দেশজুড়ে

পদ্মায় বালুখেকোদের তাণ্ডবে ফসলি জমি হারাচ্ছেন কৃষকরা

পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুরে পদ্মা নদীতে বালুখেকোদের তাণ্ডব চলছেই। অতিরিক্ত বালু উত্তোলনের ফলে নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে নদী পাড়ের ভাদুরিয়াডাঙ্গী এলাকার ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বালু উত্তোলন বন্ধে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করেও কোনো সুফল পাচ্ছেন না। প্রতিবাদকারী অনেক চাষি উল্টো হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

Advertisement

জানা গেছে, চরতারাপুরের ভাদুরিয়াডাঙ্গী এলাকায় পদ্মা নদীতে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০টি ড্রেজার চালিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। শতাধিক ট্রলির মাধ্যমে এসব বালু যাচ্ছে পাবনার পাকশী, সুজানগর, কুষ্টিয়ার পাংশা, কুমারখালী ও রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে। প্রতিদিন প্রায় ৩০-৪০ লাখ টাকার বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। বালুখেকোরা অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তদের পাহারায় বালু ব্যবসা পরিচালনা করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুজানগর ও সদর উপজেলার কয়েকজন চিহ্নিত বালুখেকো এ কাজের সঙ্গে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই হয়রানির শিকার হতে হয়।

ভাদুরিয়াডাঙ্গী এলাকার শাহীন খান, সাইফুল ইসলাম বাদশা, এনামুল হক, আব্দুল হারুন, সোবহান প্রামাণিকসহ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলেন, বালু উত্তোলনের ফলে নদীতে শুরু হয়েছে ভাঙন। ভাঙনে প্রতিদিন কয়েক বিঘা করে ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে খুব শিগগিরই এই এলাকায় ফসলি জমি বলতে আর কিছু থাকবে না।

Advertisement

তারা জানান, তারা অনেকবার মানববন্ধন করেও কোনো সুফল পাননি। উল্টো প্রতিবাদ করায় বালুখেকোদের দ্বারা অনেক কৃষক হয়রানির শিকার হয়েছেন।

তারা আরও জানান, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনও, নৌ-পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সকল মহলে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে তারা সর্বস্বান্ত হয়ে যাবেন।

চরতারাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক বলেন, ‘বালু উত্তোলনের ফলে আমার ইউনিয়নের কৃষকদের জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আমি স্থানীয় এমপি, ডিসি, এসপিসহ বিভিন্ন জায়গায় বলেছি, কিন্তু কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। কারণ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি এই বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত। এরা স্বার্থান্বেষী মহল। নিজেদের স্বার্থের জন্য দলের নাম ভাঙান।

তিনি বলেন, প্রশাসনকে বলেছি বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। আমরা অবৈধভাবে বালু কেটে কৃষকের জমির ক্ষতি করতে দেবো না। প্রয়োজনে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছেও আবেদন করবো।

Advertisement

এ ব্যাপারে পাবনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিদা আক্তার বলেন, যখন মানববন্ধন হয়েছিল সেখানে আমি গিয়েছিলাম। তখন বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল। আমি কৃষকদের বলেছিলাম আবার বালু উত্তোলন করলে আমাকে জানাতে। কারণ ওই অঞ্চলে বালু উত্তোলনের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবো।

পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এজন্য জেলা প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিএ ও নৌ-পুলিশের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এফএ/জেআইএম