিবে? কী যে বলিস তুই...’’একথা শুনে বায়েজিদের সংকুচিত মুখে প্রসারতার আকাশ সৃষ্টি হয়।
রাত এগিয়ে চলে। বায়েজিদ আর রোকেয়া ঘুমোয়নি। আকাশের মেঘ কেটে গেছে। হাতঘড়িটা আবার দেখে বায়েজিদ উদ্বেগের সঙ্গে রোকেয়াকে জানায়, ‘‘চারটা বাজতে তেরো মিনিট বাকি আছে! কই কেউই তো আসে না। ধুর...’’‘‘কোনো কাজে উতলা হবি না! আগে দেখ বাবা মসজিদে গেল কি না।’’বায়েজিদ রুম থেকে বের হয়। বাবার খোঁজ করার আগে আকাশের খোঁজ নেয়। এখন কোন মেঘ নেই। এরপর বায়েজিদ সিরাজুলের রুমে ঢুঁ মারে। দরজায় সাবধানে ঠেলা দেয়। ভেতর থেকে বন্ধ। তাহলে কী আজ... বিষয়টা নিশ্চিত হতে হবে। বায়েজিদ বেরিয়ে পড়ে মসজিদের উদ্দেশ্যে। অন্যদিন হলে বায়েজিদ একা যেত না। আজকের বিষয় আলাদা। ডানে-বামে নজর না দিয়ে জোছনার আলোকে হাতিয়ার করে দ্রুত পায়ে ছোটে । তিন-চার মিনিটের মাথায় বায়েজিদ হতাশ হয়ে বাড়ি ফেরে। রুমে ঢুকতেই রোকেয়া বলে, ‘‘ত্রিশ সেকেন্ডের কাজে সাত-আট মিনিট লাগে! ওরা আসছে একটু আগে।’’‘‘ওরা আসছে! কিন্তু বাবা তো বাড়িতেই ঘুমাচ্ছে। মসজিদে গেছিলাম নিশ্চিত হতে।’’‘‘সব জিনিস নিয়ে চিন্তা করবি না, যা নিয়ত করছোস আল্লাহর নামে করতে থাকবি। লাগবেই মাত্র দশ মিনিট। বাবা ঘুমাক।’’‘‘ঠিক আছে, কে কে আসছে?’’‘‘কথা না বাড়িয়ে যা তো। খালেক আর মফিজ ভাইকে বলবি তাদের মতো আক্রমণ করতে। আমি কাচারি বাহির থেকে বন্ধ করে আমার বন্দুকটা নিয়ে পজিশনে থাকব।’’‘‘ঠিক আছে।’’বলে বায়েজিদ বেরিয়ে পড়ে। রোকেয়ার ঘরের পেছনে সমস্ত সরঞ্জাম নিয়ে উপস্থিত থাকা সহযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দেয় বায়েজিদ। খালেক বলে, ‘‘আশ্রাফ ভাইকে সব খুলে বলতেই সে আমাদের চারটা গ্রেনেড দিয়েছে।’’ ‘‘যা পাইছেন আলহামদুলিল্লাহ। তাহলেও কি মশাল লাগবে?’’মশাল চূড়ান্ত প্রস্তুত করতে করতে খালেক বলে, ‘‘গুছিয়ে রাখা ভালো, যদি বোমা মিস হয়! না ফোঁটে!’’
