টাকার অভাবে নতুন পাঠ্যবই ছাপানো বন্ধ রেখেছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। দফায় দফায় চেষ্টা করেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত অর্থছাড় না পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন বোর্ডের চেয়ারম্যান। অবশেষে বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) অর্থছাড় মিলেছে। এতে মুদ্রণচুক্তি করে পুরোদমে বই ছাপানো শুরু করেছে এনসিটিবি।
Advertisement
তবে এখনো যত বই ছাপানো বাকি তাতে ডিসেম্বরের মধ্যে শতভাগ বই ছাপিয়ে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন ছাপাখানার মালিক-কর্মীরা।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, অষ্টম-নবমের বই ছাপানো নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল। এ লটের বইগুলো ছাপাতে কাজের চুক্তি করার মতো অর্থ ছিল না এনসিটিবির। অর্থছাড়ে দেরি হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরেও চিঠি চালাচালি করতে হয়েছে বোর্ড চেয়ারম্যানকে। অবশেষে ৩০ নভেম্বর অর্থছাড় মিলেছে।
এনসিটিবি চেয়ারম্যান ফরহাদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘অর্থছাড় পেয়েছি। এখন আর সমস্যা নেই। নবম শ্রেণির বই ছাপানোর কাজও শুরু করেছি। দ্রুত বই ছাপাতে যেসব প্রেস প্রাথমিকের বই ছাপিয়ে এখন ফাঁকা রয়েছে, তাদের সঙ্গেও চুক্তি করবো। আশা করি, যথাসম্ভব দ্রুত বই ছাপিয়ে উপজেলা পর্যায়ে পাঠিয়ে দিতে পারবো।’
Advertisement
গত ২৪ নভেম্বর ‘টাকার অভাবে ছাপানো বন্ধ, নতুন পাঠ্যবই নিয়ে অনিশ্চয়তা’ শিরোনামে জাগো নিউজে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেছিলেন, ‘এখন সমস্যা হয়ে গেছে টাকার। আমরা তো টাকা দিতে পারছি না। ওরা (প্রেস মালিকরা) বই ছাপাটা বন্ধ রাখছে। তাদের বিল দিতে পারিনি। প্রেসের মালিকরা এখন বলছে, তারা নাকি কাগজ কিনতে পারছেন না। সেজন্য বই ছাপার কাজও বন্ধ।’
নবমের ৯৭ শতাংশ বই ছাপা বাকি
২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হচ্ছে। এ দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ কোটির বেশি বই ছাপাতে হবে। এর মধ্যে অষ্টম শ্রেণির কয়েকটি বই ছাপানোর কাজ শুরু হলেও নবম শ্রেণির প্রায় ৯৭ ভাগ বই মুদ্রণের কাজ শুরুই হয়নি।
ছাপাখানার কর্মীরা জানান, নবম শ্রেণির বইয়ের ফর্মা অনেক বড়। ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম- তিন শ্রেণির মোট বইয়ের প্রায় সমান নবম শ্রেণির বই। তাই এ শ্রেণির বই ছাপানো অনেক সময়ের ব্যাপার। জানুয়ারি মাস পুরোটা কাজ করলে হয়তো ছাপা শেষ হতে পারে। সেক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারির আগে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে।
Advertisement
বই ছাপানো কতদূর এগোলো
এনসিটিবি ও ছাপাখানা সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক পর্যায়ের মোট বইয়ের ১০ শতাংশ ছাপার কাজ এখনো বাকি। এরমধ্যে নতুন শিক্ষাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির প্রায় দেড় কোটি বই ছাপানো বাকি রয়েছে।
নিম্নমাধ্যমিক পর্যায়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৯১ শতাংশ এবং সপ্তম শ্রেণিতে ৭৮ শতাংশ বই ছাপা শেষ হয়েছে। তবে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান পাণ্ডুলিপি এখনো ছাপাখানায় পাঠানো হয়নি। অষ্টম শ্রেণির ১৪টি বইয়ের মধ্যে ১১টির ডামি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, নবম শ্রেণির ৯৭ শতাংশ বই এখনো মুদ্রণে যায়নি। অষ্টম ও নবম মিলে সাড়ে ৫ কোটি বই এখনো ছাপানো বাকি রয়েছে। সবমিলিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ১১ কোটি বই ছাপানো বাকি, যা মোট বইয়ের ৪০ শতাংশ।
ছাপাখানা থেকে তুলে এনে পাণ্ডুলিপি দেখলেন উপমন্ত্রী
ছাপাখানায় দেওয়ার পর অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইটি তুলে নেওয়া হয়। এনসিটিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ছাপাখানায় পাঠানোর পর শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে বইটি দেখাতে হয়েছে। উপমন্ত্রী বইটির অনেক জায়গায় সংশোধনী দিয়েছেন। ফলে পাণ্ডুলিপি পরিবর্তন করে সবেমাত্র সেটি ছাপাখানায় দেওয়া হয়েছে। এতে বইটি ছাপতেও দেরি হবে।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন এনসিটিবি চেয়ারম্যান ফরহাদুল ইসলামও। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, স্যার এটি করেছেন। তিনি দেখে দেওয়ায় ভালো হয়েছে বলেই আমি মনে করি।’ তবে এ বিষয়ে উপমন্ত্রীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কয়েক দফা তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে কল দেওয়া হলেও তা রিসিভ হয়নি।
আরআর প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের প্রোপ্রিয়েটর ও বাংলাদেশ মুদ্রণশিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জহুরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সবমিলিয়ে এখনো ৪০ শতাংশ বই ছাপানো বাকি। ডিসেম্বর তো শুরু হলো। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রেসের কাজ চলবে। শতভাগ বই শিক্ষার্থীর হাতে পৌঁছে দিতে হলে তা ফেব্রুয়ারির আগে সম্ভব নয় বলে আমি মনে করি।’
এএএইচ/এসএনআর/এমএস