আন্তর্জাতিক

গভীর টানেলে ১৭ দিন কীভাবে কেটেছে শ্রমিকদের?

অন্ধকার স্যাঁতসেঁতে টানেল। ভরসা বলতে ছিল টানেলে কাজ করার জন্য লাগানো বৈদ্যুতিক বাতি। দিন-রাতের হিসাব বুঝতে বুঝতে সেই টানেলেই ১৭ দিন কাটিয়ে দিয়েছেন ৪১ জন শ্রমিক।

Advertisement

বেরিয়ে আসবেন, এই আশা নিয়ে চালিয়ে গিয়েছিলেন বেঁচে থাকার লড়াই। সেই যুদ্ধে তারা জিতেওছেন। আটকে পড়ার ১৭ দিনের মাথায়, মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) ভারতের উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীর ভাঙা টানেল থেকে বেরিয়ে এসেছেন ওই ৪১ জন। কিন্তু অন্ধকার টানেলে কী ভাবে সময় কেটেছিল তাদের? কী ভাবেই চালিয়ে গিয়েছিলেন লড়াই? টানেল থেকে বেরিয়ে অভিজ্ঞতা শোনালেন এক শ্রমিক।

আরও পড়ুন>হার না মানা উদ্ধার অভিযানে ‘নতুন জীবন’ পেলেন ৪১ শ্রমিক

ঝাড়খণ্ডের খুঁটি জেলা থেকে শ্রমিক হিসেবে উত্তরকাশীর টানেলে কাজ করতে গিয়েছিলেন ৩২ বছর বয়সী জমরা ওঁরাও। ধস নামার কারণে বাকি শ্রমিকদের সঙ্গে তিনিও টানেলে আটকে পড়েছিলেন।

Advertisement

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর সঙ্গে কথা বলার সময় জমরা জানান, ১২ নভেম্বর ভোরে টানেলে কাজ করার সময় একটা বিকট শব্দ শুনতে পান তারা। তাদের চোখের সামনেই হুড়মুড়িয়ে ধসে পড়ে সুড়ঙ্গের একাংশ। জমরার কথায়, আমরা প্রাণ বাঁচাতে দৌড় দিয়েছিলাম, লাভ হয়নি। কেউ বেরোতে পারিনি। সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। কিছু ক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারি, অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য আটকে পড়েছি। সবাই অস্থির হয়ে পড়েছিলাম। খুব খিদে পেয়েছিল। ভয় গ্রাস করছিল। সাহায্যের জন্য প্রার্থনা শুরু করি। কিন্তু আশা ছাড়িনি।

কেমন ছিল উৎকণ্ঠার ১৭ দিন? এমন প্রশ্নে জমরা বলেন, টানেলে আটকে পড়ার পর টানা ২৪ ঘণ্টা অভুক্ত থাকতে হয়েছিল তাদের। তারপর খাবার পাঠায় প্রশাসন। প্রথম বার খাবার হিসেবে এসেছিল মুড়ি ও এলাচ। সেই খাবার খেয়েই লড়াই চালিয়ে যাওয়ার শক্তি পেয়েছিলেন বলে জানান জমরা।

তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টা পর যখন আমরা প্রথম খাবার খেলাম, তখন উপলব্ধি হলো যে বেঁচে আছি। আমরা বুঝতে পারি যে কেউ ঠিক আমাদের কাছে পৌঁছাবে। আমাদের উদ্ধার করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়। আমদের আশা আরও বাড়ে।

জমরা আরও জানিয়েছেন, কংক্রিটের টানেলের মধ্যে সময় পার করতে মোবাইলের গেমই ছিল তাদের ভরসা। মোবাইলে লুডো খেলে অনেকটা সময় পার হয়েছে তাদের। বাইরে থেকে চার্জার পাঠিয়ে দেওয়ায় ফোন চার্জ করতে অসুবিধা হয়নি। তবে নেটওয়ার্ক না থাকায়, কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। মোবাইলে গেম খেলা ছাড়া একে অপরের সঙ্গে সুখ-দুঃখের কথা বলে এবং মনোবল বাড়িয়েও টানেলের মধ্যে তারা সময় কাটিয়েছিলেন বলে জমরা জানিয়েছেন।

Advertisement

উত্তরকাশীর টানেলে যে ৪১ জন আটকে ছিলেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ঝাড়খণ্ডের শ্রমিক। তাদের মধ্যেই ছিলেন জমরা। জমরা জানিয়েছেন, স্ত্রী ও তিন সন্তানকে রেখে মাসে ১৮ হাজার টাকার জন্য তিনি ওই টানেলে কাজ করতে গিয়েছিলেন। ১৭ দিন পর মঙ্গলবার খোলা আকাশে নিশ্বাস নেওয়ার পর জমরা বলেন, আমি ভালো আছি। আমরা ঈশ্বরে বিশ্বাস রেখেছিলাম এবং ঈশ্বর আমাদের শক্তি দিয়েছেন। এটাও বিশ্বাস রেখেছিলাম যেহেতু ৪১ জন আটকে রয়েছি, তাই কেউ ঠিক আমাদের উদ্ধার করবে। স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার জন্য ছটফট করছিলাম। যারা ১৭ দিন ধরে লাগাতার পরিশ্রম করে আমাদের উদ্ধার করেছেন, তাদের ধন্যবাদ।

জমরা আরও জানিয়েছেন, তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ। যদিও তিনি আর টানেলের কাজে হাত দেবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত বাড়িতে পৌঁছে নেবেন বলে জানিয়েছেন।

এমএসএম