ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপ শেষ হয়েছে চারদিন আগে। এবারের আসরে সেমিফাইনাল পর্যন্ত টানা ১০ ম্যাচে অপরাজিত থেকে শিরোপা জয়ের অন্যতম দাবিদার হয়ে উঠেছিল স্বাগতিক দেশ ভারত। কিন্তু ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কার্যত দাঁড়াতেই পারেননি রোহিত-কোহলিরা।
Advertisement
অসিদের কাছে ৬ উইকেটে হেরে, ঘরের মাঠে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় টিম ইন্ডিয়া। ওই হারের যন্ত্রণা এখনো ভুলতে পারেনি দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। বিষয়টি নিয়ে দেশটিতে এবার শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বাগ্যুদ্ধ।
এই হারের জন্য দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেই দায়ী করেছেন কংগ্রেস নেতা ও লোকসভা সদস্য রাহুল গান্ধী। মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) রাজস্থানের জালোরে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারণায় গিয়ে মোদীকে ‘অপয়া’ আখ্যা দেন তিনি। অন্যদিকে, মোদীকে 'পাপিষ্ঠ' বলে আখ্যায়িত করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
আরও পড়ুন: ভারতবধের নায়ক হেডকে ভার্চুয়ালি ‘বিয়ে’ করলেন কলকাতার মডেল
Advertisement
রাহুল গান্ধী বলেন, আমাদের ছেলেরা ফাইনাল ম্যাচে প্রায় জিতেই যাচ্ছিল, কিন্তু ওই 'অপয়া' সব নষ্ট করে দিলো। রাহুলের লক্ষ্যবস্তু যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই ছিলেন, সে ব্যাপারে কারও কোনো সন্দেহ নেই।
আহমেদাবাদ স্টেডিয়ামে ফাইনাল ম্যাচ দেখতে নরেন্দ্র মোদী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ আরও কয়েকজন রাজনীতিবিদ। ম্যাচ শেষে ড্রেসিংরুমে গিয়ে বিধ্বস্ত ভারতীয় দলের রোহিত-কোহলি-শামি-জাদেজাসহ অন্য সদস্যদের সান্তনা দিতেও দেখা যায় মোদীকে।
মোদীকে এভাবে আক্রমণ করার প্রতিবাদে নির্বাচন কমিশনে রাহুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে বিজেপি। ওই মন্তব্যকে ‘অপমানজনক’ ও ‘লজ্জাজনক’ বলে আখ্যায়িত করে রাহুল গান্ধীকে ক্ষমা চাওয়ারও দাবি জানায় বিজেপি। যদিও রাহুলের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন কে সি বেনুগোপাল, জয়রাম রমেশের মতো শীর্ষ কংগ্রেস নেতা।
আরও পড়ুন: পশ্চিমবঙ্গের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হলেন সৌরভ গাঙ্গুলী
Advertisement
থেমে নেয় বিজেপিও। কংগ্রেসকে পাল্টা নিশানা করেছেন বিজেপি নেতা ও আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। তার দাবি, ফাইনাল ম্যাচের দিন ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর জন্মদিন থাকায় ভারতকে ফাইনাল ম্যাচে হারতে হয়েছে।
বুধবার (২২ নভেম্বর) তেলেঙ্গানা রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারণায় যান হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। সেখানে হায়দরাবাদের একটি জনসভা থেকে তিনি বলেন, আমরা প্রতিটা ম্যাচ জিতেছিলাম, কিন্তু ফাইনালে হেরে গিয়েছি। এই হারের কারণ খতিয়ে দেখতে গিয়ে দেখি, সেদিন ইন্দিরা গান্ধীর জন্মদিন ছিল। আর এ কারণেই ভারত হেরেছে।
গান্ধী পরিবারকে নিশানা করে আসামের মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডকে (বিসিসিআই) আমি বলতে চাই, আগামী দিনে বিশ্বকাপের ফাইনালসহ গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ থাকলে, সেটার দিন-তারিখ যেনো চিন্তা-ভাবনা করে ঠিক করা হয়। দেশের ভালো চাইলে পঞ্জিকা দেখে দিন ঠিক করতে হবে, যাতে ওই দিন গান্ধী পরিবারের কোনো সদস্যদের জন্মদিন না থাকে।
আরও পড়ুন: ২০২৭ বিশ্বকাপে দল কমাতে আইসিসিকে চাপ দিচ্ছে ভারত
বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে এই রাজনৈতিক যুদ্ধের মধ্যেই এবার ভারতের পরাজয় ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্টেডিয়ামে প্রবেশ নিয়ে মুখ খুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি।
বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে আয়োজিত দলীয় সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, আমি তো এখনো বলতে পারি, ভারতের ফাইনাল ম্যাচ যদি কলকাতায় বা মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে হতো, তাহলে আমরা জিততাম।
এ সময় বিজেপিকে পাপিষ্ঠ বলে আখ্যায়িত করে মমতা বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা খেলাধুলায় অনেক ভালো। ভারতীয় খেলোয়াড়রা এত ভালো খেললো, সব খেলায় জিতলো। আর পাপিষ্ঠরা যেখানে গেল, সেখানেই ভরাডুবি হলো। ওরা (বিজেপি) সব গেরুয়া পরিয়ে দিয়েছে। বুঝুন!
আরও পড়ুন: ২ পুলিশ সদস্যকে ২ ঘণ্টা ঘাস কাটার সাজা!
‘এমনকি, মাঠেও নীল পরা যাবে না বলেছিল। যদিও খেলোয়ারদের আপত্তিতে সেটা হয়নি। তাও তো নীলের মধ্যে একটু গেরুয়া লাগিয়ে দিয়েছে। পাপিষ্ঠরা যেখানেই যাবে, সেখানেই পতন হবে। মনে রাখবেন, পাপ কখনো বাপকেও ছাড়ে না।
এরপরের ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিকে (মার্কিস্ট) উদ্দেশ্য করে মমতা বলেন, ৩৪ বছরে পশ্চিমবঙ্গের সর্বনাশ করে গেছে। এখন বিজেপির কাছ থেকে অর্থ নিয়ে রাজনীতি করছে।
তৃণমূল প্রধান আরও বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের দুর্নীতি এত বেড়েছে যে, এদের অত্যাচারের ভয়ে ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষ ভারত থেকে পালিয়েছে। তবে বিজেপির আয়ু আর তিন মাস। এরপর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হয়ে যাবে।
ডিডি/এসএএইচ