দেশজুড়ে

অবরোধে পর্যটনে ভাটা, দৈনিক ক্ষতি লাখ টাকা

বিএনপি ও সমমনা দলের ডাকে টানা অবরোধ ও হরতালে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে পর্যটন খাতে দৈনিক প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা ক্ষতি হচ্ছে। গত ২৮ অক্টোবর থেকে টানা কর্মসূচির কারণে ধস নেমেছে এ শিল্পে। এতে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বিভিন্ন পর্যটন স্পটের ইজারাদার ও স্পটগুলো ঘিরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখানকার পর্যটন শিল্প খুবই সম্ভাবনাময়। এখানে রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মহামায়া সেচ প্রকল্প, দেশের ষষ্ঠ সেচ ও প্রথম বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প মুহুরী প্রজেক্ট, আটস্তর বিশিষ্ট জলপ্রপাত খৈয়াছড়া ঝরনা, রূপসী ঝরনা, দুর্গম মেলকুম গিরিখাত, বাওয়াছড়া প্রকল্প, বোয়ালিয়া ঝরনা, নাপিত্তাছড়া ঝরনা, ডোমখালী বেড়িবাঁধ, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের বসুন্ধরা পয়েন্ট, হিলসডেল মাল্টি ফার্ম ও আরশিনগর ফিউচার পার্ক। প্রতিদিন এসব পর্যটন স্পটের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন হাজারো ভ্রমণপিপাসু মানুষ। কিন্তু টানা অবরোধ হরতালের কারণে অনেকটা পর্যটকশূন্য এসব স্পট।

২০২২ সালের জুন থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত গত এক বছরে মিরসরাইয়ের হ্রদ, গিরিখাত ও ঝরনাগুলো দেখতে এসেছেন অন্তত ৩ লাখ পর্যটক। ঝরনা ব্যবস্থাপনার জন্য রয়েছে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বারৈয়ারঢালা রেঞ্জ ও মহামায়া হ্রদের দায়িত্বে রয়েছে মিরসরাই রেঞ্জ। মিরসরাইয়ে হ্রদ ও ঝরনা মিলে যতগুলো পর্যটন স্থান আছে এর মধ্যে মহামায়া হ্রদে পর্যটক আসে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু এবার পর্যটকের সংখ্যা অনেক কমে যাবে।

সবচেয়ে বড় পর্যটন কেন্দ্র মহামায়া ইকোপার্ক চলতি বছরের জন্য ১ কোটি ৭৭ লাখ টাকায় ইজারা নেয় এ আর এন্টারপ্রাইজ। তবে অবরোধের কারণে পর্যটক নেই বললেই চলে। এবার ইজারা নিয়ে লোকসান গুনতে হবে ইজারাদারকে। প্রতিদিন ন্যূনতম ৩০০ থেকে ৪০০ পর্যটক পার্কে আসেন এখানে। ছুটির দিনে কোনো কোনো সময় ২ থেকে ৩ হাজার পর্যটকও প্রবেশ করেন। তবে অবরোধের কারণে ৬০ থেকে ৭০ জনের বেশি পর্যটক হচ্ছে না। এখানে দৈনিক ক্ষতি হচ্ছে ৮৬ হাজার টাকা।

Advertisement

এদিকে বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যানের আওতায় ঝরনাগুলো ২৯ লাখ টাকায় বনবিভাগ থেকে ইজারা নিয়েছে এ এইচ এন্ট্রারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক নাজমুল হোসেন বলেন, ঝরনাগুলো আমাদের প্রতিষ্ঠান ইজারা নিয়েছে। এসব স্পটে ১৬ জন কর্মকর্তা কর্মচারী রয়েছে। এদের বেতন, খাওয়ায় অনেক টাকা খরচ হয়। হরতাল অবরোধের কারণে পর্যটক কমে গেছে। প্রতিদিন আমাদের প্রায় ৪০ হাজার টাকা ক্ষতি হচ্ছে।

বাওয়াছড়া প্রকল্প ইজারা নেওয়া প্রতিষ্ঠান এ এইচ এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজারের দায়িত্বে থাকা মো. মহিউদ্দিন বলেন, বাওয়াছড়া লেকে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ জন পর্যটক আসে। প্রতিজনের টিকিটের মূল্য ২০ টাকা। ছুটির দিন শতাধিক পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেন। চলতি মাসের শুরু থেকে পর্যটক আসছে না বললেই চলে। গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় মানুষ আসতে পারছে না। সারাদিন লেকের পাড়ে বসে অলস সময় কাটছে।

মহামায়ায় অবস্থিত আবছার হোটেলের মালিক নুরুল আবছার বলেন, করোনার পর এখন টানা একমাসের বেশি সময় পর্যটক নেই বললেই চলে। বেচাকেনা একেবারে কম। অনেকে কাস্টমার না থাকায় দোকান খোলেনি। সারাদিনে ৫০০ টাকা বিক্রি করতে কষ্ট হয়।

মহামায়ার প্রবেশমুখে সড়কে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করা সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক নূর হোসেন বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় এই রুটেও চলাচল নেই। এক ঘণ্টা বসে থাকার পরও যাত্রী পাচ্ছি না। অথচ প্রতি ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে একটি গাড়ি চলতো। দেখা যাক, অবরোধ শেষ হলে আগের অবস্থা ফিরে আসে কিনা।

Advertisement

মহামায়া ইকোপার্ক ইজারা পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ.আর এন্টারপ্রাইজের কর্মকর্তা মো. জাহেদ হোসেন বলেন, অবরোধের কারণে পর্যটক একেবারে কমে গেছে। এখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন বেড়াতে আসেন। কিন্তু অবরোধে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় আসতে পারছে না। অবরোধ যদি আরও বাড়ানো হয় তাহলে ব্যবসার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাবে।

আরশিনগর ফিউচার পার্কের স্বত্তাধিকারী নাসির উদ্দিন দিদার বলেন, ৯ বছর আগে ১২ একর জায়গায় মানুষের বিনোদনের কথা চিন্তা করে পার্কটি করেছি। প্রতিষ্ঠার পর বড় ধাক্কা খেয়েছি করোনাকালে। সেই ধাক্কা সামলানোর আগে এবার ধাক্কা খেলাম বিএনপি-জামায়াতের অবরোধের কারণে। এখানে বাইরে থেকে অনেক পর্যটক আসে। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের লোকজন আসে। কিন্তু অবরোধের কারণে লোকজন আসছে না।

তিনি আরও বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানে ২৮৫ জন কর্মচারি কর্মকর্তা রয়েছেন। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত পর্যটনের ভরা মৌসুম। এ সময় প্রচুর পর্যটক বেড়াতে আসেন। তবে এবার পর্যটক নেই বললে চলে। ২৮৫ জনের বেতন, খাওয়াসহ প্রতিদিন আমার খরচ হয় আড়াই লাখ টাকা। অবরোধ হরতালে বড় অংকের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি।

এফএ/এমএস