ভ্রমণ

শীতে মিরসরাই ভ্রমণে ঘুরে আসুন একসঙ্গে ৫ স্পট

পাহাড়-সমুদ্র বেষ্টিত অপার সম্ভাবনাময় চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার পর্যটন শিল্প। হ্রদ, ঝরনা, পাহাড় ও গিরিখাদ থাকায় চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা হয়ে উঠেছে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান।

Advertisement

প্রতিবছরই বাড়ছে পর্যটকসংখ্যা। গত এক বছরে মিরসরাইয়ের হ্রদ, গিরিখাত ও ঝরনাগুলো দেখতে এসেছেন অন্তত ৩ লাখ পর্যটক। চলুন জেনে নেওয়া যাক মিরসরাই ভ্রমণে ঘুরে দেখবেন কোন কোন স্পট-

আরও পড়ুন: যে হোটেলের বেডরুম এক দেশে, বাথরুম অন্য দেশে

রূপসী ঝরনা

Advertisement

আপনার মনটা যতই খারাপ থাকুক। রূপসী ঝরনায় পা রাখলে আপনার মন ভালো হয়ে যাবে নিশ্চিত। রূপসী ঝরনার রূপের জাদু আপনাকে পাগল করবে। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যের আরেক নাম বড় কমলদহ রূপসী ঝরনা।

আঁকাবাঁকা গ্রামীণ সবুজ শ্যামল মেঠো পথ পার হয়ে পাহাড়ের পাদদেশে গেলেই শোনা যাবে ঝরনা পানি গড়িয়ে পড়ার অপরূপ নুপুরধ্বনি। দু’পাশে সুউচ্চ পাহাড়। সাঁ সাঁ শব্দে উঁচু পাহাড় থেকে অবিরাম শীতল পানি গড়িয়ে যাচ্ছে ছড়া দিয়ে।

রূপসী ঝরনা প্রথম দেখেই তার রূপে পাগল হবে যে কেউ। মেঘের মতো উড়ে আসা শুভ্র এ পানি আলতো করে ছুঁয়ে দেখলেই এর শীতল পরশ মুহূর্তে ক্লান্তি ভুলিয়ে দেবে। টলটলে শান্ত পানির চুপচাপ বয়ে চলার ধরনই বলে দেবে এর উৎস অবশ্যই বিশাল কিছু থেকে।

আরও পড়ুন: ৪০ বছরেও স্বাদ বদলায়নি গনি চাচার নেহারির

Advertisement

কিছুক্ষণের মধ্যেই পর্যটকেরা আবিষ্কার করবেন লাল আর নীল রঙের ফড়িঙের মিছিল! যত দূর পর্যন্ত ঝিরিপথ গেছে তত দূর পর্যন্ত তাদের মনমাতানো ঝিঁঝি পোকার গুঞ্জন শোনা যায়।

চলার পথে শোনা যায় হরিণের ডাক। অচেনা পাখিদের ডাক, ঘাসের কার্পেট বিছানো উপত্যকার সাথে। রূপসী ঝরনার পানিতে গোসল করার লোভ সামলানো কারো পক্ষেই সম্ভব নয়।

দেশের বিভিন্ন স্থান হতে যে কোন বাস যোগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড়দারোগাহাট বাজারে নামবেন। এরপর সিএনজি-অটোরিকশা যোগে বাজারের উত্তর পাশের ব্রিকফিল্ড সড়ক দিয়ে পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত যাবে।

আরও পড়ুন: ঘুরে আসুন চায়ের রাজ্যে ছোট্ট সাজেকে

এরপর পায়ে হেঁটে ঝরনায় যাওয়া যাবে। অথবা যে কোনো বাস থেকে ব্রিকফিল্ড সড়কের মাথায় নেমে অটোরিকশা ছাড়া আধা কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে যেতে পারবেন।

খৈয়াছড়া ঝরনার অপরূপ সৌন্দর্য

প্রকৃতির নান্দনিক তুলিতে আঁকা সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছে দেশের ভ্রমণ পিয়াসী মানুষ। অনেকে রাতের বেলায় চাঁদের আলোয় ঝরনার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পাহাড়ের পাদদেশে তাবু টাঙ্গিয়ে অবস্থান করছে।

প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি সেতুবন্ধন করে, সবুজের চাদরে ঢাকা বনানী রূপের আগুন ঝরায়, যেখানে প্রকৃতি খেলা করে আপন মনে, ঝুম ঝুম শব্দে বয়ে চলা ঝরনা ধারায় গা ভিজিয়ে মানুষ যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ থেকে নিজেকে ধুয়ে সজীব করে তুলছে খৈয়াছরা ঝরনায়।

আরও পড়ুন: রাজস্থান ভ্রমণে কী কী দেখবেন?

