জাতীয়

পোশাক নিয়ে ফের অস্বস্তি, পরিবর্তনে তোড়জোড়

পোশাকের রং নিয়ে ফের অস্বস্তিতে পড়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। বাংলাদেশ পুলিশের পোশাকের সঙ্গে সংস্থাটির পোশাকের মিল থাকায় আপত্তি ওঠে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানায় পুলিশ। শেষ পর্যন্ত পোশাকের রং পরিবর্তনের সিদ্ধান্তও হয়েছে বলে জানা যায়। তবে তোড়জোড় শুরু হলেও নতুন পোশাক আসন্ন সংসদ নির্বাচনের পরে ছাড়া মেলার সম্ভাবনা কম।

Advertisement

পোশাক পরিবর্তনে গঠিত মাদকদ্রব্যের বিশেষ কমিটির সদস্যরা বলছেন, আমাদের পোশাকটা নাকি অন্য কারও সঙ্গে মিশে গেছে। অথচ আমরা দেখছি না কারও সঙ্গে মিল রয়েছে। নতুন করে এখনই পোশাক তৈরি করতে পারছে না মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। নির্বাচনের আগে পোশাকের রং ঠিক না হওয়ায় নতুন পোশাক সহসাই মিলছে না।

জানা যায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর ছাড়া বাকি তিনটি অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য রয়েছে নিজস্ব পোশাক। জননিরাপত্তা বিভাগের অধীন অধিদপ্তরের বেশ কয়েকটিরও নিজস্ব পোশাক রয়েছে। একেকটি অধিদপ্তরের পোশাক একেক ধরনের হলেও পোশাক নির্ধারণে তবুও মতামত চাওয়া হয় অন্য অধিদপ্তরগুলোর।

 

এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আমাদের কাজ চলমান। প্রশাসনিক কাজ যেহেতু কিছুটা সময় লাগবে। নির্বাচনের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাদক অনুবিভাগ) মো. সাইফুল ইসলাম

Advertisement

 

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বর্তমানে ব্যবহৃত পোশাকটিও ২০২১ সালে অন্য সব অধিদপ্তরের মতামত নিয়েই চূড়ান্ত করা হয়। নতুন করে পোশাক বিধি তৈরি করে পরিবর্তন করা হয় এ ইউনিফর্মের রং। দুই বছর যেতে না যেতেই অধিদপ্তরের পোশাক নিয়ে নতুন করে আপত্তি তুলেছে পুলিশ। দ্রুত পোশাক পরিবর্তনের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও জানিয়েছে সংস্থাটি। এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নতুন রং চূড়ান্ত করে পোশাক পরিবর্তনের কথা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে জানিয়েছে। পোশাক বিধি তৈরি না করে পোশাক পরিবর্তন নিয়ে অনেকটা অস্বস্তিতেই পড়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বর্তমান পোশাক

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন টার্কিশ ব্লু রঙের সেলুলার কাপড়ের বুকখোলা ফুল ও হাফহাতা শার্ট, ডিপ নেভি ব্লু রঙের প্যান্ট এবং অধিদপ্তরের লোগো সম্বলিত টুপি পরছেন। নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পরছেন টার্কিশ ব্লু রঙের বুশ শার্ট ও ডিপ নেভি ব্লু রঙের প্যান্ট। অধিদপ্তরের বর্তমান জনবল তিন হাজার ৫৯ জন।

সিপাহি থেকে মহাপরিচালক পর্যন্ত কর্মকর্তাদের বছরে দুই সেট হাফহাতা ও দুই সেট ফুলহাতা পোশাক দেওয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য দেওয়া হয় আলাদা পোশাক। এসব পোশাকে বছরে খরচ হয় প্রায় পাঁচ কোটি টাকা।

Advertisement

এক দশকে তিনবার পরিবর্তন

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সাল থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সিপাহি থেকে পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা খাকি রঙের পোশাক পরতেন। যদিও ওই পোশাক নিয়ে নিজেদের মধ্যেই অসন্তোষ থাকায় পোশাক পরিবর্তনের দাবি ওঠে। বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলোচনা শেষে ২০২১ সালের ২৩ মে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ‘টার্কিশ ব্লু’ রঙের পোশাক নির্ধারণ করা হয়। নতুন পোশাক ব্যবহার শুরু হয় গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে।

