জাতীয়

‘৮০ ভাগ ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয় না’

দেশে ৮০ শতাংশ ধর্ষণের ঘটনায় কোনো মামলা হয়না। আইনের দুর্বলতা, সামাজিক অসচেতনতা, হয়রানি ও বিচারিক দীর্ঘসূত্রতার কারণে ভুক্তভোগী ও তাদের আত্মীয়স্বজনরা পুলিশের কাছে যেতে চায় না। তাই যৌন হয়রানি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা।

Advertisement

মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের বক্তারা।

বক্তারা জানান, নারী নির্যাতন সংক্রান্ত সাড়ে ২৭ হাজার মামলা ঝুলে রয়েছে। দেশের সকল রাজনৈতিক দলের কাছে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তারা।

লিখিত তথ্য উপস্থাপন করে কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি বলেন, জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম এডুকো বাংলাদেশের সহায়তায় ৭০টি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা এবং ২৮টি ইলেকট্রনিক মিডিয়া থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে। সংগৃহীত তথ্যে দেখা যায়, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ৬৯৫ জন নারী ও কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৫০২ জন নারী এবং ১৯৩ জন কন্যাশিশু। গৃহের অভ্যন্তরে সহিংসতার শিকার হয়েছে ১৭৯ জন নারী এবং ২০ জন কন্যাশিশু। পাচার এবং কিডন্যাপের শিকার ৩২ জন নারী এবং ১৩৬ জন কন্যাশিশু, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট ১ হাজার ২২জন। এদের মধ্যে ৩৬২ জন নারী এবং ৬৬০ জন কন্যাশিশু এবং ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছিল আরো ৫৩ জন নারী এবং ১৩৬ জন কন্যাশিশুকে। ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ১৩ জন নারী এবং ৩৪ জন কন্যাশিশু। যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ৩৫২ জন, যার মধ্যে ৯৬ জন নারী এবং ২৫৬ জন কন্যাশিশু।

Advertisement

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়,পুলিশ সদর দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী দেশের সব থানায় বিগত পাঁচ বছরে (২০১৮-২২) ২৭ হাজার ৪৭৯টি ধর্ষণের মামলা হয়েছে। নারী নির্যাতনের মামলা হয়েছে ৫৯ হাজার ৯৬০টি। অন্যদিকে ডিএমপির তথ্য মতে, গত পাঁচ বছরে রাজধানীতে ৩ হাজার ৪২টি ধর্ষণ মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে নারী ২ হাজার ৪৭০ জন এবং শিশু ৫৭২ জন। তাদের তথ্যানুযায়ী গত পাঁচ বছরে শুধু ঢাকা মহানগরীতে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা মাত্র ২৪ জন।

তিনি আরও বরেন, যৌন হয়রানির ঘটনার বিচারের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন না থাকা ন্যায়বিচার পাওয়ার পথে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। এ সমস্যার কার্যকর সমাধানের জন্য প্রয়োজন একটি যথাযথ আইন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০২৪ সালের শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এরকম একটি প্রেক্ষাপটে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম মনে করে, সংসদ নির্বাচনের পূর্বে সকল রাজনৈতিক দলসমূহের নিকট নারী ও কন্যাশিশুদের সমস্যার ব্যাপকতা তুলে ধরা। যাতে দলসমূহ তাদের নিজ নিজ নির্বাচনী ইশতেহারে নারী ও কন্যাশিশুদের কল্যাণে প্রয়োজনীয় প্রতিশ্রুতি ও পদক্ষেপ তুলে ধরে এবং বিজয়ী দল সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখা প্রতিটি রাজনৈতিক দলসহ সকলের নাগরিক দায়িত্ব। সেই অবস্থান থেকে, জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম কন্যাশিশুসহ সকল শিশু ও নারীদের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন করার জন্য দেশের সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানায়। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কাছে 'যৌন হয়রানী প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন' প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সোচ্চার ভূমিকা রাখার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ২দফা দাবি তুলে ধরেন তারা। দাবিগুলো হলো, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা যার মাধ্যমে সকল ধরণের এবং সর্বস্তরে সংগঠিত এ ধরণের সহিংসতার শিকার নারী ও শিশুরা আইনের আশ্রয় লাভ করতে পারে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন শিশুদের জন্য একটি আলাদা অধিদপ্তর গঠন করা।

Advertisement

এডুকো বাংলাদেশের সহায়তা ও চাইল্ড রাইটস স্পেশাইজড এন্ড অ্যাক্টিভিষ্ট টনি মাইকেল গোমেজের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে এ সময় বক্তব্য রাখেন নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক ও জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সহ-সভাপতি শাহীন আক্তার ডলি, জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সহ-সম্পাদক ও অপরাজেয় বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু, এডুকো বাংলাদেশের ডিরেক্টর অফ প্রোগ্রামস ফারজানা খান, গুডনেইবারস বাংলাদেশের হেড অব এডুকেশন এন্ড হেলথ রাজিয়া সুলতানা।

এনএস/এসআইটি/এএসএম