রাজবাড়ীকে বলা হয় রেলের শহর। এ জেলার ৫টি উপজেলার ওপর দিয়ে ব্রিটিশ আমলে স্থাপিত রেলপথ রয়েছে। প্রতিটি লাইন দিয়ে ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী, বেনাপোল, টুঙ্গিপাড়াসহ নিয়মিত চলাচল করছে বেশ কিছু ট্রেন। এসব রেলপথের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে ৫৭টি বৈধ ও অবৈধ রেলক্রসিং (সড়ক পথ)। যার বেশিরভাগ অরক্ষিত হওয়ায় নানা কারণে ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা।
Advertisement
চলতি বছর রাজবাড়ীর বিভিন্ন স্থানে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হয়েছেন ১২ জন। সবশেষ গত ৪ ডিসেম্বর কালুখালীর সূর্য্যদিয়ায় ট্রেন ও ব্যাটারিচালিত ভ্যানের সংঘর্ষে ট্রেনে কাটা পড়ে দুজনের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনারোধে প্রতিটি রেলক্রসিংয়ে বেরিয়ার অথবা গেটম্যানের দাবি স্থানীয়দের।
মূলত রাজবাড়ী একটি ব্যস্ততম রেলরুট। এ জেলার ওপর দিয়ে পদ্মা সেতু হয়ে খুলনা টু ঢাকা ও বেনাপোল টু ঢাকা ট্রেন চলাচল করে। এছাড়া রাজবাড়ী থেকে ট্রেনে কুষ্টিয়া, পোড়াদহ, রাজশাহী, খুলনা, টুঙ্গীপাড়া, ভাটিয়াপাড়া, ফরিদপুর, ভাঙ্গা, গোয়ালন্দ ঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করা যায়। ট্রেনে যাতায়াত সহজ ও নিরাপদ হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে এসব রুটে যাত্রীদের সংখ্যা। কিন্তু সে তুলনায় এখনও রেলরুটে রয়ে গেছে অরক্ষিত রেলক্রসিং। যার কারণে মাঝে মধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা।
রাজবাড়ী রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী ও রেলওয়ে থানা সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ী জেলা অংশের রেলপথে বিভিন্ন স্থানে বৈধ ও অবৈধ মিলে মোট ৫৭টি রেলক্রসিং রয়েছে। যার মধ্যে বৈধ ৪৩টি। এরমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ২১টিতে বেরিয়ার ও গেটম্যান রয়েছে এবং একটু কম গুরুত্বপূর্ণ ২২টিতে কোনো বেরিয়ার বা গেটম্যান নেই। এছাড়া অবৈধ ১৪টি রেলক্রসিং সম্পূর্ণ অরক্ষিত। যেগুলো স্থানীয়রা তাদের সুবিধার্থে জোরপূর্বক তৈরি করেছেন।
Advertisement
চলিত বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত রাজবাড়ীর বিভিন্ন স্থানে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হয়েছে মোট ১২ জন। এরমধ্যে নারী চারজন ও পুরুষ আটজন।
পাংশা কুড়াপাড়ার বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম, সামছুল আলম, শহিদুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান বলেন, গত এক বছরে পাংশার কুড়াপাড়া রেলক্রসিং এলাকায় তিনটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে দু্ই ভ্যানচালক ও একজন মোটরসাইকেল চালক নিহত হয়েছেন। এই স্থানে কোনো গেটম্যান বা বেরিয়ার নেই, সম্পূর্ণই অরক্ষিত। পাংশা থেকে রাজবাড়ী পর্যন্ত এরকম অনেক অরক্ষিত রেলক্রসিং রয়েছে। ফলে এসব স্থানে বেরিয়ার বা গেটম্যান জরুরি।
তারা আরও বলেন, এখনও বেশিরভাগ মানুষ ট্রেনের সময়সূচি জানে না, যার কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে। আর এখন ট্রেনগুলো খুব দ্রুত যায়, অনেক সময় বোঝাও যায় না। তারপর আবার রাস্তার দুই পাশে থাকে গাছগাছালি। যে কারণে ট্রেন এলে বোঝা যায় না। দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে প্রতিটি অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে বেরিয়ার বা গেটম্যান নিয়োগ করা খুবই জরুরি। পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দা, পথচারী, যানবাহনের চালকসহ সবাইকে সচেতন হতে হবে।
কালুখালীর মকিম মন্ডল ও বারেক মৃধা বলেন, কালুখালী জংশন স্টেশনের আগে রতনদিয়া বাজার, ইউনিয়ন পরিষদ হাসপাতাল, স্কুলসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। কিন্তু এ হাসপাতাল গেটের রেলক্রসিংয়ে কোনো গেটম্যান বা বেরিয়ার নেই। যারা এখান দিয়ে পারাপার হন তারা নিজ দায়িত্বে পারাপার হন। এই গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গেটসহ লোক নিয়োগ প্রয়োজন।
Advertisement
রাজবাড়ী জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোমনাথ বসু বলেন, রাজবাড়ী একটি ব্যস্ততম রেলরুট। এখান থেকে ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন রুটে ট্রেন চলাচল করে এবং মাঝেমধ্যেই ট্রেনে কাটা পড়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। ট্রেনে কাটা পড়ে কেউ যেন মারা না যায়, সেজন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম করেন তারা।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পাকশীর সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা অবৈধ রেলক্রসিং বন্ধে কাজ করছেন এবং ধাপে ধাপে অনেকগুলো বন্ধও করেছেন। অন্যান্য অবৈধ রেলক্রসিং বন্ধের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
এফএ/এমএস