প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কেন জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে সরকারকে সাতদিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
Advertisement
অন্তর্বর্তীকালীন জামিন চেয়ে করা আবেদনের বিষয়ে শুনানির ধার্য দিনে বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এদিন আদালতে মির্জা ফখরুলের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও সগীর হোসেন লিয়ন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, নিতাই রায় চৌধুরী, মাহবুব উদ্দিন খোকন, কায়সার কামাল, ফজলুর রহমান, বদরুদ্দোজা বাদল, রুহুল কুদ্দুস কাজল, আবদুল জব্বার ভূইয়া, গাজী কামরুল ইসলাম সজল, মো. আক্তারুজ্জামান, সগীর হোসেন লিওন, জাকির হোসেন ভূইয়া, মোরশেদ আল মামুন লিটন, শহিদুল ইসলাম সপু, মো. মিজানুর রহমান, মো. মাকসুদ উল্লাহ, আনিসুর রহমান রায়হান, এহসানুর রহমানসহ বিএনপির আইনজীবীরা।
আরও পড়ুন>> হাইকোর্টেও জামিন পেলেন না ফখরুল
Advertisement
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিএম আব্দুর রাফেল। সাথে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বিনয় কুমার ঘোষ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এটিএম আমিনুর রহমান।
আদেশের পরে আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, এই মামলায় মির্জা ফখরুল ইসলামের কোনো সম্পৃক্ততাই ছিল না। তিনি নির্দেশ দেবেন সেই পরিস্থিতিও সেখানে ছিল না। এ মামলায় তার কোনো সম্পৃক্ততা নাই। তিনি বয়স্ক মানুষ। তিনি জামিন পাওয়ার যোগ্য। এছাড়া এ রুলের বিষয়ে আমরা শুনানির আর্জি জানাবো।
অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিএম আব্দুর রাফেল সাংবাদিকদের বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৮ অক্টোবর সমাবেশ ডাকেন। সমাবেশে বিএনপির সব নেতাকর্মীদের লাঠিসোটা নিয়ে আসার আহ্বান জানান। তারই পরিপ্রেক্ষিতে নেতাকর্মীরা লাঠি নিয়ে আসেন এবং প্রধানবিচারপতির বাসার গেটে হামলা চালান। রাস্তায় গাড়ি ভাঙচুর চালান। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্দেশ দিয়েছেন। তার নির্দেশনার কারণে এসব হামলার ঘটনা ঘটেছে। তাই তার জামিনের বিরোধিতা করেছি আমরা।
এ মামলায় মির্জা ফখরুলের জামিন আবেদনটি শুনানির জন্য গত সোমবারের (৪ ডিসেম্বর) কার্যতালিকায় ছিল। পরে বিষয়টি উপস্থাপন করে শুনানির জন্য আর্জি জানালে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ বৃহস্পতিবার দিন ঠিক করেন।
Advertisement
এরও আগে গত রোববার (৩ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জামিন চেয়ে আবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব। গত ২৯ অক্টোবর সকালে গুলশানের বাসা থেকে মির্জা ফখরুলকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরে এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
আরও পড়ুন: বিএনপি নেতা জয়নুল-নিতাই-খোকনের জামিন
সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ ডাকে বিএনপি। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। ওইদিন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা প্রধান বিচারপতির বাসভবনসহ আশপাশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুর চালান। বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করেন। পরদিন ২৯ অক্টোবর হরতালের ডাক দেয় বিএনপি। এরপর থেকে দফায় দফায় অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি ও তাদের জোটসঙ্গীরা।
গত ২২ নভেম্বর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক এই মামলায় মির্জা ফখরুলের জামিন নামঞ্জুর করে আদেশ দিয়েছিলেন। এরপর জামিন চেয়ে গত ৩ ডিসেম্বর হাইকোর্টে আবেদন করেন মির্জা ফখরুল।
জামিন আবেদনটি গত ৪ ডিসেম্বর হাইকোর্টের কার্যতালিকার ৭৯২ নম্বর ক্রমিকে ওঠে। বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন।
পরে সগীর হোসেন লিওন জানান, জামিন আবেদনের বিষয়টি উপস্থাপন করা হলে আদালত বৃহস্পতিবার শুনানির জন্য রাখেন।
এফএইচ/বিএ/এএসএম