জাতীয়

এক আসনে লড়তে চান তিন নিবন্ধিত দলের চেয়ারম্যান

# তিন প্রার্থীই সুন্নিয়ত এবং ত্বরিকতপন্থি# তারা নিজ দলের প্রার্থী হলেও ভোট বিভক্ত বড় দুই দলে # ভোটারদের বড় অংশ মাইজভাণ্ডার দরবারের অনুসারী# আওয়ামী লীগের অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন# এবারও মহাজোটের সমর্থন প্রত্যাশা করছেন নজিবুল বশর

Advertisement

চট্টগ্রাম-২, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ২৭৯ নম্বর আসন। জেলার ফটিকছড়ি উপজেলা নিয়ে আসনটি গঠিত। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত মোট ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্য তিনটি দলের চেয়ারম্যান লড়তে চান এ আসনের প্রার্থী হিসেবে। তারা নিজ নিজ দলীয় মনোনয়নপত্রও জমা দিয়েছেন।

এই তিন প্রার্থী হলেন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান মাওলানা এম এ মতিন এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আলহাসানী আল মাইজভাণ্ডারী। তিন প্রার্থীই সুন্নিয়ত এবং ত্বরিকতপন্থি। এ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন প্রয়াত সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের কন্যা খাদিজাতুল আনোয়ার সনি।

আরও পড়ুন: মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী কে কোন আসন থেকে মনোনয়ন পেলেন

Advertisement

জানা যায়, মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফের কারণে ফটিকছড়ির আলাদা একটি ইতিহাস রয়েছে। ফটিকছড়ির ভোটারদের মধ্যে একটি বড় অংশ মাইজভাণ্ডার দরবারের অনুসারী। যারা সুন্নিয়ত এবং ত্বরিকতপন্থি। আবার দরবার অনুসারী হলেও ভোটাররা জাতীয় রাজনীতির মতোই দুই ধারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে বিভক্ত। এবার রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় সারাদেশে ‘ডামি’ প্রার্থীর নামে আওয়ামী লীগের অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন। কদর রয়েছে সরকার সমর্থিত ছোট দলগুলোরও।

ছোট দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক। অন্য দুই দল বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টিও (বিএসপি) সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় রয়েছে। সুন্নিয়তপন্থি ভোটারদের সমর্থনের সুযোগ কাজে লাগাতে ফটিকছড়িতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে এ তিনটি দল।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ১৯ নম্বরে নিবন্ধন পায় তরিকত ফেডারেশন। ২০০৮ সালের ৯ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন পায় দলটি। দলটির নির্বাচনী প্রতীক ‘ফুলের মালা’। কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঢাকার ধানমন্ডিতে। দলটির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী।

নির্বাচন কমিশনে ৩৫ নম্বর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পায় বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। ২০০৮ সালের ২০ নভেম্বর নিবন্ধন পায় দলটি। দলটির নির্বাচনী প্রতীক ‘মোমবাতি’। কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঢাকার ধানমন্ডিতে। দলটির চেয়ারম্যান মাওলানা এম এ মতিন।

Advertisement

আরও পড়ুন: নৌকা চান ৮৭ জন, আছেন আসামি-অপরাধে অভিযুক্তরাও

এ তিন দলের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে সবশেষ নিবন্ধিত দল বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)। দলটির নিবন্ধন নম্বর ৪৯। চলতি বছরের ১০ আগস্ট দলটিকে নিবন্ধন দেয় নির্বাচন কমিশন। দলটির নির্বাচনী প্রতীক ‘একতারা’। কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঢাকার মিরপুরে। দলটির চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ।

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচনে এ তিনজনই প্রার্থী হয়েছিলেন। তার মধ্যে ফটিকছড়ি আসনে মহাজোটের সমর্থন নিয়ে নৌকা প্রতীকে দুই লাখ ৩৮ হাজার ৪৩০ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। একই আসনে মোমবাতি প্রতীক নিয়ে ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১০ হাজার ১৭৪ ভোট পান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ। এবার নতুন রাজনৈতি দল নিবন্ধন পাওয়ায় নিজের দল বিএসপি থেকে নির্বাচন করছেন তিনি।

অন্যদিকে গত জাতীয় নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১১, ১২ এবং ১৩ আসনে ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে মোমবাতি প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মাওলানা এম এ মতিন। তার মধ্যে মোমবাতি প্রতীকে চট্টগ্রাম-১১ আসনে ৫ লাখ ৭ হাজার ৪০৯ জন ভোটারের মধ্যে ১ হাজার ২৩৮ ভোট, চট্টগ্রাম-১২ আসনে ২ লাখ ৮৫ হাজার ৯৬১ ভোটারের মধ্যে ৭ হাজার ২২৬ ভোট এবং চট্টগ্রাম-১৩ আসনে ৩ লাখ ১০ হাজার ৩১৩ ভোটারের মধ্যে ৩ হাজার ৭৯৪ ভোট পান মাওলানা এম এ মতিন। তিনি এবার চট্টগ্রাম-২ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। প্রার্থী হয়েছেন চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনেও।

