সাহিত্য

ফারজানা মুন্নির চারটি কবিতা

 

সঞ্চয়

Advertisement

যা কিছু সঞ্চয় ছিল মিশিয়ে দিয়েছি স্রোতেহাত পাতো, মুক্তোর মতো কুড়িয়ে নাও ভাবো, আনন্দকে ছুঁয়ে পাড়ি দিচ্ছে বিরহ কান্তার।

অনুভব করো, কেউ তোমাকে চুমু খাচ্ছেকারো বেদনা উড়ে যাচ্ছে পাখি হয়েআমি এক বেদনা অপার।উড়ে যাচ্ছি সামুদ্রিক ঝড়ে।আমাকে নিঃসঙ্গ রেখে প্রেমিক-পুরুষ চুমু খায় মহাকালের ঠোঁটে।

ঝড়ে উড়ে যেতে যেতে ভাবি, কিছুটা বিরহ লিখিত থাকুকবুকের পাঁজরে।

Advertisement

****

পিপাসা রং

চলো, আজ ভুলে যাই সব আঁধারপুরোনো ভাঙন পুঁতে দিই অনুর্বর মৃত্তিকায়হৃদয় গহ্বর নিংড়ে জ্যোৎস্না পোহাইচলো, ভেসে যাই জল-হাওয়াময় সমুদ্রস্নানে।

কথাদের শবদাহ জ্বলে উঠুক চিতায়নিমিষেই নেমে যাক সমূহ বিষাদদুপুর মিলিয়ে গেলে বিকেলের দেহেচলো, আমরা জাগিয়ে তুলি মাঘের সন্ন্যাস।

Advertisement

জলে ডুবে গেলে কাঠ-পুতুলের গাকুয়াশা শুকিয়ে যায় সবুজ রঙের ভেতরপাতাদের পুড়তে দিলে জেগে ওঠে ছাইউড়ে যায় অচেনা প্রেমিকের মার্বেল চোখেআর ফিরে আসে নগ্ন আঁধার প্রেমিকার গায়ে।

চলো, বেদনার মুখোমুখি হয়ে ডুবে যাই পরস্পরডুবতে ডুবতে জেনে নিই পিপাসার রঙ।

****

প্রলাপ

বুকের পাঁজর থেকে তুলে আনি এক ফালি আকাশসিথানে তার অস্পষ্ট অবয়ব রেখে সূর্যোদয়ের আগেই ডুবে যাই, ডুবে যাই করাতের দাঁতে কাঠ ঠুকে।মিটিমিটি আঁধারে পৌষের হাড় কম্পিত রাতে ফালি আকাশ গায়ে মাখে মেকি ঢং। নৈঃশব্দ্যের ভাষায় কেঁদে ওঠে প্রাণ। চোখে ভাসে সন্তানের ক্ষুধা, সংসার-সংগ্রাম।

নির্বিঘ্নে চোখের জল চেয়ে দ্যাখে—দু’পাশে দুটি দুঃখী নদীর মতো ছুটে চলে বাবার রোজগার ও মায়ের যুদ্ধ-সংসার।

****

ভাঙন

দু’হাত ভরে বিরহ কুড়িয়ে নেয় রহস্যময় রাতজন্মের ক্ষতগুলো বিষাদের একতারা—অবিরাম বাজতে বাজতে ফুরিয়ে যায়, ফুরিয়ে যায় রক্তাভ পদচ্ছাপ আর উদ্যত কালো ছায়া রেখে।

পৌরাণিক গল্পে তুমি শায়িত এক অতিথি যোদ্ধা আগুনের লেলিহানে নিজেকে রেখে শব্দ পোড়াও, আরনিঃস্ব ধূলির চিরায়ত শোক জেগে ওঠে জলপ্রপাতের মতো।

তারপর ভুল ও ভাঙনের দাবি নিয়ে সমাগত হবে তোমার এক অদ্ভুত আক্ষেপ। আর বর্ষার বেনোজলে ভেসে যাবে পাড়,সবশেষে ঝুলে থাকা বৃক্ষমূলে তোমার বেজে উঠবে সুর,তারপর একদিন—বুকের ভেতর একটানা ঢেলে যাবে ক্ষরণের বিষ।

এসইউ/