গ্রামের সবুজ শ্যামল আঁকা বাঁকা মেঠো পথ পেরিয়ে শরীরটা একটু হলেও ভিজিয়ে নেয়া যায় নিঃসন্দেহে। আট স্তরের ঝরনা দেখতে দেশি বিদেশি পর্যটকের ভিড় পড়েছে। দেশের অন্যতম বড় প্রাকৃতিক ঝরনাটি দেখতে প্রতিদিন ছুটে আসেন হাজার হাজার দেশি বিদেশি পর্যটক।

উপজেলার খৈয়াছরা ইউনিয়নের বড়তাকিয়া বাজারের উত্তর পাশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৪.২ কিলোমিটার পূর্বে ঝরনার অবস্থান। এরমধ্যে ১ কিলোমিটার পথ গাড়িতে বাকি পথ হেঁটে যেতে হবে।

রুপে মাতোয়ারা হবেন রূপসী ঝরনার

দু’পাশে সুউচ্চ পাহাড়। তুমুল শব্দে উঁচু পাহাড় থেকে অবিরাম শীতল পানি গড়িয়ে যাচ্ছে ছড়া দিয়ে। রূপসী ঝরনা প্রথম দেখেই তার রূপে পাগল হবে যে কেউ। মেঘের মতো উড়ে আসা শুভ্র এ পানি আলতো করে ছুঁয়ে দেখলেই এর শীতল পরশ মুহূর্তে ক্লান্তি ভুলিয়ে দেবে।

আরও পড়ুন: ইতালির যে ২ শহরে সংসার পাতলেই পাবেন ৩৫ লাখ টাকা

টলটলে শান্ত পানির চুপচাপ বয়ে চলার ধরনই বলে দেবে এর উৎস অবশ্যই বিশাল কিছু থেকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পর্যটকেরা আবিষ্কার করবেন লাল আর নীল রঙের ফড়িঙের মিছিল!

যত দূর পর্যন্ত ঝিরিপথ গেছে তত দূর পর্যন্ত তাদের মনমাতানো ঝিঁঝি পোকার গুঞ্জন শোনা যায়। চলার পথে শোনা যায় হরিণের ডাক। অচেনা পাখিদের ডাক, ঘাসের কার্পেট বিছানো উপত্যকার সাথে। রূপসী ঝরনা পানিতে গোসল করার লোভ সামলানো কারো পক্ষেই সম্ভব নয়।

বছরের পর বছর ঝরনা পানি গড়িয়ে যাচ্ছে এই ছড়া বয়ে। কয়েক বছর পূর্বে রূপসী ঝরনা নামে আবিস্কার হলো এটি। মিরসরাই উপজেলার সর্ব দক্ষিণে বড় দারোগারহাটের উত্তরে পাহাড়ের কোল অবস্থিত এক দৃষ্টিনন্দন, অনিন্দ্যসুন্দর এক জলপ্রপাত।

আরও পড়ুন: মাধুরী দীক্ষিতের নামে জনপ্রিয় এই লেক দেখতে কোথায় যাবেন?

মিরসরাইয়ের অন্যান্য ঝরনাগুডেলার চেয়ে এই ঝরনায় যাওয়া অনেকটাই সহজ। সৌন্দর্য্যে কোন অংশেই খৈয়াছড়া, নাপিত্তাচড়া ঝরনার চেয়ে কম না।

এই ঝরনার যাওয়ার পথে দৃষ্টিনন্দন ছড়া, দু’পাশের দন্ডায়মান পাহাড়, সবুজ প্রকৃতি, গুহার মত ঢালু ছড়া, তিনটি ভিন্ন ভিন্ন অপরূপ ঝরনা রূপসীর সৌন্দর্য্যকে অন্যান্য ঝরনা থেকে আলাদা করেছে।

মুহুরীর চরে পানি আর রোদের খেলা

প্রকৃতির আরেক নাম মুহুরী। যেখানে আছে আলো-আঁধারির খেলা। আছে জীবন-জীবিকার নানা চিত্র। মুহুরীর চর, যেন মিরসরাইয়ের ভেতর আরেক মিরসরাই। অন্তহীন চরে ছোট ছোট প্রকল্প।

