দেশজুড়ে

স্বাভাবিক প্রসব সেবায় একধাপ এগিয়ে সীতাকুণ্ড স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

স্বাভাবিক সন্তান প্রসবে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালে ১২৫৪ জন শিশুর জন্ম হয়েছে। এরমধ্যে ১১৯৫ জনই স্বাভাবিক ডেলিভারিতে জন্মগ্রহণ করেছে। সিজারের মাধ্যমে জন্ম নিয়েছে ৫৯ জন শিশু।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একদিনে স্বাভাবিক ডেলিভারির মাধ্যমে সর্বচ্চো ১৯টি শিশু প্রসব করানোর রেকর্ডও করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। এরমধ্যে চলতি বছরের ৮ জুলাই ২৪ ঘণ্টায় ১৯টি ও ৩১ অক্টোবর ১৬টি শিশু নরমাল ডেলিভারিতে জন্ম নেয়। দিন দিন স্বাভাবিক প্রসবে (নরমাল ডেলিভারি) দৃষ্টান্ত স্থাপন করে এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। হাসপাতালের এ কার্যক্রমকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

সানজিনা আক্তার (২২)। প্রসব বেদনা উঠলে স্বামী তারেক হোসেন তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। এর পরপরই চিকিৎসকরা তাকে ডেলিভারি ওয়ার্ডে নিয়ে যান। মাত্র আধা ঘণ্টার মধ্যে তার নরমাল ডেলিভারি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

সানজিনা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, আমি খুবই খুশি নরমাল ডেলিভারি সেবা পেয়ে। আসলে দুশ্চিন্তায় ছিলাম সিজারিয়ান অপারেশন করতে হয় কিনা। তাছাড়া আমার স্বামীর অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক। এখন আমি ও আমার বাচ্চা সম্পূর্ণ সুস্থ আছি।

Advertisement

একই কথা বলেন প্রসূতি জাহিদা আক্তার (২৫)। তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালে এত সহজে নরমাল ডেলিভারি সেবা পাবো ভাবিনি। আমরা সুস্থ আছি।

এ বিষয়ে রোববার (১৯ নভেম্বর) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. নুর উদ্দিন বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত ১২৫৪টি ডেলিভারি হয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এর মধ্যে মাত্র ৫৯টি সিজারিয়ান সেকশন। বাকি সবগুলো স্বাভাবিক প্রসব।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে সিজারের একটি অপসংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল। মানুষ ধরে নিত যে ডেলিভারি মানে সিজার করাতে হবে। আমরা মা ও শিশুর সুস্থ-সুন্দর জীবন নিশ্চিত করতে চাই। সেজন্য খুব বাধ্য না হলে কোনোভাবেই সিজারে যেতে চাই না। আমাদের হাসপাতালে এ কারণেই সিজারের চেয়ে বহুগুণ বেশি নরমাল ডেলিভারি হচ্ছে।

ডা. নুর উদ্দিন বলেন, এ এলাকার গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের যাতে বেসরকারি ক্লিনিকে যেতে না হয় এবং দালালদের খপ্পরে পড়ে ভোগান্তির শিকার হতে না হয় সেজন্য উপজেলা হাসপাতালে ডেলিভারি সেবা বৃদ্ধি করছি। সরকারি খরছে সরকারি হাসপাতালে সেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব চেষ্টা করে যাচ্ছি। ডেলিভারি করতে আমাদের হাসপাতালে সব ধরনের ব্যবস্থাপনা রয়েছে।

Advertisement

ইউএইচএফপিও বলেন, ২৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) মাধ্যমে গর্ভবতী মায়েদের সেবা, যত্ন ও সচেতন করি। গর্ভবতী মায়েদের হেলথ কার্ড সরবরাহ করা হয়। মাঠ পর্যায়ে যোগাযোগ করে যাতে গর্ভবতীদের ডেলিভারির জন্য উপজেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়, সে বিষয়ে নিয়মিত স্বাস্থ্য সহকারীদের তদারকি করি। ডেলিভারি করতে হাসপাতালমুখি প্রচারণায় গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরও সহযোগিতা নেওয়া হয়।

ডা. নুর উদ্দিন বলেন, মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্য সহকারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে গর্ভবতী মায়েদের কাউন্সিলিং করেন। তারা মায়েদেরকে হাসপাতালে পাঠাতে ও নরমাল ডেলিভারি করতে উদ্বুদ্ধ করেন।

নরমাল ডেলিভারিতে মা ও তাদের স্বজনরা তৃপ্তি পান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, গত ৮ জুলাই ২৪ ঘণ্টায় স্বাভাবিক ডেলিভারির মাধ্যমে ১৯টি শিশু প্রসব করানো হয়েছে। ওই মাসে মোট ডেলিভারি হয়েছে ১১৩টি, যার মধ্যে ১১০টি স্বাভাবিক, বাকি ৩টি সিজারিয়ান। স্বাভাবিক ডেলিভারির পর মা ও তাদের স্বজনরা খুব খশি হন।

তিনি আরও বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার কমাতে হবে। এজন্য প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি বৃদ্ধি করা। কারণ প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি নিরাপদ। আমরা সেটিই করার চেষ্টা করছি এবং সফলও হচ্ছি।

প্রতিমাসে এতগুলো নরমাল ডেলিভারি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফসহ সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ইউএইচএফপিও। তিনি জানান, সীমিত সুবিধা নিয়েও রোগীদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত দুই বছরে এই হাসপাতালে অন্যান্য চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমের উন্নয়নের পাশাপাশি প্রসূতি মায়েদের ডেলিভারির হার অনেক বেড়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নরমাল ডেলিভারিকে গুরুত্ব দেওয়ায় প্রসূতিদের আগমন বেড়েছে। বিশেযজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্সদের সমন্বয়ে একটি দল এখানে আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এফএ/এএসএম