রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ হবিবুর রহমান হলে মধ্যরাতে উচ্চশব্দে গান বাজাতে নিষেধ করায় সাংবাদিকসহ শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতারা হলে অবৈধভাবে অবস্থান করছেন জানা গেছে।
Advertisement
এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হবিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আল-আমিন আকাশ ২১১ নম্বর রুমে দুজনের সিট একাই দখল করে অবস্থান করছেন। অন্যদিকে তার অনুসারী আমির হামজা ও নাজিম হবিবুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী না হয়েও ক্ষমতাবলে ২০৮ নম্বর রুম দখল করে আছেন। তাদের দাবি, হল প্রভোস্টের সহায়তায় কিছুদিনের জন্য ‘অতিথি’ হিসেবে থাকছেন এ হলে। তবে এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শরিফুল ইসলাম।
হল সূত্রে জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তার করতে কক্ষ দখলে নিয়ে আবাসিক হলে অবৈধভাবে শিক্ষার্থী রাখেন ছাত্রলীগ নেতা আকাশ। তিনি হবিবুর রহমান হলের ২০৫ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী হলেও পরবর্তী সময়ে কক্ষ পরিবর্তন করে ২১১ নম্বর কক্ষে যান। এ কক্ষের আবাসিক ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের রকি মণ্ডল এবং পরিসংখ্যান বিভাগের কিরণ রবি দাস। পরবর্তী সময়ে কিরণ দাস ২০৫ ও রকি ২০৬ নম্বর কক্ষে গেলে ২১১ নম্বর কক্ষ একাই দখলে নিয়ে কয়েক বছর ধরে অবস্থান করছেন ছাত্রলীগ নেতা আকাশ।
আরও পড়ুন: মধ্যরাতে শিক্ষার্থী ও সাংবাদিককে মারধর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের
Advertisement
এছাড়া প্রভাব খাটিয়ে ২০৮ নম্বর কক্ষও দখল নিয়ে তার অনুসারী আমির হামজা ও নাজিমকে রাখেন তিনি। তারা কেউ ওই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নয়। আমির হামজা শহীদ শামসুজ্জোহা হল এবং নাজিম নবাব আব্দুল লতিফ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তাছাড়া ২১৬ নম্বর কক্ষের সম্রাট ও ইমরান ওই সিটের আবাসিক শিক্ষার্থী নয়। অথচ সিট ফাঁকা না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী হলে উঠতে না পেরে ভোগান্তিতে রয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিক বিভাগের শিক্ষার্থী ইমন হাসান বলেন, দুইমাস আগে হলে আবাসিকতা পেলেও সিট ফাঁকা না থাকায় হলে উঠতে পারছি না। কবে সিট ফাঁকা হবে সেটাও সুনির্দিষ্টভাবে জানা যাচ্ছে না। তবে মাসে মাসে সিট ভাড়া দিতে হচ্ছে।
অন্য হলের হয়ে হবিবুর হলে থাকার কারণ জানতে চাইলে আমির হামজা বলেন, তিনি শহীদ শামসুজ্জোহা হলে এখনো ওঠেননি। তবে নিজের আর্থিক সমস্যার কারণে শহীদ হবিবুর রহমান হলে নিজ বিভাগের এক ভাইয়ের কক্ষে অতিথি হিসেবে অবস্থান করছেন। হল প্রাধ্যক্ষ তাকে বের হওয়ার নির্দেশনা দিলে তিনি বের হয়ে যাবেন।
হলে অবৈধভাবে থাকা নাজিম বলেন, তিনি নবাব আব্দুল লতিফ হলে উঠেছিলেন। কিন্তু হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তার কাছে অর্থ দাবি করায় তিনি তার বন্ধু হামজার পরামর্শক্রমে হবিবুর রহমান হলে এসে আপাতত থাকছেন।
Advertisement
এ বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা আল-আমিন আকাশ বলেন, ‘আমার রুমে আমিসহ আরেকজন থাকি। তবে সে কম থাকে।’
২০৮ নম্বর রুমে অনুসারীদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তারা এ হলের না হলেও ওই রুমটি জিহাদের নামে আছে। তারা গেস্ট হিসেবে সেখানে এখন থাকছে। এ বিষয়টি নিয়ে স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি আমরা।’
হলে সিট দখল ও অন্য হলের শিক্ষার্থী হয়েও হবিবুর হলে থাকা প্রসঙ্গে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম বলেন, আমি এ হলে অবস্থানরত অন্য হলের শিক্ষার্থীদের বের হয়ে যেতে এরআগে নোটিশ দিয়েছিলাম। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতা পেলে খুব শিগগির অভিযান পরিচালনা করবো।
তিনি আরও বলেন, ২০৮ কক্ষে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে দুয়েকদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অন্য হলের কাউকে হলে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
রোববার (২৬ নভেম্বর) দিনগত রাত দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের ২১৬ নম্বর কক্ষে উচ্চশব্দে গানবাজনা, চিৎকার ও লাফালাফি করছিলেন হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি আল-আমিন আকাশ এবং তার অনুসারী ইমরান ও সম্রাট। সাউন্ড বন্ধ করতে বললে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের ঝামেলা হয়। এ বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহের কাজে গেলে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রায়হান ইসলামের ওপর হামলা চালান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে হল প্রশাসন। তদন্ত শেষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি। বুধবার বিকেলে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন কমিটির আহ্বায়ক শহীদ হবিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষক ড. গৌতম দত্ত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একটি তদন্ত প্রতিবেদনে পেয়েছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে।
মনির হোসেন মাহিন/এসআর/এমএস