দুবাইতে অনুষ্ঠিতব্য কপ-২৮ সম্মেলনে দেশের জলবায়ু পরিস্থিতি ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দাবি উপস্থাপন করার আহ্বান জানিয়েছেন বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক ও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)।
Advertisement
সোমবার (২৭ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে দুবাই জলবায়ু সম্মেলন (কপ২৮): জনগণের প্রস্তাবনা শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান।
তারা বলেন, বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বেরসিক দেশের উপকূল, চর, হাওর, বরেন্দ্র অঞ্চল ও নগরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীদের নিয়ে জলবায়ু সম্মেলন ও ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেছে। সেখানে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ তাদের দাবি ও প্রস্তাব পেশ করেছে। দেশের সরকারি, বেসরকারি প্রতিনিধি ও গণমাধ্যম কর্মী যারা সংবাদ সংগ্রহের জন্য যাবেন তারা যেন ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের মানুষের দাবি ও প্রস্তাবগুলো কপ-২৮ সম্মেলনে তুলে ধরেন।
সভাপতির বক্তব্যে ক্যাপস এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ‘জলবায়ু সম্মেলন এমন একটি প্লাটফর্ম, যেখানে সমস্ত দেশই আসে জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় একত্রিত হয়ে কাজ করার জন্য। মূল জলবায়ু সম্মেলন হয়ত কয়েক দিনের কিন্তু ন্যায্যতা আদায়ের জন্য সারা বছরই কাজ করতে হবে। জলবায়ু ন্যায্যতা আদায় ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হিসাবে যুবকদের স্বীকৃতি ও বৈজ্ঞানিক গবেষণাভিত্তিক সমাধানকে উৎসাহিত করতে হবে।’
Advertisement
মূল বক্তব্যে বারসিক এর পরিচালক পাভেল পার্থ বলেন, ‘বিশ্বের ধনী ও উন্নত দেশের প্রায় ১ ভাগ মানুষ যে পরিমাণ কার্বন নির্গমণ করে সেই পরিমাণ কার্বন নির্গমন করে বিশ্বের প্রায় ৬৬ ভাগ মানুষ। বাংলাদেশের কার্বন নির্গমনের পরিমাণ খুবই নগণ্য। তারপরও প্রতিনিয়ত জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিভিন্ন দুর্যোগের শিকার হচ্ছে বাংলাদেশ। তাই এবারের জলবায়ু সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য লস এন্ড ড্যামেজ তহবিলের ইকোনমিক এবং নন ইকোনমিক উভয় দিক নিশ্চিত করতে হবে। কারণ ইকোনমিক লসের সঙ্গে নন ইকোনমিক লস ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার সকল পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে তরুণ-যুবদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে নগরের নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য আবাসন, শিক্ষা, নিরাপদ পানি, বিদ্যুৎ ও নিরাপদ জ্বালানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশকে উন্নত রাষ্ট্রের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’
ক্যাপসের লিগ্যাল ডিরেক্টর অ্যাডভোকেট রাশেদুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশ দায়ী না হয়েও ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় প্রথম সারিতে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি যদি একটি জাহাজের সঙ্গে তুলনা করা হয় তাহলে এর নিচ তলায় আছে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশ এবং উপরতলায় আছে উন্নত দেশগুলো, শেষ পর্যন্ত জাহাজডুবি অর্থাৎ ভয়াবহ দূর্যোগ হলে কেউ বাঁচতে পারবে না। তাই সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ নিয়ে জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলা করতে হবে।’
বারসিক এর সমন্বয়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত উন্নত দেশগুলোর ভোগ বিলাসের শিকার হচ্ছে । এ জলবায়ু সম্মেলনেই লস এন্ড ড্যামেজ ফান্ড কার্যকর করতে হবে এবং আমাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে হবে।’
এসময় পরিবেশ উদ্যোগের গবেষণা সমন্বয়ক ইঞ্জিনিয়ার মো. নাছির আহম্মেদ পাটোয়ারী, সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি কায়সার আহমেদ এবং দৈনিক কালের কণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার নিখিল ভদ্র বক্তব্য প্রদান করেন।
Advertisement
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, ক্যাপসের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার মারজিয়াত রহমান, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মাহমুদা পারভীন, সিনিয়র লেকচারার মাহমুদা ইসলাম, প্রভাষক হুমায়ুন কবির এবং জলবায়ু কর্মী মোহাইমিনুল ইসলাম জিপাতসহ আরও অনেক পরিবেশবাদী সংগঠনের প্রতিনিধিগণ।
আরএএস/এসআইটি/জিকেএস