শেষ হয়ে যাচ্ছে ২০২৩। কিন্তু আফ্রিকা, ইসরায়েল-গাজা ও ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। এই সংকট বিস্ফোরকের মতো। সামনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তাই ২০২৪ সাল হতে পারে ১৯৪৫ সালের বিশ্ব যুদ্ধের পর নতুন ব্যবস্থা।
Advertisement
২০২০ সাল ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। ১৯ শতকের পর প্রথমবারের মতো বিশ্ব জিডিপিতে পশ্চিমের অংশ ৫০ শতাংশে নেমে যায়। ভারত ও তুরস্কের মতো দেশগুলো বিশ্বাস করে ১৯৪৫ সালের পরে তৈরি করা বিশ্বব্যাপী সংস্থাগুলো তাদের উদ্বেগের প্রতিফলন করে না। চীন ও রাশিয়া এই ব্যবস্থাকে উল্টে ফেলতে চায়।
যদিও আমেরিকার অর্থনীতি এখনো প্রসিদ্ধ। তবে একমেরুকরণও শেষ হয়ে গেছে। ইউরোপ ও জাপানের মতো মিত্রদের অর্থনীতি কমছে। মার্কিন বৈশ্বিক ভূমিকায়ও মধ্যবিত্তদের সমর্থন কমেছে। বিচ্ছিন্নতার ভাব রয়েছে রিপাবলিকানদের মধ্যে।
বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতি ও বাইডেন প্রশাসনের বৈদেশিক নীতি বাস্তবায়নে ২০২৩ সালে ব্যস্ত ছিল আমেরিকা। নির্দিষ্ট কিছু আদর্শ বাস্তবায়ন করা হয়। দেশটির প্রথম অগ্রাধিকার ছিল আফগানিস্তান ত্যাগ করা এবং প্রয়োজনীয় বিষয়কে এশিয়ায় স্থানান্তর করা। এর অন্যতম লক্ষ্য ছিল চীনকে ঠেকানো। এশিয়া প্যাসিফিক ও ইউরোপে মিত্ররা পুনরুজ্জীবিত হয়। প্রসারিত হয় ন্যাটো। যদিও ইউক্রেন এখনো ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। জ্বালানি ও প্রযুক্তিখাতে প্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপর আরোপ করা হয় নিষেধাজ্ঞা।
Advertisement
ভূরাজনীতি সহনীয় তবে রয়েছে অস্থিরতা। ১৯৯০ এর দশকে অনেক দেশ স্বাধীনতা, বাজার অর্থনীতি ও নিয়মভিত্তিক বিশ্বায়নের একটি স্ব-শক্তিশালী চক্রের আকাঙ্ক্ষা করেছিল। এখন পপুলিজম, হস্তক্ষেপবাদী অর্থনীতি ও লেনদেনের বিশ্বায়নে একটি অপ্রত্যাশিত চক্র রয়েছে। ফলে ২০২৪ সালের জন্য তিনটি হুমকি আসন্ন।
প্রথমত, দায়মুক্তির প্রবণতা বেড়েছে। গত ৩৬ মাসে আফ্রিকার অন্তত ছয়টি দেশে সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে। কোনো ধরনের চাপ ছাড়াই আর্মেনিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়িত হয়েছে আজারবাইজান। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই ইরানের আর্শীবাদপুষ্টদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। এই ধারা ২০২৪ সালে আরও প্রসারিত হতে পারে।
দ্বিতীয় বিষয়টি হলো চীন, ইরান ও রাশিয়ার সমন্বিত উত্থান। যদিও পশ্চিমাদের মতো তাদের সাধারণ লক্ষ্য নেই। বিশ্ব অর্থনীতিতে অন্য দুই দেশের চেয়ে চীনের অংশগ্রহণ অনেক বেশি। তবে তাদের একটি কমন লক্ষ্য আছে সেটি হলো মার্কিন প্রভাব কমানো। রাশিয়া ও ইরান থেকে তেল কিনছে চীন। তারা কেউই হামাস কিংবা রাশিয়ার সমালোচনা করছে না। প্রযুক্তিখাতে তাদের সমন্বয় বাড়ছে। পশ্চিমা অর্থনীতিকে পাশ কাটাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে চীন। এখন এটির অর্ধেকের মতো বাণিজ্য নিজস্ব মুদ্রায় হয়। রাশিয়ায় ড্রোন রপ্তানি করছে ইরান। পারমাণবিক ক্ষেত্রে সমন্বয় করছে ওয়াশিংটন ও বেইজিং। প্যাসিফিকে বাড়িয়েছে টহল। এই জোট কত দূর যেতে পারে তা দেখা যাবে ২০২৪ সালে।
চূড়ান্ত হুমকি হলো পশ্চিমা জোটের ভঙুরতা। ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ ঐক্যবদ্ধ, জনসমর্থনও রয়েছে, ১৯৪৫ সাল পরবর্তী বিশ্ব নীতিও অক্ষত। কিন্তু পশ্চিমাদের বাইরের অনেকেই এক্ষেত্রে অনৈক্য দেখিয়েছে। বর্তমানে একটি অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। ইউক্রেনে অর্থয়ানে খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই বিরোধিতা রয়েছে। বিশেষ করে রিপাবলিকানদের মধ্যে। তাছাড়া গাজায় ইসরায়েলি হামালার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও রয়েছে অনৈক্য। এই বিষয়কে সামনে রেখে পশ্চিমাদের দ্বিচারিতা সামনে চলে এসেছে। অন্যান্য সংকটও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। প্রশ্ন উঠছে তাইওয়ানকে রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কী ইউরোপ যোগ দেবে?
Advertisement
২০২৪ সালের শেষের দিকে মার্কিন নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনে যদি সত্যিকার অর্থে একজন বৈশ্বিক নেতা নির্বাচিত হয় তাহলে কিছুটা স্বস্তি ফিরতে পারে। স্থিতিশীলতা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে দীর্ঘ লড়াইয়ের মুখোমুখি যুক্তরাষ্ট্র। করণীয় তালিকায় রয়েছে ইউরোপীয় পরিবর্ধন, ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা গভীরতর করা, ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে একটি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান।
এমএসএম