রাজনীতি

এখনো কি আছে সংলাপের সময়?

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী সরকারদলীয় জোট ও সরকারের আনুকূল্য পাওয়া অন্য দলগুলো নির্বাচনী মাঠে। বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে এখনো অনড়। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে টানা চলছে হরতাল-অবরোধে মতো কর্মসূচি।

Advertisement

হরতাল-অবরোধে মারাত্মক বিপর্যয় না ঘটলেও জনজীবন ব্যাহত হচ্ছে। গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটছে রোজ। সরকারদলও মাঠে রয়েছে শান্তি সমাবেশ বা মিছিলের নামে। হরতাল-অবরোধের দিন নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন>> নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন শর্তহীন সংলাপ: পিটার হাস

কী ঘটবে সামনে? নির্বাচন কি আগের মতোই হবে? বিএনপি এখন কী করবে? নির্বাচন আদৌ হবে? এমন সব প্রশ্ন জনমনে। তবে এসব প্রশ্নের ভিড়ে সংলাপ বা আলোচনার ইস্যুটিও জিইয়ে রয়েছে। তফসিল ঘোষণা হলেও সংলাপ চলতে পারে বলে মনে করেন অনেকে। এমন তাগিদ রয়েছে বিদেশিদের পক্ষ থেকেও। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টিকে চিঠি দিয়ে শর্তহীন সংলাপের আহ্বানও জানিয়েছে কয়েকদিন আগে।

Advertisement

সংলাপ হতে পারে কি না- এমন প্রশ্ন নিয়ে জাগো নিউজের পক্ষ থেকে মতামত নেওয়া হয় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক এমএম আকাশ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার।

সংলাপের বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘আর সময় নেই। জাতি এখন নির্বাচনী উৎসবে মেতে আছে। এখন আর সংলাপ করার কোনো সুযোগ আছে বলে মনে করি না। তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে।’

আরও পড়ুন>> তফসিল বাতিল করে সংলাপের তাগিদ বিএনপিপন্থি পেশাজীবীদের

‘এর আগে তফসিলের মধ্যেও সংলাপ হয়েছে’-এমন প্রশ্নের জবাবে এই রাজনীতিক বলেন, ‘তখনকার প্রেক্ষাপট আর এখনকার প্রেক্ষাপট এক নয়। আর কার সঙ্গে সংলাপ করবো? বিএনপি তো জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। প্রতিনিয়ত আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছে। একটি সন্ত্রাসী দলের সঙ্গে কোনো আলোচনা হতে পারে না।’

Advertisement

যুক্তরাষ্ট্রের চিঠির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সংলাপের জন্য যে চিঠি দিয়েছে, তা অতীত আলোচনা বলে মনে করি। সময় এখন নির্বাচনের। আমরা নির্বাচন নিয়েই ব্যস্ত আছি।’

আর সময় নেই। জাতি এখন নির্বাচনী উৎসবে মেতে আছে। এখন আর সংলাপ করার কোনো সুযোগ আছে বলে মনে করি না। তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে।–মাহবুবউল আলম হানিফ

তবে জেলখানাতে বসেও আলোচনা হতে পারে- এমনটি উল্লেখ করে সরকার জোটের অন্যতম নেতা রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে জেলখানাতেও সংলাপ হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর বহুবার সংলাপ হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কার সঙ্গে সংলাপ করবো? বিএনপি তো শর্ত ছাড়া সংলাপে আসবে না। তারা নির্বাচনে আসবে না। বিএনপি শেখ হাসিনার পতন ছাড়া আলোচনায় বসবে না। এমন শর্তে তো কোনো সংলাপ হতে পারে না।’

আরও পড়ুন>> যে কারণে পেছাতে পারে নির্বাচন

তিনি বলেন, ‘বিএনপি আগে বলুক, তারা নির্বাচনে আসবে। তবেই সংলাপ হতে পারে। আর রাজনীতিতে সময় কখনই ফুরিয়ে যায় না।’

একই প্রসঙ্গে অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, ‘সংলাপের দায় নির্ভর করে সরকার দলের ওপর। তারা আন্তরিক হলেই কেবল সংলাপের মতো ঘটনা ঘটে। তবে এর জন্য জনচাপও গুরুত্বপূর্ণ। সরকার চাপ উপেক্ষা করে নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। কিন্তু সংকট তাতে বাড়বে ছাড়া কমবে না।’

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার পতনের দাবি জানিয়ে বিএনপি যে সংলাপের কথা বলছেন, সেটাও আর সম্ভব বলে মনে করি না। বিএনপিকে এই শর্ত থেকে সরে আসতে হবে। আবার সরকারকেও দল নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। তবেই সংলাপ সার্থক হবে বলে মনে করি।’

নির্বাচনের ন্যূনতম পরিবেশে সৃষ্টি না করে, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার কোনো উদ্যোগ না নিয়ে এবং বিএনপির অফিস তালাবদ্ধ করে, নেতাদের কারাগারে রেখে সংলাপের কোনো পরিবেশ আছে বলে আমি মনে করি না। পরিবেশ হোক তখন দেখা যাবে।-রুমিন ফারহানা

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আপাতদৃষ্টিতে কোনো নির্বাচন দেখছি না। এখন যা হচ্ছে, তা আসন ভাগাভাগির খেলা এবং সেটা প্রধানমন্ত্রীর একক ইচ্ছায়। সুতরাং, এটিকে আমি নির্বাচন বলতে রাজি নই।’

‘দ্বিতীয়ত নির্বাচনের ন্যূনতম পরিবেশে সৃষ্টি না করে, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার কোনো উদ্যোগ না নিয়ে এবং বিএনপির অফিস তালাবদ্ধ করে, নেতাদের কারাগারে রেখে সংলাপের কোনো পরিবেশ আছে বলে আমি মনে করি না। পরিবেশ হোক তখন দেখা যাবে।’

পরিবেশ তৈরির জন্য চাপ সৃষ্টি করতে হয়, সেখানে আপনারা কতটুকু সফল- জবাবে তিনি বলেন, ‘যেখানে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে গুলি চালানো হয়, যে দেশে বাবাকে না পেয়ে ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, মৃত ব্যক্তির সাজা হয়, সেই দেশে পরিবেশ তৈরি করা কীভাবে সম্ভব তা আপনারাই খুঁজে বের করেন। আমরা আমাদের সাধ্যমতো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।’

এএসএস/এএসএ/জেআইএম