চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে ১৫ বছর ধরে সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী। গত পাঁচ বছর তিনি জাতীয় সংসদের হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। হলফনামা অনুযায়ী শুরুতে আয়-সম্পদ ছিল খুবই কম। নির্ভরশীলদের নামে কোনো অর্থ-সম্পদ ছিল না। দেড় দশকে ক্ষমতায় থাকাকালীন তার আয় বেড়েছে ৩০ গুণ। সম্পদ হয়েছে অঢেল।
Advertisement
২০০৮ সালে প্রথম নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সময় (পটিয়া তখন চট্টগ্রাম-১১ ছিল) তার স্ত্রীর কোনো আয় ছিল না। ছিল না কোনো স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ। কিন্তু ১৫ বছরের ব্যবধানে পত্নীসহ হুইপের বার্ষিক আয় বেড়েছে প্রায় ৩০ গুণ। স্বামী-স্ত্রী দুজনের নামে বর্তমানে রয়েছে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০০৮ সালের ২০ নভেম্বরের দেওয়া হলফনামা এবং দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন দাখিলের সময় নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া ২০২৩ সালের ২৯ নভেম্বরের হলফনামা পর্যালোচনা করে এ তথ্য মিলেছে।
২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে সামশুল হক চৌধুরীর বার্ষিক আয় ছিল সাকুল্যে ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান ও অন্য ভাড়া থেকে ৪৫ হাজার টাকা এবং ব্যবসা থেকে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা আয় হতো তার। ওই সময়ে স্ত্রী কিংবা নির্ভরশীলদের কোনো আয় ছিল না হলফনামায়।
আরও পড়ুন>> অস্থাবর সম্পত্তি-ভূমি বেড়েছে ভূমিমন্ত্রীর
Advertisement
২০০৮ সালের ২০ নভেম্বর অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে সামশুল হক চৌধুরীর হাতে নগদ ছিল ১ হাজার ৩৬৯ টাকা। লিমিটেড কোম্পানির ৪০টি শেয়ার ছিল। যার মূল্য দেখানো হয়েছিল ৪০ হাজার টাকা। ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের একটি টয়োটা গাড়ি ছিল। সোনা ও মূল্যবান ধাতু ছিল ২৫ হাজার টাকার। ইলেকট্রনিক সামগ্রী ছিল ৩০ হাজার টাকার এবং ২০ হাজার টাকার আসবাবপত্র ছিল।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকার অকৃষি জমি, হালিশহর হাউজিং এস্টেট এবং রিয়াজ উদ্দিন বাজারে দুটি দালানের দাম দেখানো ছিল ২১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। ওই সময়ে ২৮ লাখ ৩৮ হাজার টাকার ঋণ ছিল সামশুল হক চৌধুরীর।
বর্তমানে চিত্র একেবারে ভিন্ন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন দাখিলে দেওয়া হলফনামায় দেখা যায়, বর্তমানে স্ত্রীসহ হুইপের বার্ষিক আয় ৮৮ লাখ ৫২ হাজার ১৯৮ টাকা। এর মধ্যে স্ত্রীর বার্ষিক আয় রয়েছে ২৫ লাখ ৬৩ হাজার ৩১৮ টাকা।
বার্ষিক আয়ের মধ্যে হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট ও দোকানসহ অন্য ভাড়া খাতে আয় ১৩ লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৪ টাকা। ব্যবসা খাতে আয় ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র কিংবা ব্যাংক আমানত খাতে আয় ৭ লাখ ৯৬ হাজার ১০৮ টাকা। হুইপের ভাতা খাতে ১১ লাখ ৪ হাজার এবং অন্য খাতে আয় রয়েছে ২৩ লাখ ৬৯ হাজার ১৮৮ টাকা।
Advertisement
একইভাবে হুইপপত্নীর আয়ের মধ্যে বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট ও দোকানসহ অন্য ভাড়া খাতে বছরে আয় ৪ লাখ ১৫ হাজার ৮শ টাকা। ব্যবসা খাতে আয় ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্র খাতে আয় ৪ লাখ ৬০ হাজার ৮শ টাকা এবং ব্যাংক আমানতের সুদ হিসেবে আয় ১৪ লাখ ৬৬ হাজার ৭১৮ টাকা।
অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে বর্তমানে হুইপের হাতে নগদ রয়েছে ২ লাখ ৫৩ হাজার ৬২৪ টাকা, রয়েছে ১০ হাজার ৩২ ডলার ৭ সেন্ট। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ৬১ লাখ ৬৭ হাজার ৩৯ টাকা। গণনা প্রপার্টিজ লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ২৬০০ শেয়ার রয়েছে হুইপের। এই শেয়ারের দাম দেখানো হয়েছে ২ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেডের ১০০০ শেয়ার রয়েছে সামশুল হক চৌধুরীর। এসব শেয়ারের মূল্য দেখানো হয়েছে ১০ লাখ টাকা। ব্যাংকে এফডিআর রয়েছে ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকার। সঞ্চয়পত্র রয়েছে ৩০ লাখ টাকার। ১ কোটি ৫ লাখ টাকা মূল্যের একটি এবং ৭১ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের একটি মিলে মোট দুটি ল্যান্ড ক্রুজার রয়েছে হুইপ সামশুলের।
আরও পড়ুন>> ৫ বছরে কোটি টাকার বাড়ি শিক্ষা উপমন্ত্রীর, ঋণ বেড়েছে ১০ গুণ
১৫ বছর আগের মতোই বর্তমানে সোনা ও মূল্যবান ধাতু ২৫ হাজার টাকার, ইলেকট্রনিক সামগ্রী ৩০ হাজার টাকার এবং ২০ হাজার টাকার আসবাবপত্র রয়েছে। অন্য খাতে অস্ত্র ও ব্যবসায়িক মূলধন হিসেবে দেখানো হয়েছে ২২ লাখ ১৩ হাজার ৯২৭ টাকা।
একইভাবে হুইপপত্নীর নগদ টাকা রয়েছে ২৮ লাখ ২৬ হাজার ৯৮৬ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৮২ টাকা। গণনা প্রপার্টিজ লিমিটেডের শেয়ার রয়েছে ২০০০টি।
এসব শেয়ারের দাম দেখানো হয়েছে ২ লাখ টাকা। একইভাবে চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেডের হুইপের সমপরিমাণ ১০০০ শেয়ার রয়েছে হুইপপত্নীর। এসব শেয়ারের মূল্য দেখানো হয়েছে ১০ লাখ টাকা। ব্যাংকে এফডিআর রয়েছে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪৯১ টাকার। সঞ্চয়পত্র রয়েছে ৫০ লাখ টাকার এবং ব্যাংকে ডিপিএস (ডিপোজিট পেনশন স্কিম) রয়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকার। এই সময়ে নতুন করে সোনা ও মূল্যবান ধাতু যুক্ত হয়েছে ৩০ তোলা। যার মূল্য দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ইলেকট্রনিক সামগ্রী ১ লাখ টাকা এবং আসবাবপত্র রয়েছে ৬০ হাজার টাকার। বর্তমানে ব্যবসায়িক মূলধন রয়েছে ৯ লাখ ৭ হাজার ৬১৩ টাকার।
আরও পড়ুন>> ঋণ বেড়েছে তথ্যমন্ত্রীর, আয় কমে ব্যবসার শেয়ার বেড়েছে স্ত্রীর
একই হলফনামায় হুইপ সামশুলের স্থাবর সম্পদের মধ্যে কোনো কৃষিজমি নেই। তবে তিন দাগে অকৃষি জমি রয়েছে। এর মধ্যে তিন কাঠা ভিটি ভূমি, যার মূল্য ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ৯ কাঠা ৫ ছটাক ভিটি, যার মূল্য ৩৪ লাখ ৭২ হাজার ৫২০ টাকা। ৫ কাঠা ভিটি ভূমি, যার মূল্য দেখানো হয়েছে ৩২ লাখ ৬০ হাজার ৪শ টাকা। প্রতিতলা ৯শ বর্গফুট বিশিষ্ট চারতলা দালান। যার মূল্য ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ৫ কাঠা ভিটিতে চারতলা বাড়ি রয়েছে হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর। যার অর্জনকালীন মূল্য দেখানো হয়েছে ৪৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
স্ত্রীর অর্জিত স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে আট শতক ভিটি, যার মূল্য ৬ লাখ ৯২ হাজার টাকা। ১৫ গন্ডা ১ কড়া, যার মূল্য দেখানো হয়েছে ১৩ লাখ ১২ হাজার টাকা। ৭ শতক ভিটি, যার মূল্য দেখানো হয় ২৭ লাখ ৬৬ হাজার ২৫০ টাকা। হুইপপত্নীর রয়েছে আটটি টিনশেড দোকান। যার মূল্য ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। রয়েছে ৪০ লাখ টাকা মূল্যের একটি টিনশেড গোডাউন।
তাছাড়া স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নামে কৃষিজমি রয়েছে ৭৫ শতক। যার ৫১ শতকের মূল্য ২৮ হাজার টাকা এবং ২৪ শতকের মূল্য ৩৩ হাজার ৬শ টাকা। বর্তমানে তাদের কোনো ঋণ নেই।
এমডিআইএইচ/এএসএ/জেআইএম