‘নতুন শিক্ষাক্রমে বইয়ে শেখার মতো কিছুই নেই। এক অধ্যায়ের সঙ্গে আরেকটার সামঞ্জস্য নেই। বইয়ে শুধু খালি ঘর দেওয়া। ছবি তুলে লাগানোর জন্য বেশিরভাগ পৃষ্ঠাই ফাঁকা। বাচ্চারা গুগল দেখে, ইউটিউব দেখে সেগুলো পূরণ করে। পড়াশোনা নেই বললেই চলে। আছে শুধু কবিতা-গান ও নাটকের স্ক্রিপ্ট।’
Advertisement
নতুন শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত মানববন্ধনে অংশ নিয়ে এভাবেই নিজের মতামত ও অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থীর মা।
ওই অভিভাবক বলেন, ‘সন্তানের পড়াশোনা নিয়ে আমরা মোটেও সন্তুষ্ট হতে পারছি না। বাচ্চা সারাদিন মোবাইল নিয়ে বসে থাকে। আমি বিকেল ৫টার দিকে অফিস থেকে বাসায় ফিরি। দেখি তখন থেকেই ছেলে মোবাইল নিয়ে বসে রয়েছে। রাত ১১টা-১২টা বেজে যায়, তবুও মোবাইল চালায় ও।’
‘যদি জিজ্ঞেস করি—তুমি কী করো? বলে—মা, হোয়াটসঅ্যাপ বা ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে কথা বলছি। গ্রুপ ওয়ার্ক নিয়ে কাজ চলছে, সেগুলো করছি। এরপর শুরু করে গুগলে সার্চ, ইউটিউট দেখা। কাগজ কাটাকাটি, আঠা দিয়ে সেগুলো জোড়াতালি দিয়ে প্রজেক্ট বানায়।’
Advertisement
তিনি আরও বলেন, ‘প্রায় দিনই রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার দিকে শিক্ষকরা ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কী কাজ করতে হবে, সেগুলো দেন। রাত ১২টার পর ওরা কাজ শুরু করে। ২টা-৩টা বেজে যায়, ওদের কাজ আর শেষ হয় না। ঘুমাতে যায় ভোরে। সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠে কীভাবে স্কুলে যাবে ষষ্ঠ শ্রেণির একটা ছেলে? ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে স্কুলে যেতে ছেলেটাকে।’
প্রজেক্টের কাজে চাপে সন্তান কান্না করে জানিয়ে ওই অভিভাবক বলেন, ‘মাঝেমধ্যে বাচ্চাটা কান্না করে। ঘুমে ঢুলে ঢুলে পড়ে, আবার ওঠে। অথচ ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি—আর্লি টু বেড, আর্লি টু রাইজ; মেকস অ্যা ম্যান হেলদি অ্যান্ড পারফেক্ট। অর্থাৎ দ্রুত ঘুমাতে যাবে, দ্রুত ঘুম থেকে উঠবে। অথচ এখন বাচ্চারা রাত ৩-৪টা পর্যন্ত জেগে থাকছে শুধু নতুন এ শিক্ষাক্রমের আলতু-ফালতু কাগজ কাটাকাটির কাজে। এ প্রজন্ম স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে।’
আরও পড়ুন>> ‘ত্রিভুজ-চতুর্ভুজের ফলাফল চাই না, লিখিত পরীক্ষা রাখতেই হবে’
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আরেকজন অভিভাবক বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীরা বই পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। ওদের ডিজিটাল ডিভাইসে আসক্তি বাড়ছে। শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাইয়ের সুযোগও নেই। পরীক্ষা ও কার্যকরী মূল্যায়ন পদ্ধতিও নেই। ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ কিছু সাংকেতিক চিহ্ন দিয়ে শিক্ষার্থীদের মেধাকে মূল্যায়ন করা সম্ভব না।’
Advertisement
শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ কর্মসূচি করা হয়। যদিও আয়োজক ‘সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলন’ বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) রাতে হঠাৎ মানববন্ধন স্থগিতের ঘোষণা দেয়। এরপরও কিছু অভিভাবক এবং সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক রাখাল রাহা ব্যানার এনে মানববন্ধন করেন। একাত্মতা জানিয়ে অংশ নেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক নাসির আহমেদ।
মানববন্ধনে অভিভাবকরা নতুন শিক্ষাক্রমে খরচ বাড়ছে বলেও অভিযোগ করেন। তারা বলেন, ‘অভিভাবকদের খরচ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। এত খরচ করে তারা কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। প্রতিদিন রঙিন কাগজ, আঠা, টেপ, পেন্সিলসহ নিত্যনতুন সরঞ্জাম কিনতে বলছেন শিক্ষকরা। শিক্ষায় ব্যয় বাড়ার এদিকেও সরকারকে নজর দিতে হবে।
এএএইচ/ইএ