এ বিষয়ে মাওলানা এম এ মতিন জাগো নিউজকে বলেন, আমরা জোটগতভাবে কোনো নির্বাচন করছি না। এককভাবে নির্বাচন করছি। আমি দলের পক্ষ থেকে ফটিকছড়ি এবং পটিয়া আসন থেকে এককভাবে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি।

তিনি বলেন, ফটিকছড়িতে আমাদের বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে। ইসলামী ফ্রন্টের বিশাল কর্মী বাহিনী রয়েছে। অন্য দুই পার্টির চেয়ারম্যান মাইজভাণ্ডার দরবারের আওলাদ। ওনারা তো দুজন। ওনাদের নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু মাইজভাণ্ডার দরবারে ৫০-৬০ জন আওলাদ রয়েছেন। অন্য সবার সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক রয়েছে। সাইফুদ্দীন সাহেব গত নির্বাচনে মোমবাতি নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। তবে এবার সুন্নিয়তপন্থিদের ভোটগুলো কিছুতেই ভাগ হবে না বলে মনে করেন তিনি।

আরও পড়ুন: মিরসরাই আসনে ৫৪ বছর পর নৌকার মাঝি পরিবর্তন

এম এ মতিন আরও বলেন, মাইজভাণ্ডার দরবার ছাড়াও ফটিকছড়িতে আরও অনেক দরবার রয়েছে। সবগুলো দরবারের ইসলামী ফ্রন্ট ও আমার সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে। তারাও মনে করেন, বর্তমান সময়ে দরবারের জন্য যে খেদমত প্রয়োজন, ইসলামী ফ্রন্ট এবং আমার দ্বারা সেটি আরও ভালোভাবে করা সম্ভব।

জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী বিএসপি চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আলহাসানী আল মাইজভান্ডারী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমরা কোন জোটে নেই। এককভাবে নির্বাচন করছি। আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।

গত জাতীয় নির্বাচনে সাইফুদ্দীন আহমদ মোমবাতি প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট থেকে নির্বাচন করেছিলেন। এবার সুন্নিয়তপন্থি হিসেবে মোমবাতি প্রতীকের সাথে তার কোনো দ্বন্দ্ব হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবার যিনি মোমবাতি প্রতীকে নির্বাচন করছেন তার বাড়ি ফটিকছড়িতে নয়, তিনি বহিরাগত। গত নির্বাচনে আমি যে ভোটগুলো পেয়েছিলাম, তিনি (এম এ মতিন) মনে করেছেন সেই ভোটগুলো উনার। কিন্তু ওই ভোটগুলো আমার ব্যক্তিগত। সেখানে বহিরাগত প্রার্থীর কোনো মূল্যায়ন হবে না।

তিনি বলেন, ওই আসনে আমাদের নিজস্ব ভোট রয়েছে। কোনো পার্টি ছাড়াই আমাদের ব্যক্তিগত ইমেজের ভোট রয়েছে ৩০-৪০ হাজার। সেখানে আমার নিজের বাড়ি, আমার নিজের এলাকা। এলাকার মানুষের সুখ-দুঃখে সবসময় আমি পাশে থাকি।

আসনটিতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী দেওয়া হলেও এবারও ১৪ দলীয় জোটের সমর্থন প্রত্যাশা করছেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী।

আরও পড়ুন: নৌকার টিকিট পেতে ১১ আওয়ামী লীগ নেতার দৌড়ঝাঁপ

এ বিষয়ে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, দল মনোনয়ন দিয়েছে, কিন্তু এখনো নৌকা কাউকে দেওয়া হয়নি। যে যা-ই বলুক, আমরা জোটে আছি। জোটের বাইরে কোনো হিসাব নেই। বঙ্গবন্ধুকন্যা আমাদের কথা দিয়েছেন। শেখ হাসিনা কখনো কথার বরখেলাপ করেন না। এরচেয়ে বেশি কিছু বলার সুযোগ নেই।

নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত তিনটি দলের চেয়ারম্যান এই একটি আসন থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফটিকছড়ির গুরুত্ব বেশি, তাই তিন পার্টির চেয়ারম্যান এখানে ভোট করতে চান। আমার যেহেতু এখানে গ্রামের বাড়ি তাই আমি ফটিকছড়ি থেকেই নির্বাচন করবো।

নজিবুল বশর বলেন, মাইজভাণ্ডার অনেক বড় দরবার। এখানে যে যার মতো ভোট করবেন। কেউ কারও ভোট কেড়ে নিতে পারবেন না। কেউ যদি বলেন, মাইজভাণ্ডারের ভোট ব্যাংক তাদের, তাহলে নির্বাচনের পর হিসাব করে দেখা যাবে কে কত ভোট পান।

ইকবাল হোসেন/এমকেআর