দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি ইউনিয়নে ‘৯ হাজার ভোট আমি পিটাইয়া দেবো (সিল মেরে) দেবে’—আওয়ামী লীগ নেতার এমন বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
Advertisement
মঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর) রাত থেকে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে। মাদারীপুরের কালকিনির মিয়ারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে এ বক্তব্য দেন কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সিরাজুল আলম মৃধা। তিনি কালকিনির শিকারঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।
ভাইরাল হওয়া ২৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, একটি কক্ষে বেশ কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছেন। চেয়ারে বসে আছেন আরও কয়েকজন। এসময় সামনে থাকা লোকজনের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিচ্ছেন সিরাজুল আলম। বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি শিকারমঙ্গল ইউনিয়নের ৯ হাজার ভোট আমি পিটাইয়া দেবো। আমি শিওরিটি দিলাম। ভাই-ব্রাদারকে নিয়া। সবার সামনে প্রতিশ্রুতি দিলাম। হাতে-পায়ে ধরিয়া লাগলেও আমি পিটাইয়া দেবো। আমি একা নয়, ভাই-ব্রাদার সাথে নিয়া ভোট পিটাইয়া দেবো। এখানে এমপি হইলে আরও ৫-৭টা ইউনিয়নও পিটাইতে হবে।’
বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে সিরাজুল আলম মৃধা বলেন, ‘আমি একাধিকবার ওই বিদ্যালয়ে গিয়েছি। তবে, কখন কোন ভিডিও কে করছে জানি না। আমি এত বোকা নই যে, প্রকাশ্যে এমন বক্তব্য দেবো। কিছু লোক আমার পেছনে লেগেছে। তারা এসব ভিডিও এডিট করে ভাইরাল করেছে। আমি ভোট পিটাইয়া দিবো এমন কোনো বক্তব্য দেই নাই।’
Advertisement
মাদারীপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম বলেন, ‘এমন বক্তব্যে সাধারণ ভোটাররা আতঙ্কিত হচ্ছেন। সুষ্ঠু ভোট হবে, এটা নিয়ে এখন শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সিরাজুল আলম মৃধা যে বক্তব্য দিয়েছেন সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হবে। আমরা চাই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন।’
জানতে চাইলে মাদারীপুর-৩ আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাশ বলেন, যদি ব্যালট পেপারে সিল মেরে দেবে এমন কোনো ভিডিও থাকে, লিখিত অভিযোগ হাতে পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাদারীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আহম্মেদ আলী বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ আমাদের দপ্তরে এখনো আসেনি। তবে, নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ চেয়ারম্যান, রিটার্নিং কর্মকর্তা বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রথমে লিখিত যাবে। নির্বাচন অফিসে অনুলিপি আসতে পারে। কাগজ হাতে পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেকে বিষয়টি জানানো হবে।
মাদারীপুর-৩ আসনে আট প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। এদের মধ্যে যাদের মনোনয়ন বৈধতা পেয়েছে তারা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত ড. আবদুস সোবহান গোলাপ মিয়া, স্বতন্ত্র কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহমিনা বেগম ও সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান শাহীন, তৃণমূল বিএনপির প্রবীণ হালাদার, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির নিতাই চক্রবর্তী, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের নকুল কুমার বিশ্বাস, জাতীয় পার্টির আব্দুল খালেক ও জাকের পার্টির ইকবাল হোসেন।
Advertisement
কালকিনি ও ডাসার উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এবং মাদারীপুর সদরের পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মাদারীপুর-৩ আসন। এ আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ৫৭ হাজার ৮৫৬ জন। পুরুষ ভোটার এক লাখ ৮৬ হাজার ৮৯৩ ও নারী ভোটার এক লাখ ৭০ হাজার ৯৬০ জন। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার সংখ্যা তিনজন।
আয়শা সিদ্দিকা আকাশী/এসআর/এএসএম