আরও পড়ুন: এক জাহাজে চড়েই শত দেশ ঘুরবেন যেভাবে

এপারে মিরসরাই, ওপারে সোনাগাজী। ৪০ দরজার রেগুলেটরের শোঁ শোঁ আওয়াজ শোনা যায় দূর থেকে। পশ্চিমে মৎস্য আহরণের খেলা, আর পূর্বে মন কাড়ানিয়া প্রকৃতি। নুয়ে পড়া মনোবল জেগে উঠবে পূবের জেগে ওঠা চরে। ডিঙি নৌকায় ভর করে কিছুদূর যেতেই দেখা মিলবে সাদা সাদা বক।

এখানে ভিড় করে সুদূরের বিদেশি পাখি, অতিথি পাখি বলেই অত্যধিক পরিচিত এরা। চিকচিকে বালিতে জল আর রোদের খেলা চলে সারাক্ষণ। সামনে পেছনে, ডানে-বামে কেবল সৌন্দর্য আর সুন্দরের ছড়াছড়ি।

এ অবস্থায় মন আঁধারে ঢেকে যেতে পারে, যদি ক্যামেরা সঙ্গে না থাকে। মুহুরীর প্রকৃতির ছোঁয়ায় উদ্ভাসিত স্মৃতিরা যেন হারিয়ে যাওয়ার নয়। এসব ক্যামেরার ফিল্মে আটকে রাখার মত হাজার বছর ধরে।

আরও পড়ুন: পার্ক নাকি হীরার খনি!

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের (পুরোনো) জোরারগঞ্জ বাজারে নেমে ধরতে হবে সংযোগ সড়কের পথ। জোরারগঞ্জ-মুহুরী প্রজেক্ট সড়ক নামে এ সড়কে দেখা মিলবে হরেক রকমের মোটরযানের।

ভাঙাচোরা আঁকাবাঁকা আধাপাকা সড়ক পাড়ি দিতে হবে প্রায় আট কিলোমিটার। এরপর মুহুরী প্রকল্পের বাঁধ। যেতে যেতে দুই কিলোমিটার পরই দেখা মিলবে আসল সৌন্দর্য।

ডোমাখালী সমুদ্রসৈকত

৫২ বাঁকের বড়দারোগারহাট-বেড়িবাঁধ সড়ক অতিক্রম করে দেখা মিলবে বিশাল সমুদ্র সৈকতের। শোনা যাবে সাগরের গর্জন। দখিনা মিষ্টি হাওয়ায় শরীরটা শীতল হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন: দুবাই ভ্রমণে যে ভুলে হতে পারে জেল-জরিমানা

উত্তরে দু’চোখ যতটুকু যাবে দেখা মিলবে সৈকতের, দক্ষিনে কেওড়া গাছের সবুজ বাগান। পশ্চিমে শুধু সাগর আর সাগর। চোখে পড়বে দুষ্ট ছেলেদের সাগরের স্বচ্ছ পানিতে লাফালাফি দৃশ্য। ঘাটে আছে সারি সারি ডিঙ্গি নৌকা। জেলেরা কেউ মাছ ধরে সাগর থেকে ঘাটে ফিরছে, কেউ আবার সাগরে যাচ্ছে।

এমন নৈসর্গিক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখার জন্য সেখানে প্রতিদিন ছুটে যাচ্ছেন অসংখ্য ভ্রমণপিপাসু নানা বয়সের মানুষ। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের কাজ শুরু করার পর মেরিনড্রাইভের বাঁধ নির্মাণের কারণে বিশাল এলাকাজুড়ে সমুদ্র সৈকতের সৃষ্টি হয়েছে।

মিরসরাই উপজেলার একেবারে দক্ষিণ সীমান্তে অবস্থিত এই স্পটের নাম ‘ডোমখালী সমুদ্রসৈকত’। শুধু দিনে নয়, রাতেও সাগর পাড়ে দেখা মেলে অসংখ্য মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকারের।

আরও পড়ুন: কম খরচেই ঘুরে আসুন প্রাচ্যের প্যারিসে

রাতে বিশাল সমুদ্রের গর্জন কানপেতে শুনে সেখানে ছুটে যান তরুনেরা। পূর্ণিমার রাতে সেখানে তরুণ-যুবকদের ঢল নামে। এই সমুদ্রসৈকতের দুরত্ব প্রায় ৪ কিলোমিটার।

থাকা ও খাওয়া

বড়দারোগাহাট, বড়কমলদহ, কমলদহ, মিরসরাই সদর, মহামায়া এলাকায় খাওয়ার হোটেল রয়েছে। দুর-দুরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা থাকা জন্য মিরসরাইয়ের বিভিন্ন পর্যটন স্পট থেকে গাড়ি যোগে মাত্র ৪০-৫০ মিনিটের পথ শেষে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে যাওয়া যাবে।

এমএমডি/জেএমএস/এএসএম