নতুন করে পোশাকের রং চূড়ান্ত করতে গত ২১ আগস্ট সভা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে পোশাকের রং পরিবর্তনে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে কয়েকটি রং ঠিক করে জমা দিতে বলা হয়েছে। এর জন্য একটি কমিটিও করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম আগের তুলনায় বেড়েছে। নতুন উদ্যমে কাজের ভিতরেই আবার পরিবর্তন হচ্ছে অধিদপ্তরের পোশাক। এতে বাড়ছে সরকারি ব্যয়। গতি হারাচ্ছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নিত্য ব্যবহারের জন্য বর্তমান পোশাকের আয়ুষ্কাল শেষ হলেও নতুন পোশাক পাচ্ছেন না কর্মকর্তারা। পুলিশের আপত্তিতে আটকে আছে নতুন পোশাক প্রাপ্তি। নির্বাচনের আগেও আর হচ্ছে না পোশাক পরিবর্তন।

বলা হচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশের এই পোশাকের সঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পোশাক মিলে যাচ্ছে/সংগৃহীত

নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি বছরের ১৪ মার্চ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে পোশাকের রং পরিবর্তন করতে চিঠি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাতে বলা হয়, তাদের পোশাকের সঙ্গে অন্য সংস্থার পোশাকের রঙের কিছুটা মিল রয়েছে। ফলে অধিদপ্তরের পোশাকের রং পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। তবে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, পুলিশের আপত্তির কারণেই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পোশাকের রং পরিবর্তন হচ্ছে।

নতুন পোশাকের রং ঠিক করতে দফায় দফায় মিটিং

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়ার পর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আজিজুল ইসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে অধিদপ্তর। নতুন পোশাকের রং ঠিক করতে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি রং নির্বাচন করে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানোও হয়েছে।

কমিটির সদস্য ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, ‘একটা জিনিসের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। নিয়ম মেনে সব সংস্থার মতামত নিয়েই করা হয়েছিল। এখন আমাদের পোশাকটা নাকি অন্য কারও সঙ্গে মিশে গেছে। তবে কার সঙ্গে মিশে গেছে এটা আমরা জানি না।’

নতুন পোশাকের রঙের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কয়েকটি রং ঠিক করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। কিন্তু সেটার কোনোটাই ঠিক নাও হতে পারে। তাই আপাতত বলা যাচ্ছে না কোন রং ঠিক হচ্ছে। মন্ত্রণালয় ঠিক করবে কোন রং চূড়ান্ত হবে।’

কমিটির প্রধান আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘পোশাকের রং পরিবর্তনের বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’

সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক করে নতুন পোশাকের রং চূড়ান্ত করবে। প্রস্তাবিত ওই রং নিয়ে কারও আপত্তি থাকলে সেগুলো পরিবর্তন করা হবে।

পোশাক নিয়ে বিড়ম্বনামাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পোশাক পরিবর্তনের আগে পোশাক বিধিমালা পরিবর্তন করতে হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জন্য বর্তমানে পোশাক ও সামগ্রী বিধিমালা ২০২১-এ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পোশাকের রং নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু পুলিশের আপত্তির কারণে বিধি তৈরির আগেই পোশাকের রং পরিবর্তন করতে হচ্ছে।

 

আমরা কয়েকটি রং ঠিক করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। কিন্তু সেটার কোনোটাই ঠিক নাও হতে পারে। তাই আপাতত বলা যাচ্ছে না কোন রং ঠিক হচ্ছে। মন্ত্রণালয় ঠিক করবে কোন রং চূড়ান্ত হবে।– মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা

 

বিধি ছাড়াই পোশাক পরিবর্তনের বিষয়ে কমিটির এক সদস্য জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিধিমালা পরিবর্তনে কিছুটা সময় লাগবে। বিধিমালা পরিবর্তন না করে পোশাকের রং পরিবর্তনের সুযোগ না থাকলেও এখন বাধ্য হয়ে আগে রং পরিবর্তন করতে হবে।’

নতুন করে পোশাক পরিবর্তন ও নির্বাচনের আগে তা চূড়ান্ত হবে কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাদক অনুবিভাগ) ও পোশাকের রং পরিবর্তন কমিটির প্রধান মো. সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আমাদের কাজ চলমান। প্রশাসনিক কাজ যেহেতু কিছুটা সময় লাগবে। নির্বাচনের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।’

আরএসএম/এএসএ/জিকেএস