ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে গত ২০ নভেম্বর ককটেল বিস্ফোরণ হয়। যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ-২ আদালতের সামনে ও মহানগর আদালতের হাজতখানার সামনে এ ঘটনা ঘটে। আদালত প্রাঙ্গণে থাকা আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ক্ষতি করার লক্ষ্যে এ বিস্ফোরণ ঘটানো হয় বলে দাবি তদন্তকারী কর্মকর্তার।
Advertisement
এতে আদালতে আসা বিচারপ্রার্থীসহ বিভিন্ন লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং আদালতের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে। পাশাপাশি বিঘ্নিত হয় আদালতের বিচার কার্যক্রম। এ ঘটনায় করা মামলায় হাফসা আক্তার পুতুল নামের এক নারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আদালতের মাধ্যমে তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: ঢাকা মহানগর আদালত প্রাঙ্গণে ককটেল বিস্ফোরণ
অভিযুক্ত হাফসা আক্তার পুতুল মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থানার ফুলতলা গ্রামের মোসলেম মাতুব্বরের মেয়ে। ঢাকার শ্যামপুর থানার সততা হাউজিং এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন তিনি। গত ২৬ নভেম্বর ওই বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন কোতোয়ালি থানার এসআই মো. বিল্লাল হোসাইন জনি। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
Advertisement
রিমান্ড আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, গত ২০ নভেম্বর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ডাকা হরতাল চলাকালে বিকেল ৩টা ৫২ মিনিটের দিকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পূর্ব পাশের গেটের সামনে অবস্থানকালে ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই। এরপর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত হাজতখানার উত্তর-পশ্চিম পাশে যাই। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই যে, অজ্ঞাতপরিচয় নাশকতা সৃষ্টিকারীরা বেআইনি ও বিদ্বেষপূর্ণভাবে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীসহ আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত লোকজনদের জীবন ও সম্পত্তি বিপন্ন অথবা গুরুতর ক্ষতি সাধনের লক্ষ্যে ঢাকা মাহনগর দায়রা জজ আদালত হাজতখানার উত্তর-পশ্চিম পাশে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে আদালতে আসা বিচারপ্রার্থীসহ বিভিন্ন লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং আদালতের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে। একই সঙ্গে আদালতের বিচার কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়।
বিস্ফোরণের দায়ে অভিযুক্ত নারী ও পুরুষ
আরও পড়ুন: বোরকা পরিহিত নারী ও পুরুষ আদালতে ককটেল নিক্ষেপ করে
তদন্ত কর্মকর্তা আরও উল্লেখ করেন, মামলাটি তদন্তকালে ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা ৫০ থেকে ৬০টি সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা হয়। এরপর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ও বিশ্বস্ত সোর্সের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিস্ফোরণকারী আসামি হাফসা আক্তার পুতুলকে শনাক্ত করি। পরে তার অবস্থান শনাক্ত করে রাজধানীর শ্যামপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন হাফসা আক্তার পুতুল।
Advertisement
গত ২০ নভেম্বর বিএনপির হরতাল চলাকালে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পরে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, বোরকা পরা এক নারী ও এক পুরুষ মহানগর দায়রা জজ আদালতের চারতলা থেকে ককটেল নিচে ফেলেন। এরপর তারা দ্রুত আদালত চত্বর থেকে চলে যান। এ ঘটনায় রাজধানীর কোতোয়ালি থানার এসআই (নিরস্ত্র) মো. কামরুল হোসেন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এতে অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করা হয়।
আরও পড়ুন: বিচারকদের ভয় দেখাতে আদালতে ককটেল হামলা
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আদালত প্রাঙ্গণে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় অভিযুক্ত হাফসা আক্তার পুতুলকে গ্রেফতার করেছি। তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। এরই মধ্যে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় জড়িত অপর আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।’
কোতোয়ালি থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের এসআই আশ্রফ আলী বলেন, ‘২৭ নভেম্বর হাফসাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে বিচারক তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।’
জেএ/কেএসআর/এমএস