# আমাদের মামলায় জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে, যার বেনিফিশিয়ারি আওয়ামী লীগ# বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশে কচুকাটা হবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকবে না# আমি যে কাজগুলো করেছি, জোটে এ ধরনের অবদান কারও নেই
Advertisement
‘জোট না থাকলে আওয়ামী লীগ একা হয়ে যাবে। তরিকত ফেডারেশনের করা মামলায় জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে, যার বেনিফিশিয়ারি আওয়ামী লীগ। বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশে কচুকাটা হবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকবে না।’
নির্বাচন, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, জোটের অবস্থানের বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এ মন্তব্য করেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। দলটি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক।
আমাদের মামলায় জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করিয়েছি। কয়েকদিন আগে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে চূড়ান্তভাবে তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। এখন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ার বেনিফিশিয়ারি আওয়ামী লীগ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুঝতে হবে জোটে আমাদের (তরিকত ফেডারেশন) কেন দরকার?
Advertisement
নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ১৪ দলীয় জোটের শরিক হিসেবে নৌকা প্রতীকে ২০১৪ সাল থেকে তিনি এ আসনের সংসদ সদস্য। এর আগে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হলেও ২০০১ সালে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে হেরে যান এই নেতা।
২০০৮ সালে তিনি বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন গঠন করেন। ২০০৮ সালের ৯ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন পায় দলটি। দলটির প্রতীক ‘ফুলের মালা’। কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঢাকার ধানমন্ডিতে। চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী।
আরও পড়ুন>> শরিকদের বেকায়দায় ফেলে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ!
চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা হয় নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা রাজপথে টিকে থাকবো। আমার পরিচিতি আছে। ওরা (আওয়ামী লীগ) বলছে তারা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। বঙ্গবন্ধুর সৈনিক আমরা সবাই। কারণ আমরা স্বাধীনতার পক্ষের। আমার ইতিহাস আছে। আমি ৩৩ বছর আগে এমপি হয়েছি।’
Advertisement
জামায়াতের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘সবাই জামায়াতের বিরুদ্ধে কথা বলে। কিন্তু কথা বলা এক, কাজ করা আরেক। কেউ সাহস করে জামায়াতের বিরুদ্ধে আইনিভাবে দাঁড়ায়নি। কিন্তু আমাদের মামলায় জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করিয়েছি। কয়েকদিন আগে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে চূড়ান্তভাবে তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। এখন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ার বেনিফিশিয়ারি আওয়ামী লীগ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুঝতে হবে জোটে আমাদের (তরিকত ফেডারেশন) কেন দরকার?’
আওয়ামী লীগ এখনো জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে সাহস করছে না বলে দাবি করেন এ রাজনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘আমরা তরিকত ফেডারেশনের পক্ষ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। আমাদের মামলায় নিজামীদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। আমরা যদি ওই মামলা না করতাম, তাহলে আওয়ামী লীগ এখনো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতো কি না সন্দেহ।’
এটা পরিষ্কার যে, শেখ হাসিনা ওয়াদা দিলে কখনো ওয়াদার বরখেলাপ করেন না। বর্তমান যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, তাতে বন্ধু হারানোর কোনো সুযোগ নেই।
‘আমাদের মামলার পরই সরকার মানবতাবিরোধী মামলা ফাইল করেছিল। এখনো সরকার তাদের (জামায়াত) নিষিদ্ধ করতে পারছে না। সাহস করে নিষিদ্ধ করছে না। বঙ্গবন্ধুর যে স্বাধীনতা তা সার্থক করতে যা কাজ করার, তা তরিকত ফেডারেশন করেছে।’
তিনি বলেন, ‘জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ার পর তারা যাতে কোনো কার্যক্রম চালাতে না পারে, সেজন্য মামলা করেছিলাম। কিন্তু সরকার এটায়ও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এ কারণেই তারা (জামায়াত) এখনো মাঠে রাজনীতি করতে পারছে।’
দেশ-বিদেশে নিজেদের পরিচিতি ও বন্ধুত্ব আছে দাবি করে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশ-বিদেশে আমাদের অবস্থান আছে। সবাই জানে কয়েকটি দেশ আমার বন্ধু। বন্ধু রাষ্ট্রগুলোতে আমি অবস্থান তৈরি করতে পেরেছি। আমার যে অবস্থান রয়েছে, তা আওয়ামী লীগকে সমৃদ্ধশালী করেছে। সংবিধানকে সমুন্নত রাখার কথা আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী সব সময় বলেন। আর সংবিধানকে সমুন্নত রাখার যৌথ প্রয়াস আমরাই (তরিকত ফেডারেশন) নিয়েছি।’
আরও পড়ুন>> কলেবর বাড়ছে আওয়ামী জোটের!
আওয়ামী লীগের প্রতি অধিকার আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে আমাদের অধিকার রয়েছে। আমাদের দাবি ও অধিকার যদি পূরণ করা না হয়, তাহলে আগামীতে যে পরিস্থিতি হবে, তার জবাব তাদের (আওয়ামী লীগ) দিতে হবে, আমরা নই। আমি যে কাজগুলো করেছি, জোটে এ ধরনের অবদান কারও নেই। আমি এখনো কাজ করছি, করে যাবো। আমরা যে কাজগুলো করেছি, তাতে সংবিধান লাভবান হয়েছে, আওয়ামী লীগ লাভবান হয়েছে, শেখ হাসিনা লাভবান হয়েছেন।’
পাওয়ার চেয়ে আওয়ামী লীগকে তরিকত ফেডারেশন বেশি দিয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের অনেক দিয়েছি। ওনারা (আওয়ামী লীগ) আমাদের যত দেননি, এর চেয়ে বেশি আমরা দিয়েছি। এখন যদি এমপির জন্য কথা বলতে হয়, তাহলে আমাদের জন্য শরম (লজ্জার)। এটাতে আমি লজ্জা পাই। আমি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে চিনি। উনি (প্রধানমন্ত্রী) ওয়াদা রক্ষা করেন। উনি (প্রধানমন্ত্রী) আমাদের ওয়াদা দিয়েছেন। সেদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মিটিং হয়েছে। ওইদিন সাড়ে চার ঘণ্টা ছিলাম গণভবনে।’
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বন্ধুহারা হওয়ার সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন ওবায়দুল কাদের যেসব কথা বলছেন, এটা তাদের রণকৌশল। তাদের মানুষগুলো তাদের ধরে রাখতে হবে। ১৭ তারিখ পর্যন্ত সময় আছে। তবে একটি দল চলে গেলে (জোট থেকে), একটি দল কমবে। এটা পরিষ্কার যে, শেখ হাসিনা ওয়াদা দিলে কখনো ওয়াদার বরখেলাপ করেন না। বর্তমান যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, তাতে বন্ধু হারানোর কোনো সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনের পর যে চাপ আসবে, বিএনপি-জামায়াতসহ বিদেশি কিছু চক্র যে থাবা বসাবে, তা মোকাবিলা করার জন্য এখন বন্ধুহারা হওয়া ঠিক হবে না, বন্ধু লাগবে।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কথায় নিরাশ হয়েছেন উল্লেখ করে নজিবুল বশর বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেব যে কথাটা বলেছেন, ‘নিরাশ হবেন না’। ওই কথাটা আমরা পছন্দ করিনি। জোটের জন্য আমরা যা করেছি, এরকম সমৃদ্ধ পদক্ষেপ কেউ দেখাতে পারবে না। এজন্য তাদের উচিত- আমাদের আরও দু-চারটি আসন বাড়িয়ে দেওয়া। আমাদের মহাসচিব, যিনি জামায়াতের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন, তাকে এখনো আসন দেওয়া হয়নি। আমাদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আমাদের কয়েকবার ব্রাশফায়ার করা হয়েছিল। কিন্তু এখনো বেঁচে আছি।’
আরও পড়ুন>> আমি আওয়ামী লীগে থাকলে বিএনপিকে নিষিদ্ধ করতাম
বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশে কচুকাটা হবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকবে না- জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি- শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। দেশকে রক্ষা করতে হলে, সংবিধান সমুন্নত রাখতে হলে, শেখ হাসিনাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী বানাতে হবে। এজন্য অনেক কথার উত্তর আমি এখন দিচ্ছি না।’
‘কাল বিএনপি এলে (ক্ষমতায়) দেশে কচুকাটা হবে। এটা অস্বীকার করা যাবে না। রক্তের হোলি হবে। এটা থেকে আমাদের বাঁচতে হবে। বর্তমান যে পরিস্থিতি, যার যত ক্ষমতা থাকবে থাকুক, সবাই জোট নিয়ে আছে। জোটবিহীন কেউ নেই। আওয়ামী লীগ বিশাল শক্তিশালী একটি দল। জোট না থাকলে তারা (আওয়ামী লীগ) একা হয়ে যাবে।’
এমডিআইএইচ/এএসএ/এএসএম