জোছনায় সবার মুখ জ্বলজ্বল করছে। আশ্চর্য সে আলোর দীপ্তি। সে আলোর উজ্জ্বলতার ক্ষমতা সব আলোকে হার মানায়। এ মুহূর্তে সবচেয়ে আশ্চর্য সৌন্দর্য লাগছে আব্দুল্লাহ, সালমান, সাঈম আর বায়েজিদকে। ছোট প্রদীপে কী অফুরন্ত আলো। এই আলোর কেন্দ্র তবে রোকেয়া। এক ফাঁকে আব্দুল্লাহ জানতে চায়, ‘‘তা চেয়ারম্যান সাহেব কি মসজিদে গেলেন?’’‘চেয়ারম্যান সাহেব’ শব্দগুচ্ছ উচ্চারণে ব্যাঙ্গাত্মক মোহরের ছাপ স্পষ্ট। তা নিয়ে বায়েজিদের মাথা ব্যথা নেই। স্বাভাবিকভাবেই বায়েজিদ জবাব দেয়, ‘‘নাহ, যাননি! চিন্তার কারণ নেই, আপু বলছে কর্মকাণ্ড চলবে।’’এরমধ্যেই আব্দুল্লাহ, সাঈম ও বায়েজিদের হাতে মশাল তুলে দেয় খালেক। কেরোসিনের পাত্র সালমানের দায়িত্বে; সালমান চালু লোক বলে। খালেক আর মফিজ স্টেনগান ও গ্রেনেড নিয়ে প্রস্তুত। প্রথমে কেরোসিন ছিটিয়ে দেয়। এরপরে সবাই পজিশন নিল। বায়েজিদের পজিশন কাচারির দরজা বরাবর, উঠোনে। রোকেয়া আগে কাচারির দরজা বাহির থেকে লাগিয়ে রেখেছে। বন্দুক পিছনে রেখে রোকেয়াও শক্ত পজিশনে।
এক, ধুম...দুই, ধুউমম...তিন, ধুউউমম... চার নম্বর গ্রেনেডটা মফিজ মারলো না। জমা রাখলো পরিস্থিতি দেখার জন্য। কাচারিতে আগুন। হঠাৎ রোকেয়ার খেয়াল হলো, বাবার ঘরটা বাহির থেকে আটকানো উচিত ছিল। বায়েজিদের পজিশন থেকে সিরাজুলের ঘরটা কাছে। রোকেয়া বায়েজিদকে ডেকে বলল, ‘‘বাহির থেকে ছিটকানিটা লাগিয়ে দে, জলদি।’’প্রথম ডাকে বায়েজিদ শোনেনি। আবার বলার পরে বায়েজিদ দ্রুত ছোটে…
গ্রেনেড বিস্ফোরণের শব্দ সিরাজুলের কানে এসেছিল। সারাদিনের ক্লান্ত শরীর; ওই শব্দকে বজ্রপাতের সঙ্গে তুলনা করে ফের ঘুমোতে চাইল। একটু পরে টের পেল ভিন্ন শব্দ, আগুনে কিছু পুড়তে থাকা ছ্যাঁত ছ্যাঁত শব্দ। সিরাজুল লাফ দিয়ে ওঠে। বন্দুক হাতে দরজা খুলতেই বায়েজিদ আর সিরাজুল মুখোমুখি। বায়েজিদের হাত থেকে মশালটা পড়ে গেল। অনন্ত ক্রোধে সিরাজুলের শরীর কাঁপছে। বন্দুকের নলটা বায়েজিদের মুখ বরাবর তাক করে সিরাজুল বলে, ‘‘আমার ছেলে হয়ে আমার সঙ্গে বেঈমানী করতে বুক কাঁপে না?’’‘‘আপনি বেঈমানী করছেন আপনার মায়ের সঙ্গে, আমি করছি আমার বাবার সঙ্গে। আপনিও বেঈমান, আমিও বেঈমান।’’চিরদিন ভয় পেয়ে আসা বাবার মুখের ওপর ফটফট করে কথাগুলো বলে দিলো বায়েজিদ। কোন ডর-ভয় নেই। বায়েজিদের বুকে লাগামহীন সাহসের ঘোড়া দেখে সিরাজুলের মেজাজ প্রচণ্ড গরম হয়ে যায়। তাক করা বন্দুক হাতে এগোতে এগোতে বলে, ‘‘বেঈমানির শাস্তি আছে, জানোস তো? তুই আগে ভোগ কর...’’ঘটনার কোলাহলে কুলসুমারও ঘুম ভেঙে যায়। পেছন থেকে অশ্রুভেজা চাপাস্বরে বিনয়ী কণ্ঠে আবেদন করে, ‘‘বায়েজিদকে কিছু করবেন না, ওরে মাফ করে দেন।’’‘‘মেয়েলোকের আবদার রাখার জন্য সিরাজুলের জন্ম হয় নাই।’’এই বলে সিরাজুল ট্রিগারে আঙুল বসাতেই শেষ প্রহরের যুদ্ধমঞ্চে চতুর্থ নম্বর শব্দটা হলো; এটি বন্দুকের। নিশানা কাঁচা হাতের। তাক করেছিল বুক বরাবর অথচ লাগল গিয়ে শ্বাসনালীতে। তবুও মন্দ নয়। কুলসুমা থ’ মেরে দাঁড়িয়ে রইল।
বাড়ির ভেতরে বন্দুকের শব্দ পেয়ে খালেক, মফিজসহ সবাই ছুটে আসে। বিস্ময়মিশ্রিত ভঙ্গিতে সবার দৃষ্টি একজনের দিকে। সে হলো রোকেয়া। তার হাত কাঁপছে, দু’এক ফোটা জলের রেখা তার চোখেও স্পষ্ট। বায়েজিদ ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে রোকেয়াকে। অদূর থেকে খালেক বলে, ‘‘সাব্বাস রোকেয়া, সাব্বাস।’’কুলসুমা ব্যতীত সিরাজুলের গুলিবিদ্ধ দেহের প্রতি কারো নজর নেই। সবার নজর কেবল নতুন ভোরের দিকে।
এসইউ/জিকেএস