লাইফস্টাইল

অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কেন হয়?

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার অ্যান্টিবায়োটিক। বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত ওষুধগুলোর একটি হলো এটি। কিন্তু প্রায়ই অ্যান্টিবায়োটিকগুলো অযৌক্তিক অবস্থার মধ্যে ব্যবহার করা হয়। ফলে জীবাণু অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স বা প্রতিরোধী হয়ে ওঠে।

Advertisement

আমাদের দেশসহ বিশ্বে অ্যান্টিবায়োটিকের যাচ্ছেতাই ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। মোটাদাগে এর জন্য ফার্মেসি, হাতুড়ে ডাক্তার, অনভিজ্ঞ ডাক্তার, বাণিজ্যিক বিপণন ব্যবস্থা এবং রোগীরা ভীষণভাবে দায়ী।

অনুপস্থিত ডোজ কতটা ভয়াবহ একবার দন্ত্যচিকিৎসক ওষুধগুলো লিখে দিলে, ওষুধগুলো গ্রহণ করা এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোর্সটি সম্পূর্ণ করা রোগীর দায়িত্ব। কারণ আপনার ডোজ মিস করলে অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকরভাবে কাজ করে না। সংক্রমণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া বিরতির সময়ের মধ্যে ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। তাই আপনি আসলে মিস করতে পারবেন না বা আপনার সুবিধামতো ডোজ নিতে পারবেন না।

আরও পড়ুন: আক্কেল দাঁত কেন সবার গজায় না?

Advertisement

আপনার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে দন্ত্যচিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা প্রয়োজন। আপনি যদি আপনার ডোজ মিস করেন এবং ব্যথা আবার আপনাকে তাড়িত করে, তাহলে কোনো জটিলতা ছাড়াই ভালো নিরাময়ের জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের উচ্চমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর বাদ দিয়ে ওষুধ খাওয়ায় পরে অন্য কোনো সমস্যার জন্যও আপনার শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করবে না।

সেইসঙ্গে একজন ডেন্টিস্টের অ্যান্টিবায়োটিক সম্পর্কে অনেক বেশি জ্ঞান রাখতে হয়, যা দন্ত্যচিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক নির্ধারণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

দাঁত ও মুখের চিকিৎসায় যেসব রোগের জন্য সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন পেরিওডোন্টাল ইনফেকশন, জিনজিভাইটিস, পাল্প নেক্রোসিস, পেরিএপিকাল ইনফেকশন, দাঁত তোলা, পেরিএপিকাল লেশন, ফেসিয়াল ফ্রাকচার, অস্টিওমায়োলাইটিস, নরম টিস্যুর ফোলা, বায়োপসি, আক্কেল দাঁত ইনফেকশন, প্রফাইলেক্সিস এন্ডোকার্ডাইটিস, মুখের নরম ও কঠিন টিস্যুর সার্জিক্যাল অপসারণ বা সংযোজন, সেলুলাইটিস, ট্রানজিয়েন্ট ব্যাকটেরিমিয়া প্রফাইলেক্সিস ইত্যাদি।

আরও পড়ুন: ডেন্টাল ইমপ্লান্ট কী ও কেন করবেন?

Advertisement

দাঁতের চিকিৎসায় সমস্যাভেদে যেসব অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয় এমোক্সিসিলিন, ফ্লুক্লক্সাসিলিন, সেফাড্রক্সিল, সেফ্রাডিন, সেফুরক্সিম, সেফিক্সিম, এজিথ্রোমাইসিন, মেট্রোনিডাজল ইত্যাদি। অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে প্রয়োজনভেদে ব্যথানাশক ও অ্যান্টাসিড জাতীয় ওষুধ খেতে হয়।

সাধারণত দন্ত্যচিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যাপ্তিকাল ৩ থেকে ৭ দিন হয়ে থাকে। আপনার কতদিন খেতে হবে, তা ঠিক করে দেবেন আপনার ডেন্টিস্ট।

অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষতিকর দিক> অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহারে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় শারীরিক স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ায়।> দীর্ঘস্থায়ী অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারে অন্ত্রের প্রাচীরে ঘা সৃষ্টি করতে পারে।> লিভারের ক্ষতিসাধনের জন্য অন্য ওষুধের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক সবচেয় দায়ী।> অ্যান্টিবায়োটিক অন্ত্রের অনেক উপকারী ব্যাকটেরিয়াও মেরে ফেলে যাতে অগ্ন্যাশয়ের কার্যক্ষমতা কমে গিয়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।> অ্যান্টিবায়োটিক অ্যাজমা থেকে রক্ষাকারী ব্যাকটেরিয়া নির্মূল করে ফেলায় অ্যাজমা হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই বেড়ে যায়।

আরও পড়ুন: শিশুর দুধ দাঁতের যত্নে যা করবেন

ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলোজি ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চের (আইইডিসিআর) গবেষণামতে, ৮২ ভাগ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করছে না অ্যান্টিবায়োটিক। এর প্রধান কারণ অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স। কাজেই কার্যকর এবং নিরাপদ চিকিৎসা পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের যথাযথ ও সঠিক ব্যবহার এবং অপব্যবহার রোধ অপরিহার্য।

এসইউ/এএসএম