বিজয়ের মাসের প্রথম দিনে প্রতীক্ষিত যাত্রার পর পর্যটক নিয়ে প্রথম পর্যটন শহরে এসেছে কক্সবাজার এক্সপ্রেস। শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) রাতে ১০২০ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে যাত্রা করে রেলটি শনিবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ৮টায় কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনে এসে পৌঁছায় বলে জানান কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার আতিকুর রহমান। কক্সবাজার-ঢাকা-কক্সবাজার রুটে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচলের মধ্য দিয়ে শত বছরের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে দক্ষিণ চট্টগ্রাম তথা দরিয়ানগরের মানুষের।
Advertisement
এদিকে রেলে কক্সবাজারে আসা পর্যটকদের জন্য বিশেষ ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে অধিকাংশ হোটেল কর্তৃপক্ষ। রেলের টিকিট দেখালেই ৬০-৭০ শতাংশ ডিসকাউন্ট মিলছে আবাসনে। তারকা হোটেলগুলোতেও ৫০ শতাংশ এবং ক্ষেত্র বিশেষে ৬০ শতাংশ ডিসকাউন্ট মিলছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় জনশূন্য কক্সবাজারে পর্যটক সমাগম বাড়াতে এ উদ্যোগ বলে উল্লেখ করেন সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজার হোটেল-গেস্টহাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে ১০২০ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে কক্সবাজার ছেড়ে যায় কক্সবাজার এক্সপ্রেস। ফিরতি ট্রেনটি সমপরিমাণ যাত্রী নিয়ে সকাল ৮টায় কক্সবাজার স্টেশনে এসে পৌঁছায়। ট্রেনে সিংহভাগই পর্যটক। এসব পর্যটকদের জন্যই ৬০-৭০ শতাংশ ডিসকাউন্ট ঘোষণা করা হয়েছে। হোটেল-গেস্টহাউজ মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ গতকাল এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়। হোটেলে এসে রেলে ভ্রমণের টিকিট প্রদর্শন করলেই এ সেবা পাবেন পর্যটকরা।
শনিবার সকালে কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনে সমিতিভুক্ত হোটেলের পক্ষ থেকে পর্যটকদের মাঝে প্রচারপত্রও বিলি করা হয়। একইঙ্গে ফুল দিয়ে স্বাগত জানানো হয় পর্যটকদের। এ সময় ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরাও সহযোগিতা করেন।
Advertisement
কলাতলীর হোটেল বিচ হলিডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হাফিজুর রহমান লাভলু বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারবাসীর শত বছরের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তর করেছেন। এ খুশিতে পর্যটকদের জন্য আমরা বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করেছি। আগামী সাতদিন এ অফার থাকবে।
হোটেল-গেস্টহাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ নেওয়াজ বলেন, ট্রেন চালু হওয়ায় শুধু কক্সবাজারের মানুষ নয়, পুরো দেশের মানুষ আনন্দিত। দেশের যেকোনো প্রান্তের মানুষ সহজেই কক্সবাজার আসতে পারবে। এ খুশিতে আমরা বিশেষ এ ছাড় দিচ্ছি। ট্রেনের টিকিট দেখালেই আগামী সাতদিন এ সুবিধা পাবেন পর্যটকরা।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হোয়াইট অর্কিড হোটেলের মহাব্যবস্থাপক রিয়াদ ইফতেখার বলেন, বছরের এ সময় পর্যটকে ভরপুর থাকে কক্সবাজার। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় এবার ভরা মৌসুমেও পর্যটক শুন্য কক্সবাজার। ফলে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট সব ধরনের ব্যবসায়ীদের। অনেক হোটেল কর্তৃপক্ষ অনিচ্ছা সত্ত্বেও শ্রমিক বিদায় করছেন। প্রায় ৫০ ভাগ রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় ট্রেনে পর্যটক আগমণ অব্যাহত থাকলে সব হোটেল যদি কম-বেশী পর্যটক পায় তাহলে ক্ষতি কমিয়ে আনতে পারবে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে পুলিশ। কক্সবাজারে পর্যটকদের নিরাপদে আসা-যাওয়া নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। টহল টিমের পাশাপাশি রয়েছে স্পেশাল ফোর্সও। এছাড়া পর্যটকদের সুবিধার্থে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম, জরুরি সেবা ও হটলাইন।
Advertisement
সহকারী স্টেশন মাস্টার আতিক জানান, সিডিউল ছিল সকাল সোয়া ৭টায় বাণিজ্যিক প্রথম রেলটি স্টেশনে পৌঁছাবে। যাত্রায় একটু বিলম্ব হওয়ায় পৌঁছাতেও আধাঘণ্টার মতো বিলম্ব হলো। সংশ্লিষ্ট সবাই রেলটি আসার অপেক্ষায় ছিলাম। ঢাকাগামী যাত্রীদের যেভাবে ফুল দিয়ে অভিবাদন জানানো হয়েছিল ঠিক তেমনিভাবে রেলে প্রথম পর্যটক হয়ে আসা যাত্রীরা নামার সঙ্গে সঙ্গে ফুল ও লিফলেট দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের অভিবাদন জানিয়ে ঝামেলামুক্ত ভাবে স্ব স্ব গন্তব্যে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ট্রেনে যাত্রীদের নিরাপত্তায় ১০ জন রেলওয়ে পুলিশ নিয়োজিত থাকছে। ঢাকা-কক্সবাজার রুটে শোভন চেয়ারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯৫ টাকা। এসি চেয়ার ভাড়া ১ হাজার ৩২৫ টাকা, এসি সিটের ১ হাজার ৫৯০ টাকা এবং এসি বার্থের (ঘুমিয়ে যাওয়ার আসন) ভাড়া ২ হাজার ৩৮০ টাকা। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া ২০৫ টাকা, স্নিগ্ধা ৩৮৬ টাকা, এসি সিট ৪৬৬ এবং এসি বার্থ ৬৯৬ টাকা।
গত ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এর মধ্য দিয়ে রেল নেটওয়ার্কে ৪৮তম জেলা হিসেবে যুক্ত হয় কক্সবাজার। পর্যটন এ শহরের সঙ্গে শুধু ঢাকা নয়, পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গেও এ রেলপথ যুক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. হুমায়ুন কবির।
কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন প্রকল্পের প্রকৌশলী এনামুল হক সরকার জানান, ছয়তলার এই স্টেশনে রয়েছে চলন্ত সিঁড়ি, মালামাল রাখার লকার, হোটেল, রেস্তোরাঁ, শপিংমলসহ আধুনিক সব সুবিধা। ৪৬ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতা সম্বলিত স্টেশনটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। এতে আছে কনভেনশন হল, ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন বুথ, এটিএম বুথ, এমনকি প্রার্থনার স্থানও।
এফএ/জেআইএম