রাজনীতি

‘নির্বাচন ঠেকাতে’ ডিসেম্বরে আসনভিত্তিক আন্দোলনে যাবে বিএনপি

‘নির্বাচন ঠেকাতে’ ডিসেম্বরে আসনভিত্তিক আন্দোলনে যাবে বিএনপি

বিদ্যমান ব্যবস্থায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে সারাদেশে সংসদীয় আসনভিত্তিক আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনা সাজাচ্ছে বিএনপি। দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা আগামী ডিসেম্বর মাস থেকে নিজেদের কর্মী-সমর্থক নিয়ে রাজপথে সরব হবেন। সেই আন্দোলনে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় যারা কৃতিত্ব দেখাতে পারবেন তাদেরই মনোনয়ন দেওয়া হবে। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্টদের এমন নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। দলটির দায়িত্বশীল নেতাদের ভাষ্য, জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নতুন ধরনের কর্মসূচির কথা ভাবা হচ্ছে।

Advertisement

বিএনপির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ-পরবর্তী মামলা, গ্রেফতার, সাজা, ধারাবাহিক হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে পুলিশ এবং ক্ষমতাসীন নেতাকর্মীদের বাধা, দলের প্রধান কার্যালয়সহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়া, স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মদতে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চিরুনি অভিযান এবং নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যদের হয়রানিতে সরকারবিরোধী এক দফার যুগপৎ আন্দোলনে কিছুটা ভাটা পড়েছে।

আরও পড়ুন: নিবন্ধন ছাড়াই ‘বিকল্প পন্থায়’ নির্বাচনে যাবে জামায়াত

এতে একদিকে নেতাকর্মীরা যেমন রাজপথে নামতে পারছেন না, অন্যদিকে বাড়িতেও থাকতে পারছেন না। এমনকি বাড়ির বাইরে হোটেল বা অন্য কোথাও থাকার ক্ষেত্রেও তারা গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগছেন।

Advertisement

গ্রেফতার এড়াতে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা গাছের ডালে, ফসলি জমিতে রাতযাপন করছেন। সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গিয়ে তারা অনেকটাই টালমাটাল। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য চলমান হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে বিরতি দিয়ে পদযাত্রা ও ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি বা চলমান কর্মসূচির মধ্যেই কৌশলে পরিবর্তন আনা হতে পারে

দলটির বিভিন্ন পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, গ্রেফতার এড়াতে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা গাছের ডালে, ফসলি জমিতে রাতযাপন করছেন। সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গিয়ে তারা অনেকটাই টালমাটাল। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য চলমান হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে বিরতি দিয়ে পদযাত্রা ও ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি বা চলমান কর্মসূচির মধ্যেই কৌশলে পরিবর্তন আনা হতে পারে। যেখানে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকবে, এমন কর্মসূচি নিয়েই এগোতে চায় দলটি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামী ডিসেম্বরে দুই ধাপের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে বিএনপি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিল শেষ হলে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে নেতাকর্মীদের রাজপথে তৎপর রাখা হবে। এরপর সপ্তাহখানেক আবার হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে যাবে বিএনপি। এসময়ের মধ্যে দায়িত্বশীল নেতাদের গ্রেফতার এড়াতে সর্বোচ্চ কৌশল অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। তবে নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের পর দলীয় কর্মসূচিতে যে নেতা যতটুকু ভূমিকা রাখতে পারবেন দলের সাংগঠনিক পর্যায় অথবা মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে তাকে সেভাবে মূল্যায়ন করা হবে।

আরও পড়ুন: বিএনপি নির্বাচনে না এলে চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে

Advertisement

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতা জাগো নিউজকে বলেন, নির্বাচন কার্যক্রমে অংশ নেওয়ায় এরই মধ্যেই জাতীয় নির্বাহী কমিটির দুই সদস্য খন্দকার আহসান হাবিব ও ফখরুল ইসলামকে ‘দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে’ জড়িত থাকার অভিযোগে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। এছাড়া রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু এবং ঢাকা জেলাধীন ধামরাই পৌর বিএনপির সভাপতি দেওয়ান নাজিম উদ্দিন মঞ্জুকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি সরকারবিরোধী তিনটি দল নিয়ে একটি জোট করে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় সমমনা ১২ দলের কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দলের বহিষ্কৃত ও অব্যাহতি পাওয়া নেতারা সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে নতুন দল বা জোট গঠন করে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হচ্ছেন।

দায়িত্বশীল নেতাদের গ্রেফতার এড়াতে সর্বোচ্চ কৌশল অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। তবে নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের পর দলীয় কর্মসূচিতে যে নেতা যতটুকু ভূমিকা রাখতে পারবেন দলের সাংগঠনিক পর্যায় অথবা মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে তাকে সেভাবে মূল্যায়ন করা হবে

ওই নেতার ভাষ্য, দল বা যুগপৎ আন্দোলনে সন্দেহজনক যারা রয়েছেন প্রতীক বরাদ্দের পর তাদের গতিবিধি বিএনপির কাছে স্পষ্ট হবে। অন্যদিকে প্রতিটি সংসদীয় আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ১১ জন করে মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। এই মনোনয়ন ঘিরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে যে অসন্তোষ তৈরি হবে তা নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলনে গতি পাবে এবং বিএনপি সেসব মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীকে আন্দোলনের মাঠে কাজে লাগাতে চায়।

নাটোর-১ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলটির কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু জাগো নিউজকে বলেন, চলমান আন্দোলনে নেতাকর্মীদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি রয়েছে। আন্দোলন স্বল্পমেয়াদি না দীর্ঘমেয়াদি চলবে তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। প্রয়োজনে কেন্দ্রভিত্তিক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

আরও পড়ুন: যে কারণে পেছাতে পারে নির্বাচন

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্বাচনী আসন নোয়াখালী-৫ এ বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলটির সহ-পল্লী উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ। আসনভিত্তিক আন্দোলন গড়ে তুলতে এরই মধ্যে তিনি এলাকায় অবস্থান করছেন এবং নেতাকর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক নিবিড় যোগাযোগ রাখছেন।

প্রতিটি সংসদীয় আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ১১ জন করে মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। এই মনোনয়ন ঘিরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে যে অসন্তোষ তৈরি হবে তা নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলনে গতি পাবে এবং বিএনপি সেসব মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীকে আন্দোলনের মাঠে কাজে লাগাতে চায়

বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ বলেন, যত দিন যাচ্ছে আন্দোলন তত শাণিত হচ্ছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করছেন। এতে আন্দোলনে নেতাকর্মীরা ভীষণ রকমের উৎসাহিত হচ্ছেন। আসনভিত্তিক আন্দোলন জোরদারের প্রচেষ্টা চলছে। আমরা বিশ্বাস করি এসময়ের মধ্যে আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতিতে পৌঁছাতে পারবো।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সরকারবিরোধী সব শক্তিকে একত্রিত করে কোনো কর্মসূচি দেওয়া যায় কি না, সেটি নিয়েও দলে আলোচনা রয়েছে। গ্রেফতার বা মামলায় সাজা দিয়ে অনেক নেতাকে রাজনীতির মাঠ থেকে সরানো হলেও তাতে দলের অভ্যন্তরে কোনো সংকট তৈরি হবে না। কারণ, দলে নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা আছে। কেউ গ্রেফতার হলে বিকল্প নেতা দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেবেন।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান জাগো নিউজকে বলেন, সপ্তাহজুড়ে অবরোধ চলবে। এরপর জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নতুন ধরনের কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ–বিএনপি আলোচনায় না বসলে সংকট বাড়বে

কেএইচ/এমকেআর/এএসএম