খেলাধুলা

সব অভাব ভুলিয়ে দিলেন ম্যাচ সেরা তাইজুল

সাকিব আল হাসান নেই। বাংলাদেশ দল নিশ্চিতভাবেই একইসঙ্গে একজন সেরা ব্যাটার এবং একজন সেরা বোলারকে হারিয়ে ফেলে। এতবড় ঘাটতি পূরণ করতে উইকেটের অবস্থা বুঝে একজন ব্যাটার কিংবা একজন বোলার বেশি খেলাতে হয় বাংলাদেশকে।

Advertisement

সিলেটে নিউজিল্যান্ডের মত টেস্টের অন্যতম সেরা দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলতে নেমেছিলো একজন বোলার কম নিয়ে। মাত্র চারজন স্পেশালিস্ট বোলার নিয়ে। তিনজন স্পিনার এবং একজন পেসার। তিন স্পিনার তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ এবং নাঈম হাসান। পেসার শরিফুল ইসলাম। অকেশনাল স্পিনার হিসেবে মুমিনুল হক বোলিং করেছেন কয়েক ওভার।

এর অর্থ অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজসহ দলে ব্যাটার ছিলেন আটজন। নিরেট বোলার ছিলেন কেবল তিনজন। তাইজুল, নাঈম এবং শরিফুল। বোলিংয়ে এত সীমিত শক্তি দিয়েও নিউজিল্যান্ডের পুরো ২০ উইকেট তুলে নিয়ে তাদেরকে ১৫০ রানের ব্যবধানে ধরাশায়ী করলো বাংলাদেশ।

নিঃসন্দেহে, অসাধারণ একটি পারফরম্যান্স। আর এই পারফরম্যান্স এলো কেবল তাইজুল ইসলামের অসাধারণ বোলিংয়ের ওপর ভর করে। দুই ইনিংস মিলিয়ে মোট ১০টি উইকেট নিলেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের ২০ উইকেটের ১৮টিই নিলেন স্পিনাররা। এর মধ্যে তাইজুলের ১০, নাঈম হাসান ৩টি, মুমিনুল হক ৩টি এবং মেহেদী হাসান মিরাজ নিয়েছেন ২টি উইকেট।

Advertisement

প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ডকে মাত্র ৭ রান লিড নিয়ে অলআউট করে দেয়ার মূল কৃতিত্ব ছিল তাইজুলেরই। বাংলাদেশ সংগ্রহ করেছিলো ৩১০ রান। জবাবে কিউইরা অলআউট হয়েছিলো ৩১৭ রানে। ৭ রানের লিড।

দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর দুর্দান্ত সেঞ্চুরি, মুশফিকুর রহিমের ৬৭ এবং মেহেদী হাসান মিরাজের ৫০ রানের ওপর ভর করে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ৩৩৮ রানের বিশাল স্কোর। সিলেটে যে স্পিনিং ট্র্যাক, দ্বিতীয় ইনিংসে কিউই স্পিনারদের মোকাবেলা করে এই রান করাটাও বিরাট কৃতিত্বের।

নিউজিল্যান্ডের সামনে জয়ের জন্য লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৩২ রান। জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে দিতে নেমে মিডল অর্ডারে একমাত্র ড্যারিল মিচেল ছাড়া কেউই দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশের স্পিনারদের সামনে। ১২০ বল খেলে ৫৮ রান করেন মিচেল।

শেষ দিকে টিম সাউদিও করেছিলেন ৩৪ রান। কিন্তু তাইজুলের ঘূর্ণি বলের মুখে টিকতে পারলেন না তাদের কেউ। সাউদিকে জাকির হাসানের ক্যাচে পরিণত করে ইনিংসে ৫ উইকেট পূরণ করেন তাইজুল। এরপর ইশ সোধিকে (৯১ বলে ২২ রান) সেই জাকিরের হাতে ক্যাচে পরিণত করেই বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন তাইজুল।

Advertisement

১০ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে জেতাতে বড় ভূমিকা পালন করার পুরস্কার হিসেবে ম্যাচ সেরার পুরস্কার উঠলো তাইজুল ইসরামের হাতেই। সাকিব আল হাসান না থাকার কারণে যে বিরাট শূন্যতা তৈরি হলো, ইবাদত কিংবা তাসকিন না থাকার কারণে বোলিংয়ে যে অভাব তৈরি হয়েছিলো, তার সবই ভূলিয়ে দিয়েছেন তাইজুল ইসলাম।

ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিতে এসে তাইজুল বলেন, ‘দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে আমি গর্বিত। আর ১০ উইকেট আমার স্পিরিটকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, সামনে আরো ভালো করার জন্য। জয় অবশ্যই অনেক বেশি ভালো লাগার। এতে করে আমাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দেয়। দলের সবার কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছি। এ জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।’

ক্যারিয়ারে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার ১০ উইকেট নিলেন তাইজুল। এর আগে ২০১৮ সালে একবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১১ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নেয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। এছাড়া ৯ উইকেট করে নিয়েছিলেন তিনবার। ক্যারিয়ারে এক ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন ১২বার। ৪৩ টেস্টে তার মোট উইকেট সংখ্যা হলো ১৮৭টি।

আইএইচএস/