দেশজুড়ে

কমলা চাষে শিক্ষক দম্পতির লাখ টাকা আয়

প্রতিটি গাছের ফাঁকে থোকায় থোকায় ঝুলছে চায়না কমলা। বাগানের বেশিরভাগ কমলা পেকে হলুদ হয়ে গেছে। আবার বেশ কিছু কমলা সবুজ রয়েছে। শিক্ষক দম্পতির বাড়িতে এমন দৃশ্য দেখতে ভিড় করছে মানুষ। কমলা চাষের সফলতায় গোটা জেলায় পরিচিতি লাভ করেছেন তারা।

Advertisement

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের পশ্চিম সারডুবী গ্রামে সমতল ভূমিতে চায়না, নাগপুরি ও দার্জিলিং জাতের কমলা চাষ করে সফল হয়েছেন শিক্ষক দম্পতি খলিলুর রহমান ও ফাতেমা খাতুন মজুমদার। তাদের কমলা চাষের সাফল্যে প্রতিদিনই পার্শ্ববর্তী উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে দেখতে ও কমলার চারা কিনতে আসছে মানুষ।

খলিলুর রহমান উপজেলার মিলন বাজার মোজাম্মেল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ফাতেমা খাতুন মজুমদার পশ্চিম সারডুবি গ্রামের পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। এ দম্পতি শিক্ষকতার পাশাপাশি নীবিড় মমতায় কমলা চাষে নিজেদের সাফল্যের নজির স্থাপন করেছেন। যা এলাকার শত শত মানুষকে প্রেরণা যোগাচ্ছে।

জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে বিভিন্ন গাছের নার্সারি শুরু করেন এই দম্পতি। এরপর ২০১১ সালে এক বিঘা জমিতে দার্জিলিং জাতের কমলা চারার বাগান করেন। ৪ বছর পর ১৫২টি গাছে ফল আসে। ২০১৫ সালে বাগানে ব্যাপকভাবে কমলা ধরে। কমলা গাছ ও কমলা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে বিভিন্ন বয়সী মানুষ। পাশাপাশি ছুটে আসেন জেলা ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তারাও। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার গ্রহণ করেন শিক্ষিকা ফাতেমা খাতুন মজুমদার।

Advertisement

বর্তমানে তাদের বাগানে চায়না কমলার ১০০টি গাছ রয়েছে। পাশাপাশি তারা বিক্রি করছেন বিভিন্ন জাতের কমলার ও সুপারির চারা। কমলার চাষ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কমলার চারার একটি সমৃদ্ধ নার্সারিও গড়ে তুলেছেন তারা। যেখান থেকে সাশ্রয়ী দামে বিক্রি করছেন চারা গাছ। নার্সারি ও কমলার বাগান থেকে প্রতিমাসে কয়েক লাখ টাকা আয় করছেন এই শিক্ষক দম্পতি। শিক্ষক খলিলুর রহমান বলেন, ১৯৯৫ সালে আমরা প্রথম নার্সারি তৈরি করি। পাশাপাশি আমার স্ত্রী ফাতেমা মজুমদার ২০১১ সালে দার্জিলিং জাতের কমলা চারা লাগায়। এরপর আমাদের কমলার বাগানের ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৬ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার পান আমার স্ত্রী। এরপর থেকে তার কমলা চাষের আগ্রহ আরও বেড়ে যায়।

ওই এলাকার আনোয়ার হোসেন বলেন, দেশের মাটিতে কমলা চাষ হচ্ছে, এটা অবাক করা বিষয়। কমলা বাগানের প্রতিটি গাছে ফল ধরেছে। দেখতে সুন্দর ও খেতেও মিষ্টি।

শিক্ষিকা ফাতেমা খাতুন মজুমদার বলেন, শিক্ষকতার পাশাপাশি কৃষিতে জড়িয়ে পড়েছি। আমাদের কৃষি অনেক ভালো লাগে। ২০১১ সালে কমলা বাগানের পর কৃষি বিভাগ থেকে সার্বিক সহযোগিতা পেয়েছি। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারও পেয়েছি। সেই থেকে কমলা চাষের প্রতি আমার আগ্রহ বেড়ে গেছে। পাশাপাশি মাছচাষ, গাভী পালন থেকে শুরু করে বিভিন্ন কৃষি কাজ করে সময় পার করছি। হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন মিয়া বলেন, হাতীবান্ধা উপজেলায় একটি কমলা বাগান রয়েছে। বাগানটি পরিদর্শনে যাবো। পাশাপাশি কমলা চাষিদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হবে।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. হামিদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, নিজ উদ্যোগে কমলা চাষ করছেন জেলার অনেক কৃষক। এরইমধ্যে অনেক কৃষক সফল হয়েছেন। বর্তমানে কৃষি বিভাগ থেকে মাল্টা চাষ করার জন্য কৃষকদের বেশি পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

এফএ/